শিরোনাম
ডার্ক ওয়েব: ইন্টারনেটের অন্ধকার জগত
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০১৭, ১০:৪৬
ডার্ক ওয়েব: ইন্টারনেটের অন্ধকার জগত
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ডার্ক ওয়েব হলো ইন্টারনেটের এমন একটি অংশ, যেখানে সাধারণ সার্চ ইঞ্জিন অথবা ব্রাউজার দিয়ে প্রবেশ করা যায় না। এর জন্যে লাগে বিশেষ ব্রাউজার এবং সার্চ ইঞ্জিন। যেমন টর এবং অনিয়ন।


কী থাকে ডার্ক ওয়েবে? প্রশ্নটা বরং এমন হওয়া উচিত, কী থাকে না ডার্ক ওয়েবে! জাল পাসপোর্ট চান? পেয়ে যাবেন। পেশাদার খুনী চান? পেয়ে যাবেন। পাইরেটেড বই, সিডি লাগবে? কোনো ব্যাপারই না! আর দুর্ধর্ষ সব হ্যাকিং টুল তো খুবই সহজলভ্য! যেকোন ধরনের ড্রাগস, চলবে? আছে! খুন, টর্চার, রেপ, এনিমেল কিলিং, জ্বী সবই আছে তাতে।


এসব তো ছেলেখেলা। আরো গভীরে ঢোকা যাক। রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক, অস্ত্র বেচাকেনা, এসবও কিন্তু ডার্ক ওয়েবে আছে। তবে সাধারণ সার্চ ইঞ্জিন বা ব্রাউজার এসবের হদিস পায় না, আপনি যদি মনে করেন যে ডার্ক ওয়েবে যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াবেন, কেউ কিছুই টের পাবে না, বড় ভুল করবেন। বিশাল বিপদে পড়ে যাবেন। এই তো কিছুদিন আগেই ডার্ক ওয়েবের কুখ্যাত চোরাই বাজার সিল্ক রুট বন্ধ হয়ে গেলো। এ পর্যন্ত পড়ে হয়তো আপনি খুব এক্সাইটেড হয়ে গেছেন। ভাবছেন, যাই ঢুকে দেখি ব্যাপারটা কী! একেবারে ধুন্ধুমার লাগিয়ে দিই! আসলে ব্যাপারটা সে রকম না।


ডার্ক ওয়েব অনেক স্লো একটি নেটওয়ার্ক। এখানে একটি সাধারণ মানের ভিডিও বাফার হতেও অনেক সময় লেগে যায় মাঝে মধ্যে। আর নিষিদ্ধ জিনিসের সমাহার আছে বলেই যে তা একদম তাকে সাজিয়ে রাখা আছে এমনটাও না ব্যাপারটা। ডার্ক ওয়েব নিয়ে প্রচলিত আছে নানারকম মিথ। এগুলোর কিছু সত্য, কিছু অর্ধ সত্য, কিছু মিথ্যা। এগুলো নিয়ে ব্লগে, ফোরামে নানারকম আলোচনা চলে, কিন্তু সত্যিকারের সত্যিটা কিছুটা অস্পষ্টই এখনও। আসুন জেনে নেই এমন কিছু মিথের কথা।


❏ রেড রুম: রেড রুম হলো ডার্ক ওয়েবের কিছু গোপন আস্তানা। এখানে মানুষকে টর্চার, খুন, রেপ ইত্যাদির লাইভ স্ট্রিমিং হয়। কাউকে কাউকে ধরে আনা হয়, এবং কেউ কেউ নিজের ইচ্ছায় নিজেকে রেড রুমে সঁপে দেয় অতিশয় দারিদ্র্যের কারণে, পরিবারকে বাঁচাতে। এসব লাইভ স্ট্রিমিং নাকি মানুষ পয়সা দিয়ে দেখে। এ নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক আছে। কিন্তু এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর যিনি নিজের চোখে এসব দেখেছেন। সবাই অমুক তমুকের বরাত দিয়ে বলে। আর ডার্ক ওয়েব নেটওয়ার্কের যে গতি, তাতে রেডরুম চালানো অবাস্তব কল্পনা বলেই মনে হয়।


❏ মারিয়ানাস ওয়েব: কথিত আছে মারিয়ানা ওয়েব হচ্ছে ডার্ক ওয়েবের গভীরতম জায়গা। সেখানে অতিশয় এক্সপার্ট হ্যাকাররা ছাড়া কেউ যেতে পারে না। খুব কম লোকই এর সন্ধান জানে, ইত্যাদি। এই মারিয়ানাস ওয়েব নাকি ইলুমিনাতিদের দ্বারা প্রচলিত, এখানে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গোপন সত্যগুলি লিপিবদ্ধ আছে, এটি নিউরাল নেটওয়ার্ক দ্বারা তৈরি, ইত্যাদি। বেশ চমকপ্রদ একটি গল্প, তবে এর কোনো সত্যতা নেই, তা নিশ্চিত হয়েই বলা যায়।


❏ বিশালত্ব: বলা হয়ে থাকে, আমরা সাধারণভাবে যে ওয়েব দেখি, তা ইন্টারনেটের মোট আকারের মাত্র দশ শতাংশ, বাকিটুকু হলো ডার্ক ওয়েব। এটা একদমই ভুল কথা। ডার্ক ওয়েব আদতে ইন্টারনেটের ক্ষুদ্র একটি অংশ। আর সবচেয়ে বড় কথা, এখন যা বলবো তা পড়ার পর আপনি এতক্ষণ যা পড়েছেন তা মিথ্যে মনে হতে পারে! ডার্ক ওয়েব মানেই নৃশংস খুনী, বর্বর ক্রিমিনাল আর ড্রাগসের আস্তানা নয়। এখানে আপনি রেডিও শুনতে পারেন, ফ্যাশন ট্রেন্ড নিয়ে আলোচনা করতে পারেন, আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, আপনি টর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সবখানেই ঢুকতে পারবেন। ফেসবুক থেকে ইউটিউব সব!


মুষড়ে পড়েছেন? এবার তবে শুনুন হতভাগী ডেইজির গল্প। এই একটি ঘটনা স্তম্ভিত করে দিয়েছে মানুষকে। বুঝিয়েছে ডার্ক ওয়েবের অন্ধকারের ঘনত্ব, যেখানে বাস করে শয়তানের ঘনিষ্ঠতম দোসরেরা।


এটি একটি ভিডিও। এর একটি বাহারি নামও আছে। ডেইজিস ডেস্ট্রাকশন। কী এই ডেইজিস ডেস্ট্রাকশন? নিশ্চিত করে বলা কঠিন। কারণ কেউ বলে এটি একটি সিঙ্গেল ভিডিও, কেউ বলে ভিডিও সিরিজ, যেখানে কিছু নাবালিকাকে অবর্ণনীয় অত্যাচার এবং যৌন নীপিড়ন করা হয়। তাদের বয়স হলো ১৮ মাস, ১০ এবং ১১।


আপনি যদি ডেইজিস ডিস্ট্রাকশন দেখে থাকেন, আপনি আইন ভেঙেছেন। জ্বী, এটা দেখা নিষিদ্ধ। আর যদি আপনি কোনো না কোনো ভাবে এটির সন্ধান পেয়ে থাকেন, ইউ আর ইন ট্রাবল। কারণ এক্সট্রিম পর্যায়ের ডার্ক কানেকশন ছাড়া এটি পাওয়া যাবে না। আর যদি পেয়ে থাকেন, যারা আপনাকে সন্ধান দিয়েছে খুব সরল মনে নিশ্চয়ই দেয়নি!


এই ভিডিওর নির্মাতা একজন অস্ট্রেলিয়ান পিশাচ তার নাম পিটার স্কালি। ভিডিওটি বানানো হয় ফিলিপাইনে, সহায়তা করে তার ফিলিপানিজ বান্ধবী, যে নিজেই একজন নাবালিকা দেহপসারিনী ছিল। ডেইজিস ডেস্ট্রাকশনে কোনো শিশুকে মেরে ফেলা হয়নি, ধর্ষণও করা হয়নি। তারপরেও কেন এটি এত কুখ্যাত? কারণ এটি তৈরি হয়েছিল মানুষের মনোরঞ্জনের জন্যে। এই অতি অমানবিক ভিডিওটি প্রচারের আগে ট্রেইলার বানানো হয়েছিল- আসিতেছে! এটি চাইলেই যে কেউ দেখতে পারতো না। টাকা দিয়ে দেখতে হতো। টাকার অংকটাও কম না। হাজার ডলারের চেয়েও বেশি। ভাবতে পারেন?


সুখের বিষয় হলো পিটার স্কালি ধরা পড়ে এখন জেলে বন্দী। ফিলিপাইনের আইনে মৃত্যুদণ্ড নেই। কিন্তু শুধু এই নরকের কীটের জন্যে আইনে সংশোধনী আনার প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। তবে স্বস্তির বিষয় হলো, আপনি ডেইজিস ডেস্ট্রাকশনের লিংক কখনই খুঁজে পাবেন না। খামোখা সময় নষ্ট হবে। তবে যদি কখনও খুঁজে পান, দয়া করে দেখবেন না। কারণ বাকি জীবনটা তাহলে মানসিক সমস্যায় পর্যুদস্ত হয়ে কাটাতে হতে পারে। এটা মোটেও অতিকথন না। এরকম ঘটেছে বেশ কয়েকজনের জীবনে। ভালো কথা, আমি ডেইজিস ডেস্ট্রাকশন দেখা তো দূরের কথা, আমি ডার্ক ওয়েবেই ঢুকিনি কখনও!


সুখের কথা হলো, ডেইজি এখন যথাযথ আশ্রয়ে আছে, ভালো আছে। ভালো আছে অন্য দুটি মেয়েও। প্রার্থনা তাদের মঙ্গলের জন্যে, অভিশাপ ঘৃণ্যতম জীব পিটার স্কালির জন্যে।


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com