
সম্পদ আয় ও ব্যয়ে নবীজির সুন্নত পালন করলে সেই আয় ও ব্যয় ইবাদতে গণ্য হবে। আয় ও ব্যয়ের মাঝে আরেকটি বিষয় হলো সঞ্চয়। তা জায়েজ আছে কি না।
অধিক আয়ে সময় ব্যয় করা যেমন ইসলামে নিরুৎসাহিত করা হয় তেমনই অধিক ব্যয় করে অপচয় করার ক্ষেত্রেও আল্লাহ তাআলার রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। প্রশ্ন হলো তাহলে কি সম্পদ সঞ্চয় করা যাবে?
পবিত্র কোরআনে কারিমে অপচয় ত্যাগের কঠোর নির্দেশ জারি করে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আহার এবং পান করো, আর অপচয় করো না; তিনি (আল্লাহ) অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আরাফ ৩২)
অপচয় এবং কৃপণতা দুটোই ইসলামে অনুমোদিত। এই দুই প্রান্তিকতার মাঝখানে মধ্যমপন্থা হিসেবে মিতব্যয়ী হয়ে ভবিষ্যতের জন্য কিছু অর্থ সঞ্চয় করে রাখা ইসলামের শিক্ষা। যারা অপচয় এবং কৃপণতার পথ পরিহার করে মিতব্যয়ের পথ অবলম্বন করবে আল্লাহ তাদেরকে নিজের বান্দা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(রহমানের বান্দা তো তারাই) যারা অপব্যয় করে না আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।’ (সুরা ফুরকান ৬৭) সঞ্চয় করা এ জন্য নিষিদ্ধ যে, এই সঞ্চয় ভবিষ্যতে বিপদ থেকে উদ্ধার করবে। সঞ্চয় কারও জীবনের গ্যারান্টি দিবে এই চিন্তা থেকে সম্পদ সঞ্চয় করা যাবে না। সম্পদ কখনো বিপদ থেকে উদ্ধার করে না।
যে কোনো বিপদে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চাইতে হবে, তারপর নিজের যা আছে তা দিয়ে বিপদ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। ভবিষ্যতের অনিশ্চিত বিষয়ের জন্য বর্তমানের কোনো কিছু বাদ দেয়া ঠিক নয়।
আয়, ব্যয় ও সঞ্চয়ের মূলনীতি
ইসলামে কারও আয়ে সীমা দিয়ে দেয় না। শুধু আয়ের মাধ্যম হালাল কি না তা নিশ্চিত হতে বলে। তাই যে যত ইচ্ছা আয় করতে পারে। তবে আয়ের পিছনে এতটা সময় দেয়া যাবে না যার কারণে আল্লাহ ও তার রসুলের অনুসরণ থেকে বিমুখ হতে হয়।
সম্পদ ব্যয়ে অপচয় করা যাবে না। অপচয় হতে হবে ইসলামি বিধান সম্মত। দুনিয়াবি কোনো অনুষ্ঠানে অধিক পরিমাণে খরচ করা যাবে না। কারণ ছাড়া কোনো সম্পদ খরচ করা যাবে না।
অনেকে জন্মদিন, মুসলমানি ইত্যাদি অনুষ্ঠানে প্রচুর পরিমাণে অর্থব্যয়কে উদারতা মনে করেন। আত্মীয় স্বজনকে ধার, উপহার, দান করার ক্ষেত্রে নিজের সঞ্চয়ের চিন্তা করেন। এমন চিন্তা থেকে সঞ্চয় ঠিক নয়।
প্রতিবেশির হক, আত্মীয় স্বজনের হক, যাকাত-ফেতরা ইত্যাদি আদায় শেষে সঞ্চয় করা যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয় শুধু সঞ্চয় না করে মানুষকে ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করা, ব্যবসায় বিনিয়োগ করা। দুটোর যেকোনো একটি করলে অন্যের উপকার তো হয়ই। নিজেরও উপকার হয়।
পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, তুমি (কৃপণতাবশে) নিজের হাত ঘাড়ের সঙ্গে বেঁধে রেখে একেবারে ব্যয়-কুণ্ঠ হয়ো না। আবার (অপব্যয়ী হয়ে) একেবারে মুক্তহস্তও হয়ো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল ২৯)
অপব্যয় না করে সন্তানদের জন্য কিছু সঞ্চয় করাও ইসলামের শিক্ষা। সন্তানদের কারও মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়া নবী (সা.) পছন্দ করেননি। হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদেরকে মানুষের করুণার মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়ার চেয়ে তাদেরকে সচ্ছল রেখে যাবে। এটাই উত্তম।’ (বুখারি ও মুসলিম)
ইসলাম সঞ্চয়কে কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছে তা আরও স্পষ্ট হয় রসুলে কারিম (সা.)-এর হাদিস থেকে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘উত্তম দান তাই, যা নিজ অভাবমুক্ততা রক্ষার সঙ্গে হয়।’ (বুখারি ২১১২)
কৃপণ না হয়ে ইসলাম নির্দেশিত খাতে খরচে কোনো রকম দ্বিধা না করে, হারাম পথে খরচের সব পথ বন্ধ করে দিয়ে; অপচয়-অপব্যয় না করার মাধ্যমে মিতব্যয়ী হলে দারিদ্রমুক্ত জীবন আল্লাহ তাকে দান করবেন। এটা রসুলে কারিম (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, রসুলে কারিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পরিমিত ব্যয় করে সে নিঃস্ব হয় না।’ (মুসনাদে আহমাদ ৭৩০৩)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি অর্থব্যয়ে পরিমিত বোধের চর্চা করবে, অনটন তার নাগাল পাবে না। ইসলামের এ মহান শিক্ষাটি যথাযথ অনুসরণ না করার কারণে মানুষ উপার্জনের যাচিত সুফল থেকে বঞ্চিত।
কৃপণ না হয়ে মিতব্যয়ী হয়ে সঞ্চয় করলে হাজার কোটি টাকার মালিক হতেও ইসলাম নিষেধ করে না। সঞ্চিত অর্থ থাকলেই তো অর্থনির্ভর আমলগুলো করা যাবে। রোজাদারকে ইফতার করানো যাবে। শরিক হওয়া যাবে জনকল্যাণমূলক নানা কাজে। চালু করা যাবে সদকায়ে জারিয়ার অফুরন্ত ধারা। আবার উদ্ধৃত অর্থ যখন নেসাব পরিমাণ হবে এবং তা বর্ষপূর্তি হবে তখন সেখানে এসে যাবে জাকাতের মতো আরেকটি মহান ইবাদতের সুযোগ।
বিবার্তা/মাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]