শিরোনাম
মোবাইল ফোন গ্রাহক অভিযোগের ২৫% ক্ষতিপূরণ দাবি
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৭:৩৭
মোবাইল ফোন গ্রাহক অভিযোগের ২৫% ক্ষতিপূরণ দাবি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

মোবাইল ফোন গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করে ২৫ শতাংশ ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন।


নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি অনুযায়ী কেবল জরিমানার বিধান না রেখে ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী এই ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে সংগঠনটি।


বুধবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান জহুরুল হকের সাথে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের বৈঠকে এই দাবি করা হয়। পাশাপাশি ১৫ দফার একটি প্রস্তাবনাও পেশ করেন সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।


তার নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আবু বকর ছিদ্দিক, সহ-সভাপতি এ্যাড. রাশেদুল হাসান, কেন্দ্রীয় সদস্য এ্যাড. শাহেদা আক্তার ও কাজী আমানুল্লাহ মাহফুজ।


বৈঠকে বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খান ও চেয়ারম্যানের এপিএস শহীদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।


বৈঠকে ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ এর মতো গ্রাহকদের অভিযোগের ধারাও পরিবর্তন করে ৩০০ কোটি টাকা থেকে ২৫ শতাংশ অভিযুক্ত গ্রাহককে প্রমাণ সাপেক্ষে প্রদান করার আবেদন করে মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। একইসঙ্গে গ্রাহকদের অভিযোগ শুনতে প্রতি সপ্তাহে শুনানি আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।


তাদের এই প্রস্তাব সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে গ্রাহক অধিকারে সংগঠনটিকে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান বিটিআরসি চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে জহুরুল হক বলেন, আইনের ভিত্তিতেই সকল সমস্যার সমাধান করা হবে।


আইনের সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, আইন তৈরী করবেন আইন প্রণেতারা, আমরা শুধু বাস্তবায়ন করি। অতএব যারা আইন তৈরি করছেন তাদেরকেও জনস্বার্থের এবং আইনের সমস্যা সম্পর্কে অবগত হয়েই আইন তৈরি করতে হবে।


সংগঠনের পক্ষে থেকে যে দাবি ও সুপারিশ কমিশনের কাছে তুলে ধরা হয়-
১.টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ এ কমিশনকে স্বাধীন বলা হয়েছে অথচ এই আইনের ৪৮ ধারা অনুযায়ী সরকারের কাছে ট্যারিফের প্রস্তাব কমিশনকে করার কথা বলা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সরকার কমিশনের কাছে প্রস্তাব করবে। আমরা মনে করি, এটি একটি সাংঘর্ষিক আইন। তাই ইহা পরিবর্তন জরুরি।


২. ট্যারিফ নির্ধারণে কমিশন কর্তৃক গণশুনানী করে স্টেক হোল্ডারদের মতামত যাচাইবাছাইপূর্বক কমিশন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ট্যারিফ নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।


৩. আইএসপি এনটিটিএনর কোন ট্যারিফ আজ অবধি নির্ধারণ করা হয় নাই। তাই দ্রুত এই সেবার ট্যারিফ নির্ধারণ করা জরুরি। সেই সাথে আইএসপি গ্রাহক পর্যায়ে সেবা প্রদানে নৈরাজ্য বিরাজমান। এই নৈরাজ্য নিরসনে কমিশনের ভূমিকা জরুরি।


৪. গ্রাহকদের সেবার মান নির্ধারণ করা হয়েছে কোয়ালিটি অব সার্ভিস। অথচ বর্তমান সময়ে এই গাইডলাইন প্রতিপালিত হচ্ছে না। বর্তমান সময়ে কলড্রপের মাত্রা অত্যন্ত বেশি (বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী ২ শতাংশের অধিক)। তাছাড়া নেটওয়ার্ক দুর্বলতা, ধীরগতির ইন্টারনেট, ডাটা ব্যবহারে নানাবিধ সমস্যা, যত্রতত্র বাণিজ্যিক ম্যাসেজ, রিচার্জে রিটেলারদের অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ অসংখ্য অভিযোগের কোন নিষ্পত্তি হচ্ছে না।


৫. অপারেটররা গ্রাহক বা গ্রাহকদের প্রতিনিধিদের কাছে কোন প্রকার জবাবদিহিতা করে না। এ ব্যাপারে কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।


৬. কমিশন একটি বিচারিক প্রতিষ্ঠান হলেও এখানে গ্রাহকদের অভিযোগ বা টেলিযোগাযোগ আইন ভঙ্গের কারণে বিচার করার এজলাস বা শুনানীর ব্যবস্থা নাই। বিইআরসি’তে প্রতি মঙ্গলবার গ্রাহকদের অভিযোগ নিয়ে শুনানী হয়। তাই বিটিআরসি’তেও সপ্তাহে একদিন শুনানীর ব্যবস্থা একান্ত আবশ্যক।


৭. ৫৯ ধারায় গ্রাহকের অভিযোগ ৭ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা ও ৬৩ ধারা অনুযায়ী লাইসেন্স বাতিলের নোটিশ এমনকি আদেশ অমান্যের কারণে ৪১ (ক) উপধারা অনুযায়ী ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করার মতো কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। ১ বছর ধরে গ্রাহক অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি এমন দৃষ্টান্তও আমরা দেখেছি।


৮. ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ এর মতো গ্রাহকদের অভিযোগের ধারাও পরিবর্তন করে ৩০০ কোটি টাকা থেকে ২৫ শতাংশ অভিযুক্ত গ্রাহককে প্রমাণ সাপেক্ষে প্রদান করার আবেদন করছি।


৯. গ্রাহক অনুপাতে তরঙ্গ অনেক কম। আবার তরঙ্গের দামও বেশি। অথচ রাষ্ট্রীয় এ সম্পদ রাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রয়োজনেই। তাই তরঙ্গের মূল্য কমিয়ে অপারেটরদের অধিক তরঙ্গ ব্যবহারে বাধ্য করতে আহ্বান জানাচ্ছি।


১০. মোবাইল ব্যাংকিং এর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ও বাংলাদেশ ব্যাংক। অথচ বিশাল এ ব্যাংকিং সেবার দেখভাল কেউ করে না। এমনকি ট্যারিফ নির্ধারণ করছে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই। আমাদের দাবি গণশুনানীর মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং এর ট্যারিফ নির্ধারণ করা হোক।


১১. আইসিএক্স, আইআইজি, আইজিডব্লিউ ও এমএনপি’কে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।


১২. প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী সড়কের উপরিভাগে আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর তারের জঞ্জাল দূর করার কথা কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।


১৩. হ্যান্ডসেটের মান নির্ধারণে কমিশনের একটি নিজস্ব ল্যাব থাকা আবশ্যক। যার মাধ্যমে আমদানি ও উৎপাদনের পর বিএসটিআই’র ন্যায় পরীক্ষাপূর্ব স্টিকার যুক্ত করে বাজারজাতের অনুমতি প্রদান করতে হবে। সেই সাথে মাননীয় হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী হ্যান্ডসেট ডিভাইসের উপর এসআর ভ্যালু যুক্ত করা আবশ্যক।


১৪. এক্সেসরিজের মান ও বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য কমিশন কর্তৃক ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা জরুরি।


১৫. করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় জনসচেতনতা তৈরি ও মোবাইল ফোন অপারেটরদের টেলিমেডিসিন ও ম্যাসেজের মাধ্যমে জনসচেনতা তৈরি করতে নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। সেই সাথে টেলিকম খাতে অনেক চীনা নাগরিক যুক্ত রয়েছে। তাদের দিক নির্দেশনা অত্যন্ত জরুরি।


বিবার্তা/উজ্জ্বল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com