মুসলিম বিয়েতে দেনমোহর হচ্ছে স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীর একটি বিশেষ অধিকার। আর বিয়ের সময় স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদান করা স্বামীর ওপর ফরজ। দেনমোহর সাধারণত বর ও কনের সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। দেনমোহর হিসেবে যেকোনো পরিমাণ অর্থ নির্ধারণ করা যায়। কিন্তু কোনো অবস্থায়ই স্বামী ন্যূনতম ১০ দিরহাম বা সমপরিমাণ অর্থ অপেক্ষা কম নির্ধারণ করতে পারবেন না।
তবে বিয়ের সময় দেনমোহর নির্ধারণ করা না হলে বিয়ের পরও তা নির্ধারণ করা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে ন্যায্য দেনমোহর নির্ধারণের সময় সামাজিক মর্যাদা ও বাবার পরিবারের অন্যান্য নারী সদস্যের—যেমন, স্ত্রীর আপন বোন, ফুপু ও ভাইয়ের মেয়ের—দেনমোহরের পরিমাণ বিবেচনা করাকে প্রাধান্য দিতে হবে।
তাছাড়া প্রয়োজনে আদালতের মাধ্যমে দেনমোহর নির্ধারণ করা যায় কিংবা স্বামী কর্তৃক যেকোনো সময় দেনমোহরের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়। তবে দেনমোহর প্রদান ছাড়া বিয়ে অবৈধ হয়ে যায় না। শর্ত হচ্ছে, বিয়ের পর স্ত্রীকে অবশ্যই উপযুক্ত দেনমোহর প্রদান করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা খুশি মনে স্ত্রীকে মহর পরিশোধ করো।’ -সূরা আন নিসা: ৪
মোহর পাওয়া স্ত্রীর অধিকার। নারীকে এ অধিকার দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ। তাই অন্যসব অধিকারের মতো স্বামীর কাছে দেনমোহর দাবি করা স্ত্রীর জন্য কোনো দূষণীয় নয়। অনেকেই মনে করেন, দেনমোহরের টাকা স্ত্রীকে দিতে হয় শুধুমাত্র বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটলে। এটা অজ্ঞতা ও চরম ভুল ধারণা। বিয়ে বিচ্ছেদ না হলেও দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করা ফরজ।
স্ত্রীকে মোহর সম্পূর্ণ বা আংশিক পরিশোধ না করলে তা স্বামীর ওপর ঋণ হয়ে থাকবে। এটা পরিশোধের পূর্বপর্যন্ত স্বামী ঋণগ্রস্ত আর স্ত্রী পাওনাদার। এ অবস্থায় স্বামী মারা গেলে তার সম্পদ ওয়ারিশদের মাঝে ভাগ করার পূর্বে স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করতে হবে। আর স্ত্রী আগে মারা গেলে স্ত্রীর ওয়ারিশদের মাঝে তার মোহর ভাগ করে দিতে হবে। তাই অন্যান্য ঋণের মতোই গুরুত্ব দিয়ে যতো দ্রুত সম্ভব দেনমোহর পরিশোধ করতে হয়।
তবে দেনমোহরের টাকা মাফ করা যায়। সে জন্য কিছু শর্ত আছে। স্ত্রীর পূর্ণ সমর্থন থাকতে হবে এবং কোনো প্রকার প্ররোচিত না হয়ে মাফ করতে হবে। কারও দ্বারা প্রভাবিত হওয়া যাবে না। কিন্তু বাসর রাতে, স্ত্রীর মৃত্যুর সময়, স্বামীর মৃত্যুর সময় বা অন্য কোনো সময় ও পরিস্থিতিতে স্ত্রীর কাছ থেকে মোহরের মাফ চেয়ে নেয়া শরিয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।
সূরা নিসার ২৪ নম্বর আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, মোহর হতে হবে বিক্রয়যোগ্য বস্তু সম্পদ। আর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, মোহরের নূন্যতম পরিমাণ হবে দশ দিরহাম। আধুনিক পরিমাপে তা প্রায় ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপা। মোহরের সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। নূন্যতম পরিমাণের ঊর্ধ্বে যে কোনো পরিমাণকেই মোহর নির্ধারণ করা যাবে। তবে স্বামী যেহেতু দেনমোহর পরিশোধ করতে বাধ্য- তাই তার পরিশোধের সামর্থ্য বিবেচনা করে তা নির্ধারণ করা উচিৎ।
বিবার্তা/জাকিয়া/যুথি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]