শিরোনাম
সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের বিষয়টা গুরুত্বসহকারে নিতে হবে
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:৩২
সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের বিষয়টা গুরুত্বসহকারে নিতে হবে
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, আমরা খুব সহজেই গুজবের কথা বলি। মিথ্যাকে আমরা ধর্মীয়ভাবে বলি মহাপাপ আর আইনগতভাবে মিথ্যাকে বলা হয় ‘অপরাধ’। তাই, ফেসবুক, ইউটিউব, সোশ্যাল মিডিয়া বা ইন্টারনেটে যে কোন জায়গায় যদি কোন মিথ্যা অপপ্রচার দেখি তাহলে সেটাকে আমরা মিথ্যা-ই বলব।


তিনি বলেন, সে কারণেই আমাদের এই সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের বিষয়টা গুরুত্বসহকারে নিতে হবে। এটাকে হালকাভাবে, গুজব কিংবা একটা হাসি ঠাট্টার বিষয় হিসেবে নয় বরং এটা একটি জঘন্য অপরাধ এবং পাপ হিসেবে যখন আমরা বিবেচনা করব তখন কিন্তু আমরা বেশি সতর্ক হতে পারব।


‘সত্য-মিথ্যা যাচাই আগে, ইন্টারনেটে শেয়ার পরে’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এ অনুষ্ঠিত ‘সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিবাচক ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংস্কৃতি তৈরি’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।


নিরাপদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার বিষয়ক এই বিশেষ সেমিনারটি আয়োজন করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এর অধীনে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প (iDEA)।


রবিবার শিক্ষার্থীদের নিয়ে উন্মুক্ত এই সেমিনারটি চট্টগ্রামের রাউজানের চুয়েট অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।


এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম-৬ রাউজান আসনের সংসদ সদস্য ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, এমপি , চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলাম এবং “উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প” (iDEA) এর পরিচালক (অতিরিক্ত-সচিব) সৈয়দ মজিবুল হক।


সেমিনারটি সভাপতিত্ব করেন চুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ মশিউল হক।


পলক বলেন, আমাদের বুঝে না বুঝে মিথ্যা সংবাদকে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অবশ্যই শেয়ার করার আগে বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। পৃথিবীতে বড় কোন ক্ষতি হয় গুঁটি কয়েক খারাপ মানুষের সংর্স্পশে নয় বরং এটি হয়ে থাকে অধিকাংশ ভালো মানুষের নিরবতার কারণে। আমরা নিজেরা সচেতন হব এবং অন্যকে সচেতন করব।


পলক আরো বলেন, তাই, নীরব না থেকে প্রতিবাদের মাধ্যমে সবাইকে এক সাথে সমন্বিতভাবে, সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশকে ভালোভাবে গড়ে তোলা সম্ভব। ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে তারুণ্য নির্ভর এবং প্রযুক্তি নির্ভর। দেশে ডিজিটাল আইন রয়েছে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা আছে। শাস্তি প্রয়োগের চেয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা উত্তম মাধ্যম হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তাই নিরাপদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সবাইকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।


প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি ডিজিটাল ক্ষেত্রে সচেতন না হই, তাহলে এই যে যত কিছু আয়োজন স্টার্টআপ বাংলাদেশ এর স্টার্টআপ ফ্যাসিলিটিজ কিংবা আমাদের বাংলাদেশের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিগুলোর জন্য ইনসেনটিভ এগুলো কোন কিছুই কাজে লাগবে না। কারণ আমরা দেখেছি যে একের-পর-এক সহিংস ঘটনা কিভাবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া যায়।


প্রতিমন্ত্রী উদাহরণ হিসেবে রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, রংপুর, ভোলা ইত্যাদি ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, সমাজের এই অবস্থা থেকে আমাদের দ্রুত ফিরে আসতে হবে। বর্তমানে আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকারির সংখ্যা প্রায় ২০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৩ কোটি। আমাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারী প্রায় শতভাগ আছে। শঙ্কার জায়গাটা হল- খুব সহজেই এক ঘন্টার মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কোটি মানুষের কাছে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। প্রপাগান্ডা, ভুল তথ্য প্রচার, আউটসোর্সিংকে গুজব ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার, না বুঝে যেকোন তথ্য শেয়ার করার বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। অপরাধীকে প্রশ্রয় না দিয়ে এই সমস্যাগুলোর প্রতিকারে সকলকে কাজ করতে হবে।


সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে চট্টগ্রাম-৬ রাউজান আসনের সংসদ সদস্য ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, অসম্ভব বলে আসলে কিছুই নেই। ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে অনেক কিছুই সম্ভব করা যেতে পারে।


তিনি আরো বলেন, আমরা ভালো-কে ভালো বলি না। এটাই আমাদের মানুষের দোষ। তাই তিনি যে কোন ইতিবাচক বিষয়কে প্রশংসা করতে সবাইকে অনুপ্রাণিত করেন।


রাউজানের সংসদ সদস্য বলেন, রাউজানে আইটি ভিলেজের জন্য আমি মাঁটি কাটতেও রাজি। আইটি ভিলেজকে দ্রুত বাস্তবায়ন, ফেসবুক ও সোশ্যাল মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ, নির্দিষ্ট সময় পরে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ, রাউজানে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ, চুয়েটের জন্য রেল ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেন। বিভিন্ন ধরনের গুজব ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ছবির অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণে সবাইকে তিনি বিশেষ অনুরোধ করেন।


তরুণদের ইন্টারনেটে যেকোন কিছু শেয়ার করার আগে নিজেদের বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করে এবং উক্ত তথ্যের সত্য-মিথ্যা যাচাই করে শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করেন “উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প” (iDEA) এর পরিচালক (অতিরিক্ত-সচিব) সৈয়দ মজিবুল হক।


তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে অসত্য ও গুজব প্রচার করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হল এক প্রকার অন্যায় এবং এই প্রকারের কার্যক্রম স্বাধীনতা অর্জনের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করছে যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। ইন্টারনেটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকলকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।


ইন্টারনেটের যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি প্রোফাইল আইডি বা পরিচয় যেকোন ব্যক্তিরই থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ফেসবুক, লিঙ্কডইন, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব বা টুইটার যাই বলা হোক না কেন এসব নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত আইডিটি যদি হাতছাড়া হয়ে যায় তবে ভুক্তভোগীদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। ভুক্তভোগীদের মধ্যে শিক্ষার্থী বা তরুণদের সংখ্যাই বেশি। এরই আলোকে শিক্ষার্থী বা তরুণদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা, এর ব্যবহার বিধি, সামাজিক নেটওয়ার্কে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে করণীয়, ঠিক কোন পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করলে হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা কমবে এসকল বিষয় নিয়ে সেমিনারে অন্যান্যরা বক্তব্য করেন এবং অনুষ্ঠানে অতিথিগণ তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।


সেমিনারটিতে প্রায় ২শতাধিক শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তাবৃন্দ এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/উজ্জ্বল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com