শিরোনাম
অনন্যসাধারণ শেখ হাসিনা
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:৩৬
অনন্যসাধারণ শেখ হাসিনা
উল্লাস চৌধুরী
উল্লাস চৌধুরী
প্রিন্ট অ-অ+

অনেকের মধ্যে যিনি অসাধারণ তিনিই অনন্যসাধারণ। জীবনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকালে আপন শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য বটে। জনসাধারণের কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে নিজের জীবন বা পারিবারিক জীবনযাত্রার স্বাভাবিকতা থাকে না বললেই চলে। এমনকি জীবননাশের হুমকিও তাড়া করে বেড়ায় অহর্নিশ। উপমহাদেশের রাজনীতিতে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্ এবং নিজ দলের আদর্শ ও মূলনীতি সমুন্নত রেখে, বিরোধী পক্ষের কট্টর বিরোধিতা সহ্য করে রাজনীতিতে সফলতার স্বর্ণশিখরে ওঠা চাট্টিখানি করা নয়।


বলছি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা। ছিলেন রাষ্ট্রপ্রধানের কন্যা, ছিলেন একজন প্রতিথযশা বিজ্ঞানীর স্ত্রী, চাইলেই যিনি কাটাতে পারতেন একটি নির্ঝঞ্চাট জীবন। কিন্তু, তাঁর শরীরে বইছে এমন এক নেতার লহুধারা, যে নেতা সমস্ত জীবন কাটিয়েছেন একটি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে, যে নেতা কারাগারের প্রকোষ্ঠে জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েও একচুল নড়েননি নিজের আদর্শ থেকে, জীবনের মায়া ত্যাগ করে এক তর্জনীর ইশারায় জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়ে এনে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার পরম আস্বাদ, সে নেতার কন্যা স্বাধীন জাতির ভাগ্যোন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে দেবেন - তা-ই বুঝি ছিল বিধাতার অমোঘ নির্দেশ।


১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালো রাতে মা, বাবা, ভাইসহ পরিবারের সকলকে হারিয়ে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা সারাজীবনের জন্য বয়ে বেড়ান মানবসভ্যতার ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের দগদগে স্মৃতি। শেখ হাসিনার সবচাইতে বড় পরিচয় হলো তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। পিতার জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে শৈশব থেকেই প্রত্যক্ষ করেছেন একজন নিবেদিতপ্রাণ রাজনৈতিক নেতার সংগ্রামী জীবনাচরণ, দেখেছেন একজন গৃহবধু কিভাবে আগলে রেখেছেন কারাগারে বন্দী স্বামীর দলীয় নেতা-কর্মীদের। তাই শেখ হাসিনা জীবনের শুরু থেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আর আপসহীন হয়ে বড় হয়েছেন। প্রবেশিকা পরীক্ষায় আইয়ুব খানের গুণবর্ণনা তার কলমের কালিতে দাগ কাটেনি, এমনই ছিল তাঁর দৃঢ়তা। সরাসরি ছাত্ররাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করে যুক্ত থেকেছেন বাঙালীর স্বাধিকার আন্দোলনের লড়াইয়ে।


১৯৭৫’র ট্রাজেডি যেন আমূল বদলে দেয় শেখ হাসিনাকে। বিদেশে ছিলেন বলে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন দুই বোন। তাদের দেশে ফিরতে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছিল খুনীদের পৃষ্ঠপোষকরা। স্বজন হারানোর অনলযন্ত্রনা বুকে নিয়ে দেশে ফিরলেন অর্ধযুগ পরে পিতার হাতে গড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে। নানা বিভক্তি আর বিশৃঙ্খলায় দলের অবস্থা তখন ভালো ছিল না। বাঙালী বধু তাঁর জীবনের সমস্ত সুখ বিসর্জন ছিলেন ঠিক পিতার আদলে। লড়ে গেলেন পিতার মতোই নীতি ও আদর্শে অটল, সৎ জীবনযাপন আর কর্মীবান্ধব নেত্রী হিসেবে। ৯০’র স্বৈরাচার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলেন সামনে থেকে। একুশ বছর পর আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হলো। এদেশের গরীব দুঃখী জনগণ দু'বেলা খেয়ে-পরে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখবে, দরিদ্রতার কষাঘাতমুক্ত হয়ে সমৃদ্ধির পথে এগোবে- এই তাঁর জীবনের লক্ষ্য।


লক্ষ্য অর্জনে বাধা হয়ে দাড়াল স্বাধীনতার পতাকা খামচে ধরা সেই পুরোনো শকুনরা, বার বার হত্যাচেষ্টায় লিপ্ত থাকা ডেভিলের দল বড় আঘাত হানল ২০০৪ সালে সে সময়কার বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলা করে। নেতাকর্মীরা অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিয়ে রক্ষা করল নিজেদের প্রাণের নেত্রীকে। শ্রবণশক্তিতে ব্যাপক আঘাতপ্রাপ্ত নেত্রী দারুণভাবে উজ্জীবিত হলেন পিতার কারাগারে বসে লেখা খাতাগুলো হাতে পেয়ে। যে লেখাগুলো ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ নামে প্রকাশিত হলে বঙ্গবন্ধুকে নতুনভাবে আবিষ্কার করল এ প্রজন্ম।


২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এলে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারী এদেশীয় কুলাঙ্গারদের বিচার করার পদক্ষেপ নিয়ে নেত্রী ইতিহাসের দায় হতে মুক্তি দিলেন জাতিকে। দুর্নীতি আর অরাজকতায় ভরা শাসনব্যবস্থায় এনে দিলেন ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া। বিরোধীপক্ষের বিদ্রূপ উপেক্ষা করে তাঁর সরকার বাংলাদেশকে পরিণত করেছে ডিজিটাল বাংলাদেশে। পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব এনে দেয়ার স্বপ্নকারিগর হিসেবে কাজ করছেন মাতার সহযোগী শক্তি হিসেবে।


প্রতিবেশী দেশ ভারত ভৌগোলিকভাবে এবং ঐতিহাসিকভাবে সমান গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের কাছে। স্বাধীনতার পরে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি দিয়ে যে কূটনীতির শুরু হয়েছিল সেই কূটনীতির বহু ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। ছিটমহল বিনিময়, সমুদ্রে নিজেদের ন্যায্য অঞ্চল বুঝে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে। অভিন্ন নদীগুলো ন্যায্য হিস্যা বুঝে নেওয়ার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছেন অবিরত।


শুধু ভারতমুখীতা নয় আন্তর্জাতিক রাজনীতির পাওয়ারহাউজগুলোর সাথে বাংলাদেশ সর্ম্পকের উন্নয়ন করেছে কূটনৈতিক বুদ্ধিমত্তার বলে। জাতির পিতার দেয়া কাঠামো 'সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়'কে সামনে রেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে সর্ম্পক মজবুত করছে বাংলাদেশ। গোটা বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে চেনে অর্থনৈতিক উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুযোগ কাজে লাগিয়ে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের সদ্ব্যবহার করে, বৈদেশিক বানিজ্যবান্ধব নীতি গ্রহণ করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার এখন ঈর্ষণীয়।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে চলেছেন। অবকাঠামোগত উন্নয়নে ‘ফার্স্ট ট্র্যাক’ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন হলে গোটা বাংলাদেশ বদলে যাবে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ চলছে নিজেদের অর্থায়নে। তৃতীয়বারের মতো দায়িত্ব পালনকালে আমরা আরো আত্মবিশ্বাসী আর উদ্যমী রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকা দেখছি বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছ থেকে।


নারীর ক্ষমতায়নে তাঁর খ্যাতি এখন পৃথিবীজুড়ে। জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন মুজিবকন্যাকে পুরস্কৃত করেছে তাঁর কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে। উন্নয়নের ধারাকে টেকসই করতে এবং সরকারব্যবস্থার সর্বক্ষেত্রে সুশাসনের ধারা অব্যাহত রাখতে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার।


প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা প্রশংসিত হয়েছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।


২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার স্বপ্ন নিয়ে তিনি কাজ করে চলেছেন পিতার মতোই আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে।


বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরে বাংলাদেশে উন্নতির স্বর্ণশিখরে উঠবে- এ প্রত্যাশা আমাদের সকলের। হে জননী, যতদিন তোমার হাতে দেশ, পথ হারাবে না আমার বাংলাদেশ।


লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


বিবার্তা/কামরুল/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com