শিরোনাম
সত্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠার বার্তা : শুভ জন্মাষ্টমী
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০১৭, ১৫:০৪
সত্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠার বার্তা : শুভ জন্মাষ্টমী
মানিক লাল ঘোষ
প্রিন্ট অ-অ+

জন্মাষ্টমী, পরমাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ আবির্ভাব তিথি। বিশ্বব্যাপী সনাতন ধর্ম বিশ্বাসীগণের কাছে এই তিথির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।


চাওয়া না পাওয়ার কষ্ট, প্রভুত্ববাদ আর অন্যের ওপর খবরদারি করার অপচেষ্টায় দিন দিন কলুষিত হচ্ছে মানবসমাজ। বিরূপ পরিবেশে কলুষিত হচ্ছে মন, বিকৃত হচ্ছে মানসিকতা। জগতের কলুষিত বন্ধন যখন জীবসত্ত্বাকে বিপদগামী করে তখন পৃথিবী ছেয়ে যায় অনাচার আর পাপকর্মে। ন্যায় ও সত্য তখন ঢাকা পড়ে যায় পাপের ছায়ায়। সাধু-সন্যাসীদের ঐশ্বরিক শক্তিও তখন হার মেনে যায় অপশক্তির কূটচালে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন সময় এসেছে অনেকবার।


যুগে যুগে এমন দুর্দিনে মানবসভ্যতা রক্ষায় স্রষ্টা কর্তৃক প্রেরিত শক্তি বিভিন্ন রূপে আবির্ভুত হয়েছে পৃথিবীতে, অপশক্তিকে ধ্বংস করে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য, শান্তি ও সত্যের বাণী প্রচারের লক্ষ্যে। ন্যায়ের পক্ষে ভগবান ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে জীবকে শিক্ষার জন্য কর্ম করেছেন অনেক। শিক্ষা দিয়ে গেছেন ভবিষ্যতেও সত্য এবং আলোর পথে চলার দিকনির্দেশনা।


সনাতন ধর্ম এ আবির্ভাবের প্রক্রিয়া নিয়ে রয়েছে নানা মত। শাস্ত্রমতে যুগে যুগে পথভ্রষ্ট ও বিপদগামী মানুষকে সৎ ও আলোর পথে ফিরিয়ে আনার জন্য এবং অপশক্তিকে ধ্বংস এবং সৎজনকে রক্ষা করে সত্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভগবান বিভিন্ন রূপে এই পৃথিবীতে আবির্ভুত হন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই আবির্ভাবের জন্যই তিনি মহা অবতার বলে পরিচিত হন। সনাতন ধর্মের শাস্ত্রে বর্ণিত চারটি যুগের মধ্যে সত্য ও ত্রেতা যুগে যুগের মত দ্বাপর যুগেও ভগবান পৃথিবীতে অবতরণ করেন।



ভগবান শ্রীকৃষ্ণ লোকশিক্ষার জন্য অর্জুনের মাধ্যমে মূলত মানবসমাজকে শিক্ষা দিয়েছেন। জীব হিসেবে আমরা অনুচেতনার অধিকারী হলেও কলুষিত পরিবেশে নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলেছি। ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া, ভোগ-বিলাস, জাগতিক মোহ, যশ আর খ্যাতি ও অর্থবিত্তের লোভে মায়াচ্ছন্ন হয়ে আমরা ভুলে যাই সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে আমাদের করণীয়গুলো।


অন্যায়, অসত্য ও পাপের দ্বারা পরিচালিত ও প্ররোচিত হয়ে জ্ঞানশূন্যতার অহমিকায় ভুগছি আমরা। আত্ম অহংকারে ভুলে যাচ্ছি সৃষ্টিকর্তার অধীনতাকে। পার্থিব সুখে ভুলে যাই মহা অবতার ভগবানের সঙ্গে আমাদের চিন্ময় সম্পর্ককে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের মাধ্যমে পবিত্র শ্রীমদ ভগবত গীতায় যে জ্ঞান দান করেছেন তাও যদি আমরা গ্রহণ করতে সক্ষম হতাম এবং যথাযথভাবে পালন করতাম তবে অন্যায় ও অসত্য এবং অসৎ পন্থা আমাদের ঈশ্বর চেতনাকে স্পর্শ করতে পারত না।


মহা অবতার পরম চেতনার অধিকারী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত গীতার জ্ঞান যুগ যুগ ধরে মানবজীবনের পথ চলায় আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এই জ্ঞানের আলোকিত জগতে নেই কোনো শঠতা, অন্যায় আর অসত্যের স্থান, ঠাঁই নেই কোনো অপশক্তির। বরং প্রতিনিয়ত সব রকমের ভীরুতা দূর করে অন্যায়কে প্রতিহত করার শিক্ষা পবিত্র গীতা আমাদেরকে দান করেছে।


পাপাচারে আচ্ছন্ন পরিবেশের বহিঃশক্তি ও অন্তঃশত্রুর হাত থেকে জীবসত্তাকে রক্ষা করে ভগবানের আনন্দ বিধানের জন্য করণীয় সম্পর্কে জ্ঞান ও উপদেশ এ গীতার মাধ্যমেই আমরা পেতে পারি।


আমাদের বিপদাগ্রস্ত বিশ্বের বিপদগামী মানুষকে আলোর পথে, সততার পথে ফিরিয়ে আনা এবং বিশ্বব্যাপী বিরাজমান অশান্তি নিরসনে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে, হিংসান-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হোক, এক পৃথিবী ও আলোকিত মানবসমাজ গঠনে শ্রীমদ ভগবত গীতা হোক আমাদের পথ নির্দেশক।


মহা অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংস বধের নামে যেভাবে আবির্ভুত হয়েছিলেন পৃথিবীতে তেমনিভাবে অন্যায় আর অসত্যের বিরুদ্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুগ যুগ তার স্পর্শে পূর্ণতা পাক ভক্তের হৃদয়। পৃথিবী হোক শোষণমুক্ত, শান্তির সুবাতাস ছড়িয়ে পড়ুক পৃথিবীময় - ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মদিনের এই পুণ্য তিথীতে এই হোক সবার প্রার্থনা।


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com