আজ বৃহস্পতিবার পবিত্র হজ। ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাকা।’ অর্থাৎ, ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, আমি হাজির, তোমার কোনো অংশীদার নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার, তোমার কোনো অংশীদার নেই।’– এই ধ্বনিতে আজ মুখরিত হবে পবিত্র আরাফাতের মহাময়দান।
হজের তিন ফরজের মধ্যে ৯ জিলহজ্ব আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা অন্যতম ফরজ। আজ সৌদি আরবের মক্কা নগরীর মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে পুরুষ হাজিগণ শ্বেতশুভ্র সেলাইবিহীন ইহরামের দুই খণ্ড কাপড় এবং নারীরা স্বাভাবিক কাপড়ে তালবিয়া পাঠ করতে করতে মহান আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে পাপমুক্তির আকুল বাসনায় সমবেত হবেন। সেখানে তাঁদের কেউ পাহাড়ের কাছে, কেউ বা সুবিধাজনক জায়গায় বসে ইবাদত করবেন। হজ পালন করতে এসে যাঁরা অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাঁদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতের ময়দানে স্বল্প সময়ের জন্য আনা হবে। মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেবেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি।
হজের আহকাম পালনের লক্ষ্যে হাজিগণ বুধবার ফজরের নামাজের পর মক্কা থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে মিনার উদ্দেশে রওনা হন। তাঁদের কেউ গাড়িতে, কেউ বা হেঁটে মিনায় পৌঁছান। অবশ্য যানজট এড়াতে আগের দিন রাতেও অনেক হাজি মিনায় পৌঁছান। আরাফাতের ময়দানে যাওয়ার এক দিন আগে মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা সুন্নত। এ সুন্নত আদায় করতে হজের এক দিন আগে মিনায় যান হাজিরা।
আজ আরাফাতের ময়দানে খুতবার পর জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করে হাজিরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবেন। এর পর তাঁরা পাঁচ কিলোমিটার দূরের মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। রাতে তাঁরা সেখানে খোলা মাঠে অবস্থান করবেন এবং শয়তানকে পাথর মারার জন্য প্রয়োজনীয় পাথর সংগ্রহ করবেন।
মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায় করে হাজিরা কেউ গাড়িতে, কেউ হেঁটে মিনায় যাবেন। ফিরবেন নিজ নিজ তাঁবুতে। মিনায় বড় শয়তানকে সাতটি পাথর মারার পর পশু কোরবানি দিয়ে হাজিরা মাথার চুল কছর/খলক (ছাঁটা/মুণ্ডানো) শেষে গোসল করে সেলাইবিহীন দুই খণ্ড কাপড় বদল করবেন।
এরপর স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে হাজিরা কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন, কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে সাঈ করবেন। সেখান থেকে তাঁরা আবার মিনায় এসে আরও দুই দিন অবস্থান করে হজের অন্য আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করবেন।
মিনার কাজ শেষে মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফ করার পর যারা মদিনা শরিফে যাননি, তাঁরা মদিনা শরিফ যাবেন। যারা আগে মদিনা শরিফ গেছেন, তাঁরা নিজ নিজ দেশে ফিরবেন।
এদিকে সৌদি হজ মন্ত্রণালয় ও মোয়াচ্ছাসা কার্যালয়ের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানায়, মক্কা, মিনা ও আরাফাতের ময়দানে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সব হাজিকে বিনা মূল্যে খাবার, বিশুদ্ধ পানিসহ সব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান হাজিদের নানা উপহার দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, পবিত্র কাবা শরিফকে আবৃত করে রাখা কাপড়টিকে আরবরা বলে কিসওয়া আর আমরা বলি গিলাফ। আজ কাবা শরিফের গায়ে পরানো হবে নতুন গিলাফ। প্রতি বছর ৯ জিলহজ অর্থাৎ হজের দিন হাজিরা আরাফাতের ময়দানে থাকেন। হাজিরা আরাফাত থেকে ফিরে এসে কাবা শরিফের গায়ে নতুন গিলাফ দেখতে পান। নতুন গিলাফ পরানোর সময় পুরোনো গিলাফটি সরিয়ে ফেলা হয়। পুরনো গিলাফ কেটে মুসলিম দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের উপহার দেয়া হয়।
কাবা শরিফের দরজার ও বাইরের গিলাফ দুটিই মজবুত রেশমি কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়। গিলাফের মোট পাঁচটি টুকরা বানানো হয়। চারটি টুকরা চারদিকে এবং পঞ্চম টুকরাটি দরজায় লাগানো হয়। টুকরাগুলো পরস্পর সেলাইযুক্ত।
জানা যায়, নতুন গিলাফটি তৈরি করতে ১২০ কেজি স্বর্ণ, ৭০০ কেজি রেশমি সুতা ও ২৫ কেজি রুপা লাগে। গিলাফের দৈর্ঘ্য থাকে ১৪ মিটার এবং প্রস্থ ৪৪ মিটার।
বিবার্তা/জিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]