মানুষের মনকে সতেজ করে তুলতে ভ্রমণের চেয়ে ভালো কিছু আর হতে পারে না। এটি মানুষকে যেমন কাজ থেকে ছুটি দেয় তেমনি নিজের মাঝে প্রগাঢ় শান্তি ফিরিয়ে নিয়ে আসে। দীর্ঘ সময়ের কাজের চাপ, স্ট্রেস আর নানা ঝামেলা থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে ভ্রমণ।
মানুষ ভ্রমণে গিয়ে তার ঝুলিতে কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা ও ভিন্ন দেশে কাটানো মজার স্মৃতি ও কিছু মুহূর্ত জমা করে রাখেন। তেমনি এক দেশ ঘুরে গল্প নিয়ে পাঠকের কাছে হাজির হলাম। যার শিরোনাম রাখলাম “শান্তির দ্বীপ বালি ভ্রমণ”
বালি ইন্দোনেশিয়ার একটি প্রদেশ। প্রকৃতি আর মানুষের সমন্বয়ে অসাধারণ একটি সাজগোজ তার। দেখলে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। ছোটবেলা থেকেই ভ্রমণে যাওয়া একটি অদ্ভুত শখ আমার। পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর আর থাইল্যান্ড ভ্রমণের পর দারুচিনি দ্বীপ ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার ইচ্ছা জাগলো প্রবল।
শৈশবে পাঠ্য বই-এ পড়েছিলাম দারুচিনি দ্বীপের গল্প। সেই থেকে মনে লুকায়িত ছিলো ভাবনাটি। তাই ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হলাম। এতে আমার সফর সঙ্গী ছিলেন প্রিয় সমীর বাবু। ভ্রমণের জন্য একজন পারফেক্ট অভিজ্ঞ লোক তিনি। তার সঙ্গে নেপাল ভ্রমণ করে বুঝেছি সেটা। সমীর বাবুর প্রতি আমার আস্তা ছিল প্রবল, তাই আবারো ভ্রমণে তার জুটি হলাম।
ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ করতে চাইলে আপনাকে আগে বিমানের টিকেট বুকিং দিতে হবে। তাহলে আপনি কম দামে পাবেন। নয়তো বাড়তি টাকা গুনতে হবে। একমাস আগে বুকিং দিলে ২৫ হাজার থেকে ২৯ হাজার টাকার মধ্যে মিলবে বিমান টিকেট। আর তাৎক্ষণিক কাটলে গুনতে হবে প্রায় ৪০ হাজার মতো।
আমরা অবশ্যই ২০ দিন আগে টিকেট করেছিলাম, তাই কমে পেয়েছি। ‘মালিন্দা এয়ার’-এ আমরা গিয়েছিলাম। কম দামে ভালো লেগেছে এই ইয়ারটি।
ট্রাভেলার্স বিডি নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা ২৫ জানুয়ারি রওয়ানা হলাম পৃথিবীর শেষ স্বর্গীয় উদ্যোনে। ইন্দোনেশিয়া অন অ্যারাভাইল ভিসা দেয় বাংলাদেশী টুরিস্টদের। সে সুবাদে আমাদের যাওয়ার আগ্রহটা বাড়লো। ফ্লাইট ডিলে হওয়ার কারণে আমাদের বালিতে পৌঁছতে ৮ ঘণ্টা দেরি হয়ে যায়। সেখানকার রাত ৯টায় ইন্দোনেশিয়ার পর্যটকধন্য দ্বীপ বালির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পৌঁছলাম।
সেখানে বিমান থেকে নেমেই ভেতরে প্রবেশ করতে ইমিগ্রেশনে আমাদের আটকে দিলো। প্রবেশেই হোঁচট খেলাম। একটি মহিলা পুলিশ বললো, আমাদেরকে আলাদা রুমে যেতে হবে।
অপরদিকে দেখলাম সবাইকে ইমিগ্রেশনে ভিসার সিল দিচ্ছে। রুমের বাইরে বসলাম। সঙ্গে দেখলাম একজন ইরাকি টুরিস্টকেও আমাদের মতো আটকে দিলো। পাশে থাকা সমীর বাবু দেখি একটু নার্ভাসনেস ফিল করছে। যদি দেশে ফিরে যেতে হয়, এই চিন্তায় তার কপালে ভাঁজ পড়েছে।
কয়েক মিনিট পর আমাদের ডাক পড়লো। সোফাসেটে বসলাম। একজন মহিলা পুলিশ কর্মকর্তা এসেই মুখোমুখি প্রশ্ন। পাঁচ মিনিটের জেরা! আমরা দেশে (বাংলাদেশে) কি করি? ব্যবসা বলাতে তিনি ভিজিটিং কার্ড দেখতে চাইলো। আহারে! আমার ছিল না কোন ভিজিটিং কার্ড। তবে সফর সঙ্গী সমীর বাবু’র ছিল। তাই এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম।
তারপর ভিতর থেকে সেই মহিলা পুলিশ এসেই পাসপোর্ট দুটো ধরিয়ে দিলো। শেষে আমি তাকে সাহস করে প্রশ্ন করে বসলাম, আসলে কি সমস্যা ছিল? মহিলাটা হেঁসে বললো, বাংলাদেশীরা বালি প্রবেশ করে মালয়েশিয়া চলে যায়।
এরপর এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে হালকা বাতাস আর গরম অনুভব করলাম। আমাদের দেশ হতে কিছুটা ভিন্ন পরিবেশ ওইদেশে। শত শত লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে সেখানে। প্ল্যাকার্ডে লেখা টুরিস্টদের নাম। কয়েক মিনিট খুঁজলাম আমার নাম। হোটেল থেকে পাঠানো হয়নি কোন গাড়ি।
হয়তো ফ্লাইট ডিলে হওয়াতে এ বেকায়দায় পড়েছিলাম সেদিন। মনকে এটাই সান্ত্বনা দিয়ে নজর বাড়ালাম চারদিকে। আমাদের হোটেল ছিল ইডেন থ্রি স্টার। তারকা মানের হোটেল এটি। ভাড়া পড়েছে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা। তবে আড়াই হাজার টাকাতেও ভালো হোটেল পাওয়া যায় সেদেশে।
বালিতে কয়েকটি বিচ রয়েছে। তবে টুরিস্ট বেশী থাকে কুটাবিচ-এ। এ জায়গা থেকে সহজে সব জায়গায় যাতায়াত করা যায়। বিমানবন্দর থেকে ৫০ ডলার পরির্বতন করলাম। বেশি করলাম না কারণ সেখানে রেট কম। পেলাম ৬ লাখ ৬০ হাজার রুপিয়া (ইন্দোনেশিয়ার মুদ্রা)। মুদ্রাস্ফীতির কারণে ইন্দোনেশিয়ার টাকার মান আমাদের তুলনায় অনেক কম।
আমাদের এক টাকা এদের ১৬৩ রুপিয়ার মত। বের হতেই ঘিরে ধরলো ইন্দোনেশিয়ান ড্রাইবাররা। তাদের একজনকে নিয়ে আমরা হোটেলের উদ্দেশে রওয়ানা হলাম।
নতুন শহর। একেবারে শান্ত। শব্দহীন পথে চলছে গাড়ি। আমাদের দেশের সঙ্গে ওইদেশের সময়ের ব্যবধান মাত্র দুই ঘন্টা। মাত্র ১০ মিনিটেই হোটেল পৌঁছলাম। রাত ১২টার কাছাকাছি সময়ে হোটেলে পৌঁছা মাত্র রুমে ব্যাগ রেখেই ভোজন করার ইচ্ছায় সাদা ভাতের সন্ধানে বের হলাম। আমরা সব পারি কিন্তু ঝাল আর সাদা ভাতের লোভ সামলাতে পারি না। উদর ফূর্তি করতে এসব আমাদের চাইই চাই!
তবে ওই সময় কুটাবিচা শহর একেবারে ক্লান্তের ভারে যেন নুয়ে পড়েছে। কয়েকটি দোকান খোলা ছিল কিন্তু আমাদের খাবার সেখানে ছিল না। সিমকার্ড নেওয়ার চেষ্টা করলাম কয়েকটি ফোনের দোকানে। দাম শুনে চোখ কপালে উঠে গেল। আড়াই লাখ রুপিয়া প্রতি সিমের মূল্য। যা বাংলা মুদ্রায় প্রায় পনের শ' টাকা।
টুরিস্টরা বিপাকে পড়লে এ রকম দাম হাঁকায় বালিরা। দামে শুনে সিম কেনার আগ্রহটাও নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। সকালে হয়তো নিলে ভালো হবে এটা ভেবেই রুমে ফিরে গেলাম।
এদিকে, হোটেলে পৌঁছে খাবারের অর্ডার দিলাম ফাস্ট ফুড আইটেম। একজনের খাবার ৭৫ হাজার রুপিয়া। দুই জন ভাগ করে খেলাম একজনের খাবার। পরের দিন সকালে হোটেলের ব্রেকফাস্ট একেবারে মন ভরে গেলো।
বালির প্রথম সকালটা ছিলো ঝলমলে রোদ। হালকা গরম হলেও ক্লান্তি ছিলো না মোটেও। তবে একটা কথা জরুরী ভাবে বলা উচিত পাঠকদের, বালি দ্বীপ ভ্রমণের ক্ষেত্রে ডলার পরির্বতনে সর্তকতা থাকতে হবে। পথে পথে দেখবেন ডলারের চেইঞ্জার এর সাইনবোর্ড। কতগুলো কোম্পানি বেশি মূল্য দিবে আবার কেউ বিপদে ফেলাবে। তাই সাবধান থাকবেন।
বেশি রুপিয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে ১০০/২০০ ডলার কম দেবে এটাই তাদের কৌশল। তাই রেট কম হলেও জেইনুন দোকানে ডলার পরির্বতন করবেন। প্রতিদিন ডলারের রেইট বাড়ে আর কমে। এক সঙ্গে সব ডলার পরিবর্তন না করা ভালো। একশ ডলারে আপনি পাবেন ১৩ লাখ ৯০ হাজারের মতো।
লেখাটির পরবর্তী অংশ “শান্তির দ্বীপ বালি ভ্রমণ” (পর্ব-২ এ চোখ রাখুন) বি-বার্তা অনলাইনে
লেখক: মুহাম্মদ সেলিম হক
সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও সংগঠক
কর্ণফুলী, চট্টগ্রাম।
বিবার্তা/জাহিদ/যাহিন/জহির
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]