শিরোনাম
‘সফটওয়্যার শিল্পের মানোন্নয়নে কাজ করতে চাই’
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:০৩
‘সফটওয়্যার শিল্পের মানোন্নয়নে কাজ করতে চাই’
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

আইটি বিশেষজ্ঞ, এক্সট্রা গিফটিং ইকোসিস্টেমের প্রতিষ্ঠাতা ও অ্যাপলেকট্রাম সলিউশনস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম মামুন। তিনি দীর্ঘ ২২ বছর ধরে সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন। এর মধ্যে একযুগেরও অধিক সময় একটি টপ আউটসোর্সিং কোম্পানিতে সিটিও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ৫ বছর নিজের কোম্পানিতে কিছু সফটওয়্যার প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট আর আউটসোর্সিং নিয়ে কাজ করছেন। প্রাণের সংগঠন বেসিসের স্ট্যান্ডিং কমিটি অন লোকাল মার্কেটের সদস্য এবং স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ডিজিটাল কমার্সের দায়িত্ব পালন করেছেন।


দেশের সফটওয়্যার প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের শীর্ষ বাণিজ্যিক সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) ২০২২-২৩ সেশনের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন।


সম্প্রতি তিনি বিবার্তার মুখোমুখি হন। জানান বেসিস নির্বাচনের হালচাল নিয়ে গঠনমূলক ও আশাবাদী নানান কথা। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন বিবার্তা২৪ডটনেটের নিজস্ব প্রতিবেদক উজ্জ্বল এ গমেজ।



বিবার্তা: এবারের নির্বাচন বেসিসের গতিশীলতার জন্য কেন জরুরি?


মঞ্জুরুল আলম মামুন: বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যবসার প্রচুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দেশীয় সফওয়্যার ব্যবহারে প্রাধান্য দেয়া, রফতানি আয় বাড়ানো, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে বেসিসকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। আমি আশা করি, এই নির্বাচন ঘিরে বেসিস একটি গতিশীল সংগঠনে পরিণত হবে। গতিশীল সংগঠনে পরিণত করতে না পারলে তথ্যপ্রযুক্তি খাত মুখ থুবড়ে পড়বে।


দেখুন, সাধারণত বেসিসের কার্যনির্বাহী পরিষদে ৯ জন পরিচালক থাকতেন। এবারে থাকছেন ১১ জন। ২টা পদ সংখ্যা বেড়েছে। একটু খেয়াল করলে দেখবেন যে, আমাদের গত কার্যনির্বাহী পরিষদ এক টিম হয়ে সবাই কাজ করতে পারেননি, এবার মূল লক্ষ্যই হওয়া উচিত ইসির সব সদস্য এক হয়ে ইন্ডাস্ট্রির জন্য কাজ করা, ইন্ডাস্ট্রিকে গতিশীল করা।



বিবার্তা: আপনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন কেন?


মঞ্জুরুল আলম মামুন: বেসিস দেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য সংগঠন। আমাদের কয়েকটি মূল সমস্যা রয়েছে। এ সমস্যাগুলো সমাধান না করলে সংগঠনটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যপথে এগিয়ে যেতে পারবে না। যেমন ধরুন, মানসম্পন্ন আইটি প্রফেশনালের ঘাটতি, কিংবা আন্তর্জাতিক ও দেশি বাজার যথেষ্ট সম্প্রসারণ না হওয়া। এই বিষয়গুলো নিয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ করাই আমার নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার প্রধান কারণ।


বিবার্তা: আপনি নির্বাচনে জয়ী হলে কোন কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দেবেন?


মঞ্জুরুল আলম মামুন: দেখুন, আমি কোয়ালিটি রিসোর্স, প্রসেস ও প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করছি দীর্ঘদিন। গত কিছু বছরও ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া-মিনিস্ট্রিতে এই বিষয়গুলো নিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমার পরিকল্পনায় অন্যতম গুরুত্ব পাবে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা। আমাদের ভালো ও দক্ষ মানবসম্পদ দরকার। কিন্তু আমরা পাই না। পেলেও অনেক বেশি দামে পেতে হয়ে। প্রচুর আইটি প্রফেশনাল আছে, কিন্তু দক্ষতার হিসাব করলে, সংখ্যা অনেক কম। কোয়ালিটি ট্রেনিং, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশনসহ আরো কিছু উদ্যোগের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান আমাদের করতে হবে। এটা যথাযথভাবে না করতে পারলে ধীরে ধীরে রিসোর্স কস্ট বেড়ে যাবে। আমাদের সাস্টেইন করা কঠিন হবে।


লোকাল ও আউটসোর্সিং মার্কেটে ব্যবসা সম্প্রসারণ নিয়ে কাজ করবো। সব ব্যবসাই ভালোভাবে করতে হলে, তার কোর নলেজগুলো জানতে হয়। কিছুদিন আগে আমরা আউটসোর্সিংয়ের উপর এই রকম একটা ওয়েবিনার করলাম। বিষয় ছিল মার্কেটিং আর সেলস স্ট্রাটেজি ইন আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রি। একইভাবে আমরা এটা লোকাল মার্কেট নিয়েও করবো। উদ্দেশ্য হচ্ছে একটা জ্ঞানভিত্তিক কালচার তৈরি করা। যেখানে আমরা একজন আরেকজন থেকে শিখবো ও ব্যবসা বাড়াবো।



বিবার্তা: বেসিস সদস্যদের সার্বিক উন্নতির জন্য আপনার কী পরিকল্পনা থাকবে?


মঞ্জুরুল আলম মামুন: আমি ইতোমধ্যে বলেছি আমি কী নিয়ে কাজ করবো। ওই কাজগুলো যথাযথভাবে করতে পারলে বেসিস সদস্যরা অনেক উপকৃত হবেন। এছাড়া বেসিস সদস্যদের সার্বিক উন্নতির জন্য আমার যেসব পরিকল্পনা থাকবে সেগুলো হলো, বেসিসকে আরো মেম্বার-ফ্রেন্ডলি করার চেষ্টা করা, যাতে মেম্বাররা সময়মতো সব রকমের সার্ভিস পান। দেরি হলেও জানতে পারেন কেন দেরি হচ্ছে।


আরেকটি বিষয় নিয়ে কাজ করলে সদস্যরা অনেক উপকৃত হবেন। আমাদের দেশে কিন্তু প্রচুর পরিমাণে তথ্যপ্রযুক্তির কাজ হচ্ছে। কিন্তু সেই কাজগুলো অনেক ক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানিগুলো করছে। আমরা আমাদের দেশীয় কম্পানি দিয়ে কাজগুলো করাচ্ছি না। যদি করা যেত, তাহলে বেসিসের সদস্যদের যে সক্ষমতা আছে তা বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে। আমরা যদি এখন একটা জায়গায় দাঁড়াই, সরকার যে কাজ করবে সে কাজগুলো বেসিসের সদস্যদেরই দেয়া হবে। তাহলে আমি বলবো যে দেশের অভ্যন্তরীণ বিশাল একটা বাজার বেসিস সদস্যদের জন্য হয়ে যাবে। এছাড়া প্রাইভেট সেক্টরও যারা লোকাল সফটওয়্যার কিনবে, তাদের ট্যাক্স বেনিফিট দেয়া যেতে পারে। এতে প্রাইভেট সেক্টরও বেসিস সদস্যদের কাজ করার আরো বেশি সুযোগ তৈরি হবে। সাথে বিদেশি সফটওয়্যারগুলোর ট্যাক্স আরো বাড়ানো যেতে পারে। যাতে লোকাল কোম্পানিগুলো বিদেশী সফটওয়্যার কিনতে নিরুৎসাহিত হয়।



বিবার্তা: সদস্যরা কেন আপনাকে ভোট দেবে?


মঞ্জুরুল আলম মামুন: এবারের নির্বাচনে সদস্যদের মধ্যে যাচাইবাছাই করে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করার আকাঙ্ক্ষা লক্ষ্য করছি। আমার অভিজ্ঞতা ও ইন্ডাস্ট্রির প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে সদস্যরা আমাকে ভোট দেবেন বলে আশা করি। দেখুন, গত বছরগুলোতে আমি কম-বেশি ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনেকগুলো কাজের সাথে জড়িত ছিলাম। যেমন-জাতীয় পর্যায়ে সার্টিফিকেশন পোর্টাল, আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কেটিং স্ট্রাটেজি, লোকাল মার্কেটে এইচ আর সেমিনার, আইটি প্রফেশনালদের জন্য কোয়ালিটি ওয়ার্কশপ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো বেশ কিছু জায়গায় কোয়ালিটি ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ। আমি কাজ করে এখন ভোট চাইতে এসেছি। এখন সিদ্ধান্ত সদস্যদের।


বিবার্তা: নির্বাচিত হলে বেসিসকে কোন স্তরে দেখতে চান?


মঞ্জুরুল আলম মামুন:প্রাণের সংগঠন বেসিস আজকে যে স্তরে এসেছে তা একদিনে আসেনি। অসংখ্য মানুষের চিন্তা, কঠোর পরিশ্রম, ত্যাগ ও নিরলস পরিশ্রমের ফসল আজকের অবস্থান। যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে আজকে বেসিসকে আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বের জায়গায় নিয়ে এসেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এটুকুই শুধু বলতে চাই, আমরা যদি সঠিক পরিকল্পনা করতে পারি, বাংলাদেশ হতে পারে বিশ্বের অন্যতম সফটওয়্যার আউটসোর্সিং গন্তব্য। আর এটা ঠিকমতো করতে পারলে সরকারও বেসিসকে অন্য বড় সংগঠনের মতো গুরুত্ব দেবে। আর এই গুরুত্বই আমাদের সদস্যবান্ধব অনেক নীতিমালা করা সম্ভব হবে।



বিবার্তা: নতুন মেয়াদে কমিটির সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ থাকবে?


মঞ্জুরুল আলম মামুন: বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে অনেক কোম্পানির ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। এই মেম্বারদের সব কিছু আবার স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসাটা একটা চ্যালেঞ্জ। গত দেড় বছরে বেসিসের স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলো তেমন দৃশ্যমান কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো ছিল না। সেগুলো আবার সচল করাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া প্যানেল ভিত্তিক ভোটের কারণে মিশ্র প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী থেকে নির্বাচিত পরিচালকদের সমমনা হয়ে একসঙ্গে দেশের সফটওয়্যার শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সবাই ব্যক্তি চিন্তা না করে, ইন্ডাস্টির উন্নয়নে অবদান রাখার মানসিকতা থাকলে কোনো সমস্যাই আমাদেরকে দাবাইয়া রাখতে পারবে না।


বিবার্তা: নির্বাচন উপলক্ষে বেসিস সদস্যদের জন্য কী মেসেজ থাকবে?


মঞ্জুরুল আলম মামুন: আমি মনে করি, বেসিসের সম্মানিত সদস্যরা অত্যন্ত প্রাজ্ঞ। তাই বেসিস ভোটারদের কাছে আমি বলতে চাই, নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের সক্ষমতা, দক্ষতা, যোগ্যতা দেখে আপনার মূল্যবান ভোট প্রদান করুন। গত বছরগুলোতে ইন্ডাস্টির জন্য কে কী কাজ করেছে, তাও দেখতে পারেন। আপনারা যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন তাহলে আপনার মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করুন। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, নির্বাচনে বিজয়ী হলে আপনাদের প্রতিনিধি হিসেবে সাথে থাকবো, বিজয়ী না হলেও আপনাদের সাথে থাকবো। আপনাদের সহযোগিতা, পরামর্শ আমার পাথেয় হয়ে থাকবে।


বিবার্তা/গমেজ/কেআর/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com