শিরোনাম
সাংবাদিক নামধারী ধান্ধাবাজদের পক্ষে আমরা কখনোই লড়বো না
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৭:১৬
সাংবাদিক নামধারী ধান্ধাবাজদের পক্ষে আমরা কখনোই লড়বো না
আতাউর রহমান কাবুল
প্রিন্ট অ-অ+

ছুটিতে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি তেঁতুলিয়ায় গেলে এলাকার সাংবাদিক ভাইয়েরা আমাকে বেশ সঙ্গ দেয়। এটি চলে আসছে যতদিন থেকে আমি সাংবাদিকতা করি। বিষয়টি আমার বেশ ভালোই লাগে। কিন্তু সমস্যা হলো, এই সাংবাদিকদের অনেকের বিষয়ে নানা ধরনের অভিযোগ বা কথাবার্তা আমার কানে আসে। এর মধ্যে সবচেয়ে কমন অভিযোগ হলো, তাদের অনেকে বিভিন্ন জনের কাছে হুমকি-ধামকি দেখিয়ে টাকা আদায় করে। সাংবাদিকতার নামে এই ধান্ধাবাজিই নাকি তাদের মূল জীবীকা। শুনে আমি ভাবি, এলাকার লোকজন হয়তো ভাবে, আমরা যারা ঢাকায় থাকি তারা বড়ো ধান্ধাবাজ, আর যাদের সঙ্গে ঘোরাফেরা করি তারা ছোট ধান্ধাবাজ!


এই ভাবনায় আমি বিপন্ন বোধ করি। আমি ঢাকায় সাংবাদিকতা করলেও এসব কল্পনাই করি না (অনেকে ভাবতে পারে)। আমি মনে করি, হারাম আয়ের এক টাকা খাওয়া মানে রক্ত-মাংস নাপাক (অপবিত্র) হয়ে যাওয়া। আমার মরহুম বাবা ডা. আবদুল মালেক আমাদেরকে এই শিক্ষা দিয়ে গেছেন এবং আপনাদের দোয়ায় এখনো সেটা লালন করে চলেছি। ইনশাআল্লাহ আমৃত্যু চলতে চাই। আমি ২৫ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছি, কিন্তু ব্যাংকে ২৫,০০০ টাকাও নেই। হ্যাঁ, এটাই সত্য। আমার হয়তো ব্যাংক ব্যালান্স নেই, ফ্ল্যাট-বাড়ি-গাড়ি নেই, কিন্তু আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়ায় সামাজিকভাবে অনেক ভালো আছি। আলহামদুলিল্লাহ!


যাহোক, অভিযোগ পেয়ে ওসব সাংবাদিক ভাইকে জিজ্ঞেস করি, আপনারা কেন এসব করেন? জানেন এসব হারাম? আর হারাম খাওয়া মানে তো আপনার নিজের রক্তমাংসে হারাম ঢুকে যাওয়া। আর যদি এই টাকা আপনার স্ত্রী-সন্তানদের খাওয়ান তাহলে তো তারাও হারাম খেলো। আপনি কি চান আপনার আদরের সন্তানের রক্তমাংস হারাম দিয়ে তৈরি হোক?


এরপর ঘটে আজব ঘটনা। এক সাংবাদিক আরেক সাংবাদিকের নামে আমার কাছে বদনাম করে। বলে। আমি এসব করি না, অমুক অমুক করে ইত্যাদি।


২.


হ্যাঁ, এটা ঠিক যে আমাদের মতো অষ্টম বা নবম ওয়েজ বোর্ডের বেতন/মহার্ঘভাতা স্থানীয় সাংবাদিকগণ পায় না। তাদেরকে তেমন বেতনও দেয়া হয় না। আর উপজেলা লেভেলে যারা কাজ করেন তারা তো একটি কানাকড়িও পায় না। তাহলে তাদের সংসার চলবে কীভাবে?


এক বা দুইটি মিডিয়া থাকতে পারে যারা তাদের সম্মানী দেয় এবং সেটা বড়োজোর এক বা দুই হাজার টাকা। উপজেলা লেভেলে এই যে এতো সাংবাদিকের ছড়াছড়ি, তারা মূলত জেলা প্রতিনিধিদের সোর্স হিসেবে কাজ করে। এখন হাজার হাজার অনলাইন মিডিয়ার ছড়াছড়িতে ''সাংবাদিকের'' অভাব নেই। একটা সংবাদ কোনোরকমে বানিয়ে ই-মেইল করলেই সেটা ছাপা হয়ে যাচ্ছে অনলাইনে। আর এটা দেখিয়েও টাকা পয়সা আদায় করা যাচ্ছে। কিন্তু কেন?


জানলাম, তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে শ্রমিকরা একবার সংবাদ সম্মেলন করেছে। সাংবাদিকদের নাকি দেয়া হয়েছে মোট ২২ হাজার টাকা। অথচ মেইন স্ট্রিম মিডিয়ায় কোনো সংবাদ ছাপা হয়নি! সেলফোনের স্ক্রিনে অনলাইন পোর্টালের বিভিন্ন নিউজ নাকি দেখাচ্ছে আয়োজকদের! একবার ৫ জন সাংবাদিককে পাথর ব্যবসায়ী/আমাদানীকারকরা নাকি দিয়েছে ১০ হাজার টাকা। কিন্তু সাংবাদিকরা বলেছে, এই টাকা তারা নেবে না। এতো টাকা ইনকাম হয় অথচ সাংবাদিকদের জন্য মাত্র ১০ হাজার!


৩.
কেউ যদি ধান্ধাবাজীকে পুঁজি করেই মফস্বলে, বিশেষ করে আমাদের এলাকায়, সাংবাদিকতা করতে চান, তবে আজকেই এই পেশা ছেড়ে দিন। কেননা, আপনি শুধু নিজের বদনামই করছেন না বরং সাংবাদিকতার মতো মহৎ একটা পেশাকে কলংকিত করছেন। যদি বেতনই না-ই পাওয়া যাবে তবে কেন আপনি এই লাইনে থাকবেন? আপনাকে তো কেউ ধান্ধাবাজী করার লাইসেন্স দেয়নি। বরং এলাকায় পাথর ব্যবসা, চা বাগান, কৃষি/পশুখামার করলেও আপনি লাখ লাখ টাকা রোজগার করে স্বাবলম্বী হতে পারবেন। যারা ''সাংবাদিকতা''র লেবাস পরে আগে থেকেই ধান্ধাবাজী করে করে আসছে তাদের করুণ অবস্থা দেখুন। নিশ্চয় আপনিও সেই রকম হতে চান না। আপনার আছে বিশাল সম্ভাবনা, সেটাকে বরং কাজে লাগান। সময় থাকতে সরে আসুন অসৎ পথ থেকে। আপনার মূল্যবান সময় অন্য ভালো কাজে লাগান। দেরি হলেও সাফল্য একদিন আসবেই।


দূর্নীতিবাজ আমলা, ব্যবসায়ী, শ্রমিক যা-ই হোন না কেন, আপনারা সাংবাদিকদের কখনো আর ঘুষ দেবেন না। আপনি নিজেও আজ থেকে সৎ হয়ে যান। মনে রাখবেন, যাদেরকে টাকা বা ঘুষ দিচ্ছেন মানসম্মান রক্ষার জন্য, তারা কখনোই আপনাকে বাঁচাতে পারবে না।


আপনাদের জ্ঞাতার্থে এও জানাচ্ছি, মফস্বলের এ নামধারী সাংবাদিকরা কোনো নিউজ পাঠালেই সেটা ছাপা হয়ে যায় না। নিউজ ছাপানো হয় পত্রিকা অফিস থেকে। আর অফিসের দায়িত্বশীলরা বুঝেন, কোনটা ধান্ধাবাজীর নিউজ আর কোনটা সত্যিকারের নিউজ। সেভাবেই তারা নিউজ ট্রিটমেন্ট দেন।


তাই, অসৎ সাংবাদিকদের কথায় আর ভয় পাবেন না, তাদের কোনো টাকা দেবেন না। বরং এসব কথা বলে কেউ ধান্ধাবাজী করতে এলে আপনি তাকে বয়কট করুন। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট মিডিয়া অফিসের নাম্বার নিয়ে (নাম্বার দেয়া থাকে) কর্তৃপক্ষকে জানান। অথবা তাকে ধরে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করুন।


মনে রাখবেন, ধান্ধাবাজদের পক্ষে আমরা নেই, তাদের পক্ষে কখনোই লড়বো না।


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com