পুরুষের জন্যও ইসলামে পর্দার বিধান, না মানলে কঠোর শাস্তি!
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৫৮
পুরুষের জন্যও ইসলামে পর্দার বিধান, না মানলে কঠোর শাস্তি!
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মহান আল্লাহ বলেন, ‘(হে নবী!) আপনি ঈমানদার পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য উত্তম পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ এ ব্যাপারে অবগত। আর ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করে।’ (সুরা নুর : ৩০)। 


এই আয়াতের শুরুতেই ঈমানদার পুরুষদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে। ইচ্ছাকৃত দৃষ্টিপাত কিংবা তাকানোই হচ্ছে যৌন প্রবৃত্তির সূচনা এবং এর শেষ পরিণতি পাপ ও ফেতনাসহ জিনা-ব্যভিচার, যার পরিণাম ভয়ঙ্কর।


ইসলামে ফরজ বা অবশ্যকরণীয় বিধান পর্দা। পর্দা পালনের মাধ্যমে ইহ ও পরকালীন অনেক কল্যাণ লাভ করা যায়। আর তা লঙ্ঘনে ধর্মীয়, আত্মিক, পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে বিভিন্ন বিপর্যয় ডেকে আনে। পর্দাহীনতার কারণে মানুষ আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর অবাধ্য হিসেবে গণ্য হয়। সমাজে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে, চারিত্রিক অবক্ষয় ঘটে। পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হয়। পরকীয়ার সৃষ্টি হয়ে ডিভোর্স বা তালাকের মতো নিকৃষ্ট ঘটনাও ঘটে।


নারীদের জন্য যেমন পর্দা পালন ফরজ, পুরুষদের জন্যও তেমনই ফরজ। 


পর্দার বিধান নারী-পুরুষ সবার জন্য সমান হলেও দুজনের পর্দার ব্যবহারিক পার্থক্য রয়েছে। নারী বাইরে বেরুলে বোরকা-চাদর ইত্যাদির মাধ্যমে তার শারীরিক অবস্থা ঢেকে রেখে পর্দা করবে। আর পুরুষ কাপড়ের মাধ্যমে নিজেকে আড়াল করে পর্দা করবে না। তার পর্দা হবে নিজেকে সংযত রাখা, চোখের হেফাজত করার মাধ্যমে। পুরুষ পরনারীর দিকে তাকাবে না, হুটহাট নারীর ঘরে ঢুকবে না। 


ঘরের মানুষের অনুপস্থিতিতে একজন মুসলিম নারীর সঙ্গে একজন পুরুষ কীভাবে যোগাযোগ করবেন, এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা হলো- ‘আর তোমরা যখন তাদের কাছে কোনো জিনিস পেতে চাইবে, তখন তা পর্দার আড়ালে বাইরে দাঁড়িয়ে তাদের কাছে চাইবে। বস্তুত এ নীতি তোমাদের ও তাদের অন্তরের পবিত্রতা রক্ষার পক্ষে অধিকতর উপযোগী।’ (সুরা আহজাব: ৫৩)


রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বেগানা নারীর সৌন্দর্যের প্রতি যৌন লালসা নিয়ে তাকাবে, কিয়ামতের দিন তার চোখে সিসা ঢেলে দেওয়া হবে।’ (ফাতহুল কাদির)। 


হজরত বুরায়দা ইবনে আল-হাসিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) হযরত আলীকে (রা.) বলেন, ‘হে আলী! দৃষ্টির পর দৃষ্টি ফেলো না। অনিচ্ছাকৃত যে দৃষ্টি পড়ে এর জন্য তুমি ক্ষমা পাবে। কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টির জন্য ক্ষমা পাবে না।’ (আবু দাউদ : ১/২৯২)। 


তিনি পুরুষদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘পথের হকগুলোর একটি অন্যতম হক হলো, দৃষ্টিকে সংযত রাখা।’ (বুখারি : ৬২২৯)। 


তিনি আরও বলেছেন, ‘নারীদের সঙ্গে নির্জনে অবস্থান করো না। ওই সত্তার শপথ- যার হাতে আমার প্রাণ, যখনই কোনো পুরুষ কোনো নারীর সঙ্গে একান্তে থাকে, তখনই তাদের মধ্যে তৃতীয় হিসেবে শয়তান এসে অনুপ্রবেশ করে এবং তার জাল বিস্তার করতে থাকে। কোনো বেগানা নারীর কাঁধের সঙ্গে ধাক্কা লাগার চেয়ে পচা দুর্গন্ধযুক্ত নর্দমায় জড়ানো শূকরের সঙ্গে ধাক্কা লাগাও সহনীয়।’ (নাইলুল আওতার : ৬/১২০)।


সৃষ্টিগত কারণে পোশাকের পর্দার ক্ষেত্রে নারীদের প্রতি ইসলাম কঠোর নির্দেশ দিয়েছে বটে। কিন্তু দৃষ্টিগত ও হৃদয়গত পর্দায় পুরুষদেরকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে।


পর্দার বিধান পালনের ক্ষেত্রে পুরুষের কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত।


** পোশাক এমন পাতলা হওয়া যাবেনা যাতে কাপড় পরা সত্বেও ওপর দিয়ে ভেতরের চামড়া নজরে আসে। কারণ এমন কাপড় পরা না পরা একই কথা। 
 
** পুরুষের নাভীর ওপর থেকে হাঁটুর নিচে এবং টাকনুর ওপর পর্যন্ত ঢাকতে হবে। পুরুষের হাটুর ওপরে এবং টাকনুর নিচে কাপড় পরা কবিরা গুনাহ । 


** এমন পোশাক পরিধান করবে, যা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি যৌন আবেদনময় হবে না এবং বিকৃত চিন্তার জন্ম দিবেনা। 


** পোশাক হতে হবে ঢিলেঢালা এবং মার্জিত। এমন আঁট-সাঁট (টাইটফিট) হওয়া যাবেনা যাতে দেহের উঁচু-নিচু গঠন বোঝা যায় । 


** পোশাকটি যেন কোনো অবিশ্বাসী/কাফেরদের অনুকৃত না হয়। প্রিয় নবীজী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন (পোশাকে, চাল-চলনে অনুকরণ) করবে, সে তাদেরই দলভুক্ত।’ (আবূ দাউদ, মিশকাত: ৪৩৪৭)


** পোশাকটি যেন বিপরীত লিঙ্গের পোশাকের অনুরূপ না হয়। এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন-সেই সমস্ত নারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন, যারা পুরুষদের বেশ ধারণ করে এবং সেই সমস্ত পুরুষদেরকেও অভিশাপ দিয়েছেন, যারা নারীদের বেশ ধারণ করে। (আবূ দাউদ: ৪০৯৭, ইবনে মাজাহ: ১৯০৪)


** পোশাক যেন জাঁকজমকপূর্ণ প্রসিদ্ধিজনক না হয়। কারণ, এমন ধরনের পোশাক পরলে সাধারণত পরিধানকারীর মনে অহংকারের সৃষ্টি হয়। তাই মহানবী (সা.) বলেন- ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধিজনক পোশাক পরবে, আল্লাহ্ তাকে কিয়ামতের দিন লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন। (আহমাদ, আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত: ৪৩৪৬) 


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com