শিরোনাম
রক্তের গ্রুপের ভিত্তিতে ঈমান নির্ধারণ কি ইসলাম সম্মত?
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২১, ১৩:০৫
রক্তের গ্রুপের ভিত্তিতে ঈমান নির্ধারণ কি ইসলাম সম্মত?
মুফতি ফয়জুল্লাহ আমান
প্রিন্ট অ-অ+

কারো যদি রক্তের গ্রুপ হয় এ বা ও তাহলে সে আখেরাতমুখী। এ বা ও গ্রুপের ৮০ ভাগ মানুষ আখেরাতমুখী। পক্ষান্তরে যাদের রক্ত এ-বি গ্রুপের তাদের ৮০ ভাগ দুনিয়াদার। এভাবে রক্তের গ্রুপের ভিত্তিতে ঈমানের সার্টিফাই করা কতটুকু ইসলামসম্মত? কুরআন হাদীস ও বাস্তবতার নিরিখে আমাদের বুঝে নেয়া প্রয়োজন।


সমস্ত মানুষ আদম থেকে সৃষ্টি হয়েছে এবং সমস্ত মানুষকেই আল্লাহ ইমানের নির্দেশ দিয়েছেন। ঈমান ছাড়া কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না। আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস ঈমানের অবচ্ছিদ্যে অঙ্গ। কাজেই প্রত্যেক মানুষকেই আখেরাতের প্রতি ঈমান আনতে হবে। এ কথাও সত্য, সবাই বিশ্বাসী হতে পারবে না। আল্লাহ তায়ালা একদলকে জান্নাতের জন্য, অপর দলকে জাহান্নামের জন্য বানিয়েছেন। কারা জান্নাতি, আর কারা চূড়ান্ত জাহান্নামী সে বিষয় জানেন কেবল আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা। বাহ্যিক আমল বা প্রকাশিত চিন্তা চেতনা বিশ্লেষণ করে বিদগ্ধ আলেম বা মুফতিরা ফতোয়া দিতে পারেন কারো ব্যাপারে। কন্তিু কারো বর্ণ ভাষা অঞ্চল বা রক্তের গ্রুপের ভিত্তিতে কোনো মানবগোষ্ঠির আস্তিক-নাস্তিক বা আখেরাতমুখীতা ও দুনিয়াদারিতার সনদ দেয়া সম্পূর্ণ জাহালাত মূর্খতা। জাহেলি যুগের জাহালাতকেও হার মানায় এধরণের সাম্প্রতিক মূর্খতা।


আরবের কিছু অনলাইন পোর্টালে জ্যেতিষবিদ্যার মত করে রক্তের গ্রুপের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের বিভিন্ন দোষ গুণের উল্লেখ করে বেশ কিছু নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। জন্মসময়, তারিখ, ও জন্মস্থানের ভিত্তিতে, জন্মকালে মহাকাশে গ্রহের অবস্থান নিরুপণ করে অথবা হাতের রেখা বিচার করে, শরীরের চিহ্ন বিচার করে বিভিন্ন প্রতিকি কথার প্রচলন সুপ্রাচিন। সেই একই ধারায় রক্তের গ্রুপের ভিত্তিতে মানব প্রকৃতি নির্ধারণের ধারা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে কিছু উদ্ভান্ত গবেষক। কিন্তু এগুলোর সাথে ইসলামের কোনোই সম্পর্ক নেই। ইসলাম এধরনের অনর্থক কাজে কখনো উৎসাহিত করে না। রাসূল সা. স্পষ্টভাবে বলেন, কেউ যদি জ্যোতিষিদের কথা বিশ্বাস করে তাহলে সে মুহাম্মাদ সা.-এর উপর নাযিলকৃত দ্বীনকে অস্বীকার করল।


এখন যদি কেউ বলে রাসূল সা. ইয়ামেনবাসীর প্রশংসা করেছেন। ইমানকে ইয়ামেনের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন। ইয়ামেনের আবহাওয়ার যদি প্রভাব থাকে তাহলে মহাকাশেরও প্রভাব থাকবে। কাজেই জ্যোতিষশাস্ত্রকে অস্বীকার করা যায় না। এটা যে একটা অবান্তর কথা হবে সে বিষয়ে জ্ঞানীদের সংশয় থাকা উচিৎ নয়। কারণ রাসূল সা. ইয়ামানের আবহাওয়ার কথা বলেননি। আবহাওয়ার কথা বললে তো বাংলাদেশের আবহাওয়া সবচেয়ে সুন্দর। এখানের মানুষ সবচেয়ে বেশি ঈমানদার হওয়ার কথা। বাঙালিদের ঈমানদারির বিষয়ে রাসূল সা.-এর ভবিষ্যদ্বাণী করার কথা। কারণ এদেশ পলিমাটির দেশ। ছয় ঋতুর দেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনার দেশ। তেরশ নদী ছিল একসময়। কাদা মাটির মত নরম এদেশের মানুষের মন। আরবের রুক্ষতা নেই। এসব বিচার বিশ্লেষণ করে পরবর্তী কোনো গবেষক যদি বলেন মরু মক্কার মানুষের চেয়ে আসমুদ্র হিমাচলের মানুষের ঈমান বেশি সুন্দর। তাদের মন অধিক কোমল। এ তত্ত্বও মেনে নিতে হবে উক্ত আলোচকের বক্তব্য যারা বিশ্বাস করছেন তাদের।


ইমাম নবভী রহ. বলেন, উক্ত হাদীসে সব যুগের সব ইয়ামেনবাসী সম্পর্কে রাসূল সা. এ মতামত দেননি। হাফেজ ইবনু হাজার রহ.ও ইমাম নবভীর মত সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, আনসারী সাহাবিদের ফজীলত বলা উদ্দেশ্য এবং তৎকালীন ইয়ামানীদের ফজীলত বলাই রাসূল সা.-এর উদ্দেশ্য। একই হাদীসে অন্য বর্ণনায় এরপর রাসূল সা. বলেন, যারা ছাগল পালন করে তাদের ভেতর প্রশান্তি রয়েছে আর উট ও ঘোড়ার মালিকদের ভেতর রয়েছে দম্ভ অহঙ্কার। ফাতহুল বারী ও অন্যান্য ব্যাখ্যা গ্রন্থে এর ব্যাখ্যায় ব্যাখ্যাতাগণ লিখেন, দক্ষিণ আরব ইয়ামেনে তখন অধিকাংশ লোক বকরি পালন করত। রাবিআ ও মুজার যারা উত্তর আরবে বসবাস করত তারা ছিল উটের মালিক। ইয়ামানের লোকজন আগে ইসলাম গ্রহণ করায় রাসূল সা. তাদের প্রশংসায় একথা বলেছেন। এখান থেকে অন্য কিছু আবিষ্কার করা রাসূল সা.-এর কথার অপব্যাখ্যার শামিল।


মনে করুন, যদি কেউ বলে, উট বা ঘোড়ার মালিক হলেই অহঙ্কারী হয়; উট বা ঘোড়ার মালিকদের তাই ঘৃণা করতে হবে। তাহলে তো এর অর্থ হবে, অধিকাংশ সাহাবিকেই অপছন্দ করা। কারণ অধিকাংশ সাহাবি উট ও ঘোড়ার মালিক ছিলেন। স্বয়ং রাসূল সা.-এর একাধিক উট ও ঘোড়া ছিল। তাহলে কি বলবেন, আল্লাহর রাসূলকেও পছন্দ করবেন না? নাউযুবিল্লাহ।


আজকাল নিত্য নতুন চটকদার কথার পিছনে ছোটার মানসিকতা তৈরি হয়েছে আমাদের সমাজে। আমাদের সবার উচিত নিজেদের মস্তিষ্ককে কাজে লাগানো। যে কোনো চটকদার কথায় প্রভাবিত না হয়ে সঠিক বিষয়টি উপলব্ধির চেষ্টা করা। সত্যি এ অন্ধত্বের কোনো চিকিৎসা নেই। যারা এমন বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছনে আল্লাহ তাদের হেদায়েত করুন।


লেখক : মুফতী ও মুহাদ্দসি, জামিয়া ইকরা বাংলাদশে


বিবার্তা/এনকে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com