শিরোনাম
শেষ হলো দু’দিনব্যাপী বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২১, ১৪:২৬
শেষ হলো দু’দিনব্যাপী বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

দু’দিনব্যাপী বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম শনিবার (৩১ জুলাই) শেষ হয়েছে। করোনা মহামারী ও লকডাউনের কারণে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের ইন্টারনেট গভর্নেন্স বিষয়ক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।


বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের (বিআইজিএফ) উদ্যোগে বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম গঠিত হয়। এটি একটি বহুমাত্রিক অংশীজন, যুব ও যুব নারীদের নেতৃত্বাধীন প্ল্যাটফর্ম যা বাংলাদেশে ইন্টারনেট গভর্নেন্স নিয়ে কাজ করছে।


প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট গভর্নেন্স সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা এই প্রোগ্রামে ইয়ুথ আইজিএফ বাংলাদশ ইনফ্লুয়েন্সার হান্ট, ইয়ুথ অ্যামবাসেডর প্রোগ্রাম, ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্নেন্স, মানবতার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বাংলাদেশে করোনার প্রেক্ষাপটে শিশু-কিশোরদের ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তির প্রভাব, ক্ষতিকর দিক এবং উত্তরণের উপায়, যুব উদ্যোক্তা তৈরি- ডোমেন নাম নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও সুরক্ষা, যুবদের ক্ষমতায়ন : বিগ ডেটা ও আইওটি, সাইবার ভ্যালু-সিস্টেম ও ম্যালপ্র্যাকটিস, ওটিটি, ডিজিটাল কন্টেন্ট ও মনিটাইজেশন, স্থানীয় ও আঞ্চলিক ইন্টারনেট গভর্নেন্সে অংশগ্রহণ, যুবদের জন্য সরকারি সুযোগ প্রশিক্ষণ ও অনুদান ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করেন।


সরকার, নাগরিক সমাজ, বেসরকারি, প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, একাডেমিয়া, যুব ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা ইয়ুথ ভার্চুয়ালি (জুম প্ল্যাটফর্ম) অংশগ্রহণ করেন। আলোচ্য বিষয়গুলো হলো- ইয়ুথ আইজিএফ বাংলাদশ ইনফ্লুয়েন্সার হান্ট, ইয়ুথ অ্যামবাসেডর ও অন্যান্য সেশন।


ই ওয়াই হোস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান হোসেন আলোচনা করেন যুব উদ্যোক্তা তৈরি ডোমেন নাম নিবন্ধন প্রক্রিয়া এবং সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা করেন।


ঢাকা ইউনিভর্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার ও সিস্টেম এনালিস্ট মো. সিরাজুল ইসলাম আলোচনা করেন যুবদের ক্ষমতায়ন : বিগ ডেটা ও আইওটি নিয়ে।


ভারতের কলকাতার টিসিএস রিসার্চের সিনিয়র সাইনটিস্ট ও আইসক কলকাতা চ্যাপ্টারের ভাইস প্রেসিডেন্ট অভিযান ভট্টাচার্য সাইবার ভ্যালু-সিস্টেম ও ম্যালপ্র্যাকটিসের বিষয়গুলো সবার সামনে তুলে ধরেন।


সময় টেলিভিশনের সম্প্রচার ও আইটি প্রধান সালাহউদ্দিন সেলিম ওটিটি, ডিজিটাল কন্টেন্ট এবং মনিটাইজেশন নিয়ে আলোচনা করেন। এশিয়া প্যাসিফিক স্কুল অব ইন্টারনেট গভর্নেন্সের সেক্রেটারি এবং লার্ন ইন্টারনেট গভর্নেন্সের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীদীপ রায়ামাঝি স্থানীয় ও আঞ্চলিক ইন্টারনেট গভর্নেন্সে অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা করেন।


আইসিটি ডিভিশনের এটুআই প্রোগ্রামের ন্যাশনাল কনসালটেন্ট শাহরিয়ার হাসান জিসান যুবদের জন্য সরকারি সুযোগ, প্রশিক্ষণ ও অনুদান নিয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম ২০২১-এর চেয়ারপারসন সৈয়দা কামরুন জাহান রিপা ইয়ুথ আইজিএফ ইনফ্লুয়েন্সার হান্টের ফলাফল ঘোষণা করেন।


আটজন বিভাগীয় ফোকালপারসন বক্তব্য দেন। তারা হলেন- ঢাকার ভূবন ফয়সাল আহমেদ, বরিশালের সাজ্জাদ হোসেন, চট্টগ্রামের মো. আশরাফুর রহমান পিয়াস, রংপুরের মো. রিয়াদ হাসান বাদশা, রাজশাহীর শাহরিয়া দীপ, খুলনার ইমরান হোসেন, ময়মনসিংহের মো. মিজানুর রহমান ও সিলেটের সন্তোষ রবিদাস অঞ্জন।


অভিনেত্রী ও বৈশাখী টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপক তাসনুভা আনান শিশির বলেন, এই উদ্যোগ তরুণ ও যুবকদের ইন্টারনেট ব্যবহার এবং ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে সহায়তা করবে।


বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল মো. আব্দুল হক অনু বলেন, এর আগের বছরগুলোতে বিআইজিএফের প্রোগ্রামে যুবদের জন্য একটি সেশন বরাদ্দ থাকতো। তবে এই প্রথমবারের মতো যুব ও যুব নারীদের জন্য বাংলাদেশে পূর্ণ যুব আইজিএফের আয়োজন করা হয়েছে।


তিনি উল্লেখ করেন, যুব ও যুব নারীরা এখন সক্ষমতা অর্জন করছে। তারা তাদের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে।


টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্কের (টিআরএনবি) সভাপতি ও দৈনিক সমকালের বিশেষ সংবাদদাতা রাশেদ মেহেদি, ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।


তিনি বলেন, আমাদের একটি তথ্য সুরক্ষা আইন প্রয়োজন যা নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকবে না। আমাদের মিস ইনফরমেশন, ডিজইনফরমেশন ও ফেইক নিউজ প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। যুব ও যুব নারীদের আরো দায়িত্ব নিয়ে দেশের অগ্রযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে হবে। ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে হবে।


বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশনের (বিএনএনআরসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম বজলুর রহমান উল্লেখ করেন, বিআইজিএফ জ্ঞান সৃষ্টি ও জ্ঞান সংরক্ষণের জন্য ইন্টারেনট গভর্নেন্স নিয়ে সরকার এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করছে। এই প্রোগ্রামটি যুবসমাজের, যুবসমাজের দ্বারা ও যুব সমাজের জন্য আয়োজন করা হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে যুবক ও তরুণ প্রজন্মকে একটি শক্তিশালী ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা, তাদের ক্ষমতায়ন করা, তাদের কণ্ঠস্বর জোরালো করা ও নীতি নির্ধারকদের প্রভাবিত করার জন্য কাজ করছে। ডিজিটাল সমাজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য, যুবকদের ক্ষমতায়ন, জ্ঞানবৃদ্ধি এবং ক্ষমতাশীলদের প্রভাবিত করার জন্য আপস্কিলিং, ডিস্কিলিং ও রিস্কিলিংয়ের জন্য কাজ করা উচিত।


তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের চেয়ারপারসন হাসানুল হক ইনু অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।


তিনি বলেন, বিআইজিএফ-বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেস ফোরামের উদ্যোগে গতকাল ও আজ দুইদিনব্যাপী এর সমাপনী অধিবেশনে আরও ৩২ জন বক্তা হিসেবে তাদের মতামত তুলে ধরেন। সারা দেশ থেকে ১৫০ এর বেশি অংশগ্রহণকারী এতে অংশগ্রহণ করেন।


হাসানুল হক ইনু বলেন, আমরা এখন ডিজিটাল পরস্পর-নির্ভরশীলতা (ইন্ডিপেন্ডেন্স) পর্যায়ে। এখানে সব মহল স্বীকার করেছেন যে, ইন্টারনেটের স্থিতিশীলতা, নির্ভরযোগ্যতা, টেকসই মজবুত অবস্থা দরকার।


অপরদিকে এটাও সবাই স্বীকার করেন যে, আইসিটি ও ইন্টারনেটকে অপব্যবহার করে বৈশ্বিক পর্যায়ে অনিরাপত্তা, মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তাই এ রকম পরিস্থিতিতে সামনে যেতে হলে ‘ডিজিটাল শান্তি পরিকল্পনা’ দরকার। দরকার ‘ডিজিটাল পরস্পর-পরস্পর নির্ভরশীলতা’, যা বৈশ্বিক-আঞ্চলিক-জাতীয়পর্যায় ভিত্তিক হতে হবে।


এসব লক্ষ্য কার্যকর করতে, আমাদের একমত হতে হবে ইন্টারনেটের নিরাপদ ও নিরাপত্তা নিয়ে। অপরদিকে ডিজিটাল যন্ত্রপাতির ব্যবহারে ব্যবহারকারীদেরও সুরক্ষা দিতে হবে। সেফটি, সিকিউরিটি ও প্রাইভেসি প্রসঙ্গে ডিজিটাল জগতে বিচরণকারী মানুষদের নিরাপত্তা বিধানে জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তোলা ও জাতীয় চুক্তি করতে হবে। যাতে ডিজিটাল জগতের নিরাপত্তা থাকে, টেকসই ডিজিটাল উন্নয়ন হলেও সবার অধিকার সুরক্ষা থাকে।


এসব নীতিগত বিষয় সামনে নিয়ে এ মুহূর্তে দেশের বিকাশমান ডিজিটাল সমাজকে আরো বেগবান ও কার্যকর করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। ইন্টারনেটে অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি ও বাস্তবায়ন সময়ের দাবি। সাশ্রীয় মূল্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ জরুরি ভিত্তিতে নিশ্চিত করা। ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে সাশ্রয়ী মূল্যে স্মার্টফোন তথা অ্যানড্রয়েড ফোন নিশ্চিত করতে এসব ফোনের উপর সব ট্যাক্স প্রত্যাহার করা।


ফ্রিজ, টিভির মতো অ্যান্ড্রয়েড ফোনও কিস্তিতে কেনাবেচার পদ্ধতি চালু করা। স্থানীয় সরকার সে লক্ষ্যে কিছু অর্থ বরাদ্দ রাখবে। ব্রডব্যান্ড সংযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার এ বিষয়ে তদারকি করা দরকার।


তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলোর ব্যবহার আয়ত্ব করার জন্য উপজেলা ও জেলায় কার্যকর প্রশিক্ষণে জরুরি ব্যবস্থা ভিত্তিতে গড়া। যথেষ্ট সময় নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার। তথ্য সুরক্ষা (ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট) আইন ও ই-কমার্স আইন জরুরি ভিত্তিতে করা।


বিবার্তা/বিদ্যুৎ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com