শিরোনাম
ঊষাণ তোমায় কথা দিলাম, বাদল হত্যার বদলা নেব!
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:২৪
ঊষাণ তোমায় কথা দিলাম, বাদল হত্যার বদলা নেব!
আশিকুর রহমান লাভলু
প্রিন্ট অ-অ+

যুগে যুগে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের রক্তের বিনিময়েই আজকের ছাত্রলীগের ভীত শক্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে। মনিরুজ্জামান বাদলের মত ছাত্রলীগের এমন অনেক নেতাকর্মীদের জীবনের বিনিময়েই অর্জিত হয়েছে ছাত্রলীগের জয়গান। ইতিহাস সৃষ্টি করবার জন্য যাদের জন্ম ছাত্রলীগের সেই কর্মীরাই বুলেটবিদ্ধ শরীরে ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়েছেন। শহীদ মনিরুজ্জামান বাদল তেমনি ছাত্রলীগের এক তেজদৃপ্ত সূর্য।


শহীদ মনিরুজ্জামান বাদল ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী ছাত্রনেতা। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বগুণে ছাত্রলীগ যখন সুসংগঠিত হচ্ছিল, ছাত্র রাজনীতি যখন একটি পরিশীলিত অবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই শহীদ মনিরুজ্জামান বাদলের জীবনের অন্তীম সূর্য অস্তমিত হয়।


১৯৯২ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠান বিশেষ কারণে পিছিয়ে ৯ জানুয়ারি পালিত হয়। ওই দিন বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান চলাকালে আততায়ীরা মনিরুজ্জামান বাদলকে শামসুন্নাহার হলের সামনে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।


"যতবার হত্যা করো
জন্মাবো আবার
দারুণ সূর্য হবো;
লিখবো নতুন ইতিহাস"


শহীদ মনিরুজ্জামান বাদল তেমনই এক সূর্যদীপ্ত ইতিহাসের নাম। শহীদ মনিরুজ্জামান বাদলের রাজনৈতিক জীবনের শুরু ছাত্রলীগের হাতধরেই। ১৯৫৫ সালের বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শৈশবে বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন সংগ্রাম তাকে প্রবল আকর্ষণ করত। তার বাবার রাজনৈতিক গুরু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করেই মেধাবী বাদল রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করতে থাকেন।



খুলনা সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পরপরই জিয়ার রোশানলের শিকার হন তিনি। তৎকালীন জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে 'জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল' বা 'জাগদল' নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল তৈরি করেন। যা পরবর্তীতে বিএনপি নামক দলে রূপান্তরিত হয়। তৎকালীন সময়ে এই জাগদলের সন্ত্রাসীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই রাজপথ কাপিয়েছেন মনিরুজ্জামান বাদল।


'৭৫সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডে জড়িতদের আইনের উর্ধ্বে রাখতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেন খন্দকার মোশতাক। এই কালো আইন ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত করেন। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার আগ মুহুর্তে জিয়ার এই কালো আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় জেলে অবরুদ্ধ হন অনেক ছাত্রলীগ নেতা। তাদের মধ্যে মনিরুজ্জামান বাদল ছিলেন অন্যতম। মেধাবী বাদল জেলে বসেই ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।



লেখক আশিকুর রহমান লাভলু


উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়ে বাদল ভর্তি হয়েছিলেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সূর্যসেন হলের ৫২০ নম্বর রুম ছিল বাদলের ঠিকানা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসলে মনিরুজ্জামান বাদলের নেতৃত্বগুণে মুগ্ধ হন তিনি। শেখ হাসিনার জন্য স্বৈরশাসক এরশাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন।


১৯৯১ সালে স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রগামী সৈনিক ছিলেন বাদল। বাগেরহাটের শরণখোলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে আন্দোলনরত অবস্থায় এরশাদের পেটুয়া বাহিনী গুলি করলেও অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি। এভাবেই আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে রাজপথে শহীদ মনিরুজ্জামান বাদল সকলের আস্থা অর্জন করেছিলেন।


ছাত্রলীগ করা অবস্থায়ই বিয়ে করেছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী সামীমা আরার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের কোলজুড়ে কন্যা শিশুর জন্ম হয়। আর সেদিনের সেই শিশু কন্যা 'ঊষাণ আরা বাদল' বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।


'ঊষাণ তোমায় কথা দিলাম বাদল হত্যার বদলা নিবো', ঊষাণকে দেওয়া সেই কথা কেউ রেখেছেন কিনা জানি না। তবে এতটুকু জানি বাদল হত্যার বিচার দীর্ঘ ২৭ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। হয়তো ধুলোপড়া ফাইলেই আটকে আছে বাদল হত্যার বিচার। ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ছাত্রলীগের তেজদৃপ্ত সূর্য শহীদ মনিরুজ্জামান বাদলকে।


লেখক: আইন বিষয়ক সম্পাদক, স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


বিবার্তা/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com