শিরোনাম
‘ই-গভর্নেন্সে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল’
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০১৬, ১৩:৪৯
‘ই-গভর্নেন্সে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ডিজিটাল ই-গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। 

 

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেয়ার সময় ই-গভর্নেন্সের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ৫১টি ই-ফাইল সমাধান করে যে নজির স্থাপন করেছেন, তা বিশ্বের কাছে অনুকরণীয়।

 

বুধবার সকালে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) চতুর্থবারের মতো তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় উৎসব ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

 

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলদেশ বিনির্মাণের জন্য আপনি আমাদের চারটি বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ই-গভর্নমেন্ট প্রতিষ্ঠা, কানেক্টিভিটিসহ ডিজিটাল অবকাঠামো বিনির্মাণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও আইটিশিল্পের ক্রমবিকাশ সাধন।  

 

পলক বলেন, ইতোমধ্যে সারাদেশে প্রায় ১৮ হাজার ১৩২টি সরকারি দপ্তরকে আমরা হাইস্পিড ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির আওতায় এনেছি। আপনার সক্রিয় নেতৃত্বে পুরো বাংলাদেশকে একটি ন্যাশনাল নেটওয়ার্ক ডায়াগ্রাম প্রতিষ্ঠান করেছি। যার মধ্য দিয়ে আমরা এখন ধাপে ধাপে উপজেলা পর্যন্ত গিয়েছি। ইতোমধ্যেই আমরা ১১শ’ ইউনিয়নকে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করেছি।

 

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নে আপনার অনবদ্য নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর জাতিসংঘের সাধরণ পরিষদে অধিবেশন চলাকালীন আপনাকে প্ল্যানেট ফিফটি-ফিফটি চ্যাম্পিয়ন এবং অ্যাজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যায়ার্ডে ভূষিত করা হয়েছে। গত বছর আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন আইসিটি সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছে। এর পাশাপাশি আপনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে  গত ১৯ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব গর্ভানেন্স অ্যান্ড কম্পিটেটিভনেস, প্ল্যান ট্রিফিনিও, গ্লোবাল ফ্যাশন ফর ডেভেলপমেন্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট প্রদেশের নিউ হেভেন বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অব বিজনেস চারটি আন্তর্জাতিক খ্যাতি প্রতিষ্ঠান ‘আইসিটি ফর ডেভেলমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’  দিয়েছে।

 

এই সাফল্যে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, আপনার এবং উপদেষ্টা মহোদয়ের এই অর্জনের জন্য এবং বাংলাদেশকে প্রযুক্তিনির্ভরভাবে এগিয়ে নেয়ার জন্য আজকে আমাদের আইসিটি পরিবারের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

 

প্রধানমন্ত্রীকে তিনি আরো বলেন, আপনার নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির আওতায় নিয়ে আসব। এছাড়া মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য আইসিটি ডিভশনের আওতায় ও সকলের সহযোগিতা নিয়ে প্রতি বছর আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ‘লিভারেজিং ফর আইসিটি গ্রোথ গভর্নেন্স অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় সারা বাংলাদেশে ১২৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমরা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। আইসিটি ক্যারিয়ার ক্যাম্প করছি।

 

দেশের আইসিটি সেক্টরের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে পলক বলেন, আপনি নির্দেশনা দিয়েছেন, ২০২১ সাল নাগাদ আইসিটি সেক্টর থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করতে হবে, ৩০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মস্ংস্থান করতে হবে। সেই সেভেন-ফাইভ ইয়ার্স প্ল্যানের আওতায় আমরা প্রতি বছর অন্তত ৫০ হাজার তরুণ-তরুণী, ছাত্রছাত্রীদেরকে আইসিটিতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি এবং সারা দেশে সাড়ে পাঁচ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেছি। আশা করছি, বাকি স্কুল-কলেজগুলোতেও শিগগিরিই শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও ডিজিটাল কম্পিউটার ক্লাসরুম তৈরি করতে পারব।

 

দেশের আইসিটি সেক্টরের রপ্তানি আয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে দেশের আইসিটি এক্সপোর্র্ট ছিল ২৬ মিলিয়ন ডলার। বিগত সাড়ে সাত বছরে প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে গভর্নমেন্ট এবং আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি সেক্টর এক সাথে মিলে আমরা আইসিটি পলিসি ইমপ্রুভ করেছি। ২০২৪ সাল পর্যন্ত আইসিটি পণ্য রপ্তানির জন্য আপনি আমদের আইটি কর অবকাশ দিয়েছেন। ফলে আইটি ও সকল আইটি অফিসের ভাড়ার উপরে গত বাজেটে সকল ভ্যাটমুক্ত করেছেন। আশা করছি আগামী ২০২১ সাল নাগাদ আইসিটি সেক্টর থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয় করতে সক্ষম হব।

 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, তথ্যপ্রযু্ক্তি সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, বিসিসি’র নির্বাহী পরিচালক এস এম আশরাফুল ইসলাম, এটুআই প্রকল্প পরিচালক কবির বিন আনোয়ার, বে‌সিসের প্রেসিডেন্ট মোস্তাফা জব্বার, ৮টি দেশের মন্ত্রীবর্গ, সচিব, মেয়র, ও আইসিটি সংশিষ্ট ব্যক্তিরা।  

 

তিন দিনব্যাপী এই আয়োজনে সরকারের ৪০টি মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের পাশাপাশি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে শতাধিক প্রতিষ্ঠান তাদের ডিজিটাল কার্যক্রম তুলে ধরবে।  

 

ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে সফটওয়্যার শোকেসিং ছাড়াও ই-গভর্ন্যান্স, মোবাইল ইনোভেশন অ্যান্ড গেমিং, ই-কমার্স নিয়ে তিনটি স্বতন্ত্র মেলা অনুষ্ঠিত হবে। উদ্যোক্তাদের জন্য থাকবে স্টার্টআপ জোন।

 

ই-গর্ভন্যান্স, ই-হেলথ, ই-এডুকেশন, ই-কমার্স, এম-কমার্স, অ্যাকসেস টু ফিন্যান্স, উইমেন ইন আইটি, মোবাইল অ্যাপস ও গেমস, সোশ্যাল মিডিয়া, সাইবার সিকিউরিটি, এক্সপোর্ট মার্কেট গ্রোথ, লোকাল মার্কেটসহ তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সেমিনার।  

 

এছাড়া মাইক্রোসফট, ফেসবুক, একসেন্সার, বিশ্বব্যাংক, জেডটিই, হুয়াওয়েসহ বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ৪৩ জন বিদেশী বক্তাসহ দুই শতাধিক বক্তা ১৮টি সেশনে অংশ নেবেন। অনুষ্ঠিত হবে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আইটি ক্যারিয়ার বিষয়ক সম্মেলন। থাকবে ডেভেলপার সম্মেলন, ডেভেলপমেন্ট পার্টনারস কনফারেন্স, তথ্যপ্রযুক্তি এডুকেশন সম্মেলন। 

 

‘নন স্টপ বাংলাদেশ’ স্লোগানে নিয়ে আয়োজিত এই উৎসবের মূল আয়োজনে রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। সহযোগী হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামসহ (এটুআই) বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠন ও সংস্থা। 

 

সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড। এটি সবার জন্য উম্মুক্ত। শুক্রবার পর্দা নামবে এই প্রযুক্তি উৎসবের।

 

বিবার্তা/উজ্জ্বল/নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com