আল্লাহ'র অপছন্দের ৩ কাজ
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৪, ০৯:০৮
আল্লাহ'র অপছন্দের ৩ কাজ
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

আল্লাহ তাআলা অনেক কিছুই অপছন্দ করেন। তার মধ্যে বিশেষ কিছু বিষয় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৃথকভাবে উল্লেখ করেছেন। এরকমই একটি হাদিসে আল্লাহ তাআলার অপছন্দের তিনটি বিষয় সম্পর্কে জানা যায়।


হজরত মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন মায়ের অবাধ্য হওয়া, কন্যা সন্তান জীবিত অবস্থায় মাটিতে পুঁতে ফেলা এবং অন্যের হক আদায় না করা এবং না-হক কোনো বস্তু প্রার্থনা করা।


আর তিনটি বিষয় তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেন। তা হল, ১. অনর্থক কথাবার্তা বলা, ২. অধিক প্রশ্ন করা এবং ৩. সম্পদ বিনষ্ট করা।


অনর্থক কথাবার্তা বলা মুসলমানের কাজ নয়


অনর্থক কথা-কাজ মুমিনের জন্য শোভনীয় নয়। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অর্থহীন কথা বা কাজ ত্যাগ করা।’ (তিরমিজি ২৩১৮) কেননা কখনো কখনো একটি কথা সারা জীবনের দুঃখের কারণ হতে পারে।


কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি কথাই মানুষকে চিরস্থায়ী জাহান্নামে পৌঁছে দিতে পারে। মহান আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ হতে পারে। বিলাল ইবনুল হারিস আল-মুজানি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি কখনো আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির কথা বলে, যার সম্পর্কে সে ধারণাও করে না যে তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, অথচ আল্লাহ তাআলা তার এ কথার কারণে তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার দিন পর্যন্ত তার জন্য স্বীয় সন্তুষ্টি লিখে দেন।


আবার তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি কখনো আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টির কথা বলে, যার সম্পর্কে সে চিন্তাও করে না যে তা কোন পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছবে। অথচ এ কথার কারণে আল্লাহ তাআলা তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার দিন পর্যন্ত তার জন্য অসন্তুষ্টি লিখে দেন।’ (তিরমিজি ২৩১৯)। এর প্রমাণ ইবলিস শয়তান। একটি বাক্যই তাকে কেয়ামত পর্যন্ত অভিশপ্ত করে দিয়েছে।


অনাবশ্যক প্রশ্ন করা নিষিদ্ধ


অহেতুক প্রশ্ন বা কৌতূহল কখনো নিজের বিপদ ডেকে আনে। তাই এ কাজ থেকে বিরত থাকা উত্তম। এ ব্যাপারে কোরআনে আল্লাহ তাআলা দুটি আয়াত নাজিল করেছেন।


১০১. হে মুমিনগণ, তোমরা সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যা তোমাদের কাছে প্রকাশ পেলে তোমরা কষ্ট পাবে। কোরআন অবতরণকালে তোমরা যদি সেই সব বিষয়ে প্রশ্ন করো, তাহলে তা তোমাদের জন্য প্রকাশ করা হবে। অতীত বিষয় আল্লাহ ক্ষমা করেছেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, সহনশীল।


১০২. তোমাদের আগেও তো এক সম্প্রদায় এ ধরনের প্রশ্ন করেছিল। এরপর তারা (উত্তর পেয়ে) এসব বিষয়ে অবিশ্বাসী হয়ে গেল (সুরা আল-মায়েদা, ১০১-১০২)।


উল্লিখিত আয়াতদ্বয়ে বলা হয়েছে, কিছুসংখ্যক মানুষ আল্লাহর বিধিবিধানে অনাবশ্যক চুলচেরা ঘাঁটাঘাঁটি করতে আগ্রহী হয়ে থাকে এবং যেসব বিধান দেওয়া হয়নি, সেগুলো নিয়ে বিনা প্রয়োজনে প্রশ্নের পর প্রশ্ন তুলতে থাকে। আয়াতে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন অহেতুক প্রশ্ন না করে। কেননা এতে আরো কঠোর বিধান নাজিল হতে পারে। ফলে তারা কষ্টে পতিত হবে, কিংবা গোপন রহস্য ফাঁস হওয়ার কারণে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে।


ইসলামে সম্পদ নষ্ট ও অপব্যয় নিষিদ্ধ


মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আত্মীয়-স্বজনকে দেবে তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। আর কিছুতেই অপব্যয় কোরো না। যারা অপব্যয় করে তারা তো শয়তানের ভাই।


এবং শয়তান তার রবের প্রতি অতি অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা বনি ইসরাইল ২৬-২৭)


সম্পদের সুরক্ষা বিধান ও মর্ম অনুধাবনে যারা অক্ষম, তাদের হাতে সম্পদ তুলে দেয়া নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের সম্পদ—যা আল্লাহ তোমাদের জন্য উপজীবিকা করেছেন, তা নির্বোধদের হাতে অর্পণ কোরো না...।’ (সুরা নিসা ৫)


সম্পদের সুরক্ষা বিধানে ইসলামের নির্দেশনা হলো— সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে।


সম্পদ নিজের হোক বা অন্যের—তা নষ্ট করা ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ এক মুনাফিক সম্পর্কে বলেন, ‘যখন সে প্রস্থান করে, তখন সে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টির এবং শস্যক্ষেত ও জীবজন্তু ধ্বংস করার চেষ্টা করে। আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না।’ (সুরা বাকারা ২০৫)


ইসলামে চুরি, ডাকাতি, ছলচাতুরীসহ যেকোনো অবৈধ উপার্জনকে হারাম করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা পরস্পর নিজেদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার জন্য তা বিচারকদের কাছে পেশ কোরো না।’ (সুরা বাকারা ১৮৮)


কষ্ট করে উপার্জন করা সম্পদ বিনষ্ট হতে দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে সম্পদের সুরক্ষায় প্রাণপণ লড়াই করে যেতে হবে। সাঈদ ইবন জাইদ ইবন আমর ইবন নুফাইল (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি নিজের ধন-সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে মারা গেলে সে শহীদ। যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জমি চুরি করবে কিয়ামত দিবসে তার গলায় সাত তবক জমি ঝুলিয়ে দেয়া হবে।’ (তিরমিজি ১৪১৮)


সম্পত্তি ধরে রাখলে ভবিষ্যতে নিজের জন্য বা উত্তরাধিকারীদের জন্য কাজে আসবে। জাবির (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের সম্পদ নিজেদের জন্য সংরক্ষিত রাখো।’ (মুসলিম ৪০৮৯)


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com