শিরোনাম
তবুও চারদিকে ষড়যন্ত্রের গন্ধ কেন?
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২০:৪৮
তবুও চারদিকে ষড়যন্ত্রের গন্ধ কেন?
রিপন পোদ্দার
প্রিন্ট অ-অ+

আগামী ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই দেশের আনাচে-কানাচে, হাটে-বাজারে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, চায়ের আড্ডায় সর্বত্র আলোচনার বিষয়বস্তু হলো রাজনীতি। কারণ রাজনীতি বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুবই মুখরোচক বিষয়। তার সঙ্গে নতুন কিছু বা চমকপ্রদ বিষয়-আশয় থাকলে তা নিয়ে সংগত কারণেই মানুষের আগ্রহ বেড়ে যায়।


তাছাড়া জাতীয় নির্বাচন একেবারে দোরগোড়ায়। আমার মনে হয় বাংলাদেশের মত এত রাজনৈতিক সচেতন এবং বিশ্লেষক পৃথিবীর কোথাও নেই। জাপানের সংসদ নির্বাচনের আগের দিন আন্তর্জাতিক এক জরিপকারী সংস্থা তাদের ভোটারদের জিজ্ঞাসা করেছিলো তারা কোন প্রার্থীকে ভোট দেবে? অবাক করার বিষয় হলো নির্বাচনের ২৪ ঘন্টার কম সময়ের আগেও জাপানের ৫৪ শতাংশ ভোটার প্রার্থীদের নামই জানে না। কিন্তু বাংলাদেশের কথা চিন্তা করুন, মাথা ঘুরে যাবে।


যাই হোক, আমাদের আলোচনায় আসি। গত ১০ বছর দেশের শাসন ক্ষমতায় আসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট এবং প্রধানমন্ত্রী হিসাবে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বিগত প্রায় ১০ বছরে বাংলাদেশের এমন কোনো সেক্টর নাই, যেখানে কম-বেশি উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। উন্নয়নের কথা দেশে-বিদেশে স্বীকৃত। একথা কট্টর আওয়ামী লীগ বিরোধীও স্বীকার করবে। তাহলে নির্বাচনের পূর্বে পুনঃরায় নির্বাচিত হওয়া নিয়ে এত শংকা কেন? সংশয় থাকার অর্থ হলো শাসন ব্যবস্থার মধ্যে কোথাও ঘাপলা ছিল! কি সেই ঘাপলা? আসুন আলোচনার মাধ্যমে সেটা নিরুপনের চেষ্টা করি।


বাংলাদেশের মতো ছোট একটি দেশে জনসংখ্যা হলো প্রায় ১৭ কোটি এবং সেই জনগণ তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে সার্বক্ষণিক ব্যস্ত। তথাপিও জাতীয় নির্বাচন এলে দেশের জনগণ ২ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একভাগে থাকে স্বাধীনতার স্বপক্ষের প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক লোকেরা, যারা বৃহৎপরিসরে আওয়ামী লীগের ছাতার নিচে। অপরভাগে থাকে স্বাধীনতাবিরোধী, প্রতিক্রিয়াশীল, ধর্ম ব্যবসায়ীরা। যারা বৃহৎপরিসরে বিএনপি-জামায়াতের ছাতার নিচে অবস্থান করে।


জাতীয় নির্বাচন এলে এই ২ অংশের মধ্যে কোনো উন্নয়নের দৃষ্টান্ত, সুশাসন, অগ্রগতি, দুঃশাসন কোনো কিছুই বিবেচনার মধ্যে আসে না। শুধু বিবেচ্য বিষয় নৌকা বা ধানের শীষ। এই ২ অংশ ব্যতীত দেশে সুযোগ সন্ধানী একটি গোষ্ঠী আছে, যারা সুশীল সমাজ নামে পরিচিত। এদের কাজই হলো বিদেশে দেশের বদনাম করা এবং নামে-বেনামে এনজিও খুলে হাজার হাজার ডলার নিয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন এবং রাজকীয় জীবন যাপন ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা। এই অংশটিই সর্বদা ওঁৎপেতে থাকে অনির্বাচিত সরকারের জন্য। কারণ তাছাড়া কোনো নির্বাচনে তাদের বিজয়ী হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নাই। সেই অংশটির সাথে যুক্ত হয় দলছুট কিছু নেতা। তাদের নড়াচড়া বেড়ে যায় নির্বাচন এলে।


এর মধ্যে গত ২৮ আগস্ট একটি খবর বেরিয়েছে, যার বিস্তারিত পত্রিকায় ছাপা হয়েছে ২৯ আগস্ট। তাতে দেখা যায়, ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন একজোট হয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। ডা. চৌধুরীর সঙ্গে আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নাও রয়েছেন। এর মধ্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সরব উপস্থিতি দেখে অনেকেই মনে করছেন এই জোট শেষমেশ বিএনপির ‘বি’ টিম হবে। তাঁদের ট্র্যাক রেকর্ড সবার এক না হলেও কতগুলো বিষয় কমন। এরই মধ্যে সবাই রাজনীতিতে বহু ঘাটের পানি ঘোলা করেছেন। মূলস্রোতের রাজনৈতিক দুটি দল থেকে ছিটকে পড়েছেন এবং প্রত্যেকেই ব্যক্তিগতভাবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দারুণ খ্যাপা। নির্বাচন এলে জোট, পাতিজোট, লেজুড়জোট, ডামিজোট গঠনের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়, চমকপ্রদও নয়।


এক ব্যক্তি এক দল। এদেরও নির্বাচন এলে কদর বেড়ে যায়, যদি ক্যামেরার আলো একটু ঘনঘন পড়ে। মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে বাণিজ্যের বিষয়টিও চ্যানেলের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ রকম সুযোগ পেতে তাদের তেমন বেগ পেতে হয় না। জনগণ এদের বিপ্লবী কথাবার্তা উপভোগ করলেও সঠিক সময়ে চিনতে কখনো ভুল করে না। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ নোবেলজয়ী ড. ইউনূস, যিনি ২০০৭-২০০৮ সময়ে জরুরি আইনের ঠাণ্ডা-শীতল ছায়ার নিচে দাঁড়িয়ে রাজনীতিতে যখন নামলেন, তখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলো তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য সত্যিই চমকপ্রদ ছিল। কারণ রেকর্ড ঘেঁটে দেখা যায়, বিশ্বে এ পর্যন্ত যাঁরা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে রাজনীতিতে ট্র্যাক রেকর্ডহীন কেউই পুরস্কার পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় রাজনীতিতে নেমে পড়েননি, যেমনটি করেছেন ড. ইউনূস। তখন ড. ইউনূস বলেছিলেন, সারা দেশের ১৬ কোটি মানুষের কাছ থেকে ভীষণ সাড়া পাচ্ছেন, এবার তিনি বাংলাদেশ ঠিক করে ফেলবেন।


কিন্তু কয়েক দিন পর দেখা গেল তিনি আর নেই। কেন নেই, সে রহস্যের কথা আজও জানা যায়নি। গল্প সৃষ্টিতে অনবদ্য বাংলাদেশের গ্রাম-মহল্লার চায়ের দোকানের খবর, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ধন্য হওয়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশের ক্ষমতায় গণ্য হওয়ার প্রক্রিয়ায় নাকি ড. ইউনূসের মাথায় ছিল বৈশ্বিক পরাশক্তির অশেষ আশীর্বাদ।


উন্নয়নশীল দেশের এরকম মানুষের মাথার ওপর পরাশক্তি আশীর্বাদের হাত কেন রাখে তার বিস্তারিত বিবরণ যদি কেউ জানতে চান, তাহলে আমেরিকান লেখক জন পারকিনসের লেখা কনফেশনস অব অ্যান ইকোনমিক হিটম্যান গ্রন্থখানি তাঁরা পড়ে দেখতে পারেন। সেবার স্বল্প দিনের মধ্যে বাংলাদেশের সেয়ানা জনগণ ড. ইউনূস প্রজেক্টের গোপন রহস্য জেনে যাওয়ায় সব পণ্ড হয়ে যায় বলে চায়ের দোকানের গল্পের বরাতে জানা যায়। এবারও শোনা যাচ্ছে, আলোচ্য জোটের পেছনের শক্তি নাকি ড. ইউনূস। তিনি তাঁদের জন্য বিদেশি সংযোগ ও নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার কাজ করছেন। পরাশক্তির আশীর্বাদও নাকি তিনি জোগাড়ের চেষ্টায় আছেন।


আলোচ্য জোটের মধ্যে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ডাক্তার বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি দীর্ঘদিন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন, রাষ্ট্রের শীর্ষ পদেও ছিলেন। অন্যরাও বহুদিন রাজনীতিতে আছেন। কে কী করেছেন, কার কী অবদান সেই আমলনামা জনগণের সামনে রয়েছে। বাংলায় প্রবাদ আছে—বৃক্ষ তোমার নাম কী ফলে পরিচয়। ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী একজন সফল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এখন বয়োবৃদ্ধ। রাজনীতিতে শিখরে উঠেছিলেন। তারপর নিজের তৈরি দল ও শিষ্যদের দ্বারা চরমভাবে অপমানিত হয়েছেন।


ফ্রাংকেনস্টাইনরা সব সময় জনককেই গিলে খায়। তখন বি চৌধুরী বিএনপি সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘দুর্নীতি, সন্ত্রাস আর অপকর্মের কারণে কেউ আবার বিএনপিকে ভোট দিতে চাইলে তা হবে আত্মহত্যার শামিল। পাঁচ বছরে খালেদা জিয়া ও তাঁর পুত্র দেশটাকে শেষ করেছেন।


এখন আবার নতুন কী দেখে বিএনপির বারান্দায় ঘুরছেন বা বিএনপির ‘বি’ টিম হিসেবে মাঠে নামছেন, তা শুধু তিনিই জানেন। তবে আগের ট্র্যাক রেকর্ডের দিকে তাকালে কিছুটা অনুমান করা যায় কার শেকড় কোথায়। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চিন্তাচেতনা বলতে যা বোঝায় তার সব শব্দ, বাক্য ও অনুচ্ছেদ সামরিক আদেশ বলে যে সামরিক শাসক বাতিল করে দিলেন, তাঁরই একান্ত সহযোগী ও প্রধান পরামর্শক হওয়ার জন্য এগিয়ে গেলেন ডা. বি চৌধুরী। তিনি বিএনপির মহাসচিব, আর তখন বিএনপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী হলেন রাজাকার শিরোমণি শাহ আজিজুর রহমান এবং মন্ত্রী হলেন যুদ্ধাপরাধী আবদুল আলীম ও মাওলানা আবদুল মান্নান।


বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে এত বড় অপমানের মধ্যে ফেলার অংশীদারির দায় থেকে তিনি কিভাবে নিষ্কৃতি পাবেন। গোলাম আযম পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার আন্দোলন জারি রেখে যখন পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে এলেন, তখন তো তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। অশীতিপর বয়সে গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য মাঠে নেমেছেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান যখন গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধান থেকে বাতিল করে গণতন্ত্রের কবর রচনা করলেন, তখন নিশ্চুপ রইলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার অব্যবহিত পর বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার বাহিনী দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর যে সীমাহীন নির্যাতন, ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যা চালাল, সে সময় সিনিয়র মন্ত্রী ও দলের সিনিয়র নেতা হিসেবে এ দায় থেকে ডা. বি চৌধুরী কী করে মুক্তি পাবেন?


ড. কামাল হোসেন মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, চেতনা এবং বঙ্গবন্ধুর কথা সব সময় বলেন। এ কথাও সঠিক, তিনি বঙ্গবন্ধুর খুবই স্নেহভাজন ছিলেন। কিন্তু এত সব ভালো কথার সব কিছুই তো রহস্যে ঘেরা। সব সুযোগ থাকা সত্ত্বেও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কেন তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিলেন না, তা কেউ জানে না। তাঁর দুই সঙ্গী তাজউদ্দীন আহমদ ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ভারতে গেলেও তিনি গেলেন না। ওই সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানে কিভাবে গেলেন, ৯ মাস কোথায় ছিলেন সে সম্পর্কে নিজে কখনো খোলাসা করে কিছু বলেন না। ১৯৭৫ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যায় যে বৃহৎ ষড়যন্ত্র হয় তার মূল পরিকল্পনা হয় বিদেশের মাটিতে। কোন কোন রাষ্ট্র এর সঙ্গে জড়িত ছিল তা মানুষ তখন না জানলেও এখন তো সবাই জানে।


বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েও তার কিছুই জানলেন না। অথচ দেখা গেল বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র কয়েক দিন আগে তিনি বিদেশে চলে গেলেন। সব কিছুই আমরা কাকতালীয় বলে মেনে নিয়েছি। সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তদের রাজনৈতিক দলে স্থান দেয়া উচিত নয়, এ কথাটি তিনি প্রায়ই বলেন। অথচ নিজ দলের একনিষ্ঠ কর্মীকে হত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত পুরান ঢাকার এক নেতাকে তিনি তাঁর দলের মহাসচিব বানালেন। ২০০১ সালে নির্বাচনে জিতে বিএনপি-জামায়াতকে নিয়ে সরকার গঠন করে। আনন্দচিত্তে ড. কামাল হোসেন ওই সরকারকে স্বাগত জানালেন। এর প্রমাণ পাওয়া যায় যখন দেখা যায়, ওই বছর রোজার ইফতার অনুষ্ঠানের হেড টেবিলে যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর একেবারে পাশের চেয়ারে বসে আছেন ড. কামাল হোসেন। ড. কামাল হোসেন ও যুদ্ধাপরাধী নিজামী পাশাপাশি বসা।


জোটের আরেক নেতা আ স ম আবদুর রব ১৯৭১ সালের ২ মার্চ বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের কৃতিত্বে সমৃদ্ধ একজন মানুষ। এটাই তাঁর একমাত্র সম্বল। স্বাধীনতাপ্রাপ্তির উষালগ্নে, রাষ্ট্রের ভিত্তি শক্তিশালী হওয়ার আগেই জাসদ থেকে গণবাহিনী গঠন, থানা লুট, অস্ত্র লুট, পাটের গুদামে আগুন ইত্যাদির মাধ্যমে অরাজকতা, অস্থিরতা সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার পটভূমি তো জাসদই তৈরি করল। বাংলাদেশের উত্থান-পতনের রাজনীতির দর্শক মাত্রেই জানেন, ওই সময়ে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে জাসদের উগ্রপন্থার ধ্বংসাত্মক রাজনীতিই বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং দীর্ঘ সামরিক স্বৈরশাসনের ক্ষেত্র তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।


মাহমুদুর রহমান মান্না বহু ঘাটের জল মাড়িয়ে এখন সদ্য ঘোষিত জোটের অন্যতম নেতা। আওয়ামী লীগের মতো দল থেকে দুইবার নমিনেশন পেয়েও কিছু করতে পারেননি। ব্যর্থ ও পরাজিত হয়েছেন, মানুষের গ্রহণযোগ্যতা পাননি। সবাই জানে, ২০০৭-২০০৮ সময়ের জরুরি আইনের সেই সরকার বিরাজনৈতিকীকরণের মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। শোনা যায়, ওই বিরাজনৈতিকীকরণের প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িত থাকায় মান্না আওয়ামী লীগ থেকে ছিটকে পড়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলে দিয়ে এবং সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে বর্তমান সরকারকে উৎখাত করার কথোপকথনের কিছু টেপ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায় এবং সেই অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না কয়েক মাস জেলেও ছিলেন।


জোটভুক্ত প্রত্যেকের রাজনৈতিক লিগেসি ও রেকর্ড পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট বোঝা যায়, জনগণের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক নেই, সংযোগ, সমর্থন কোনোটাই নেই। তাই নির্বাচনের আর মাত্র ৩ মাস বাকি, এর মধ্যে সব গুছিয়ে একেবারে বাজিমাত করে ফেলবেন এমনটা বোধ হয় শিশু ও পাগলেও বিশ্বাস করে না। তাঁদের হয় বিএনপির পলাতক নেতা তারেক রহমানের লেজুড়বৃত্তি করতে হবে, আর নয়তো ক্ষমতার সিঁড়ি খোঁজার জন্য অন্ধকার গলিতে হাঁটতে হবে। ঢাকা শহরের অলিগলিতে কান পাতলেই আজকাল বহু রকমের আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়।


এরমধ্যে ২৯আগস্ট একটি প্রধান পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো, ‘সিঙ্গাপুরে বিএনপি-আইএসআই (পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা) সরকার হটানোর ষড়যন্ত্রে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা।’ দুই-তিন দিন আগে বিশাল এক বেনামি প্রচারপত্র আমার এক পরিচিত ব্যক্তির হাতে এসেছে।


তিনি জানালেন তাতে প্রচারকচক্র আহ্বান জানাচ্ছে এই বলে যে, ‘রাজনীতিবিদরা দেশকে ধ্বংস করে ফেলেছে, এখনই জাতীয় সরকার গঠন করা উচিত।’ অর্থাৎ ১/১১-এর পদধ্বনি। সরকারের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে সমন্বিতভাবে কত বিশাল আকারে প্রপাগান্ডা শুরু হয়েছে, তার নমুনা পাওয়া গেছে চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়, যা এখনো অব্যাহত আছে। সরকার উৎখাতের উসকানিদাতাদের মধ্যে একজনের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্ব থেকে তাঁর পক্ষে বিবৃতি আদায়ের হিড়িক দেখলেই বোঝা যায়, তাঁদের প্রপাগান্ডা নেটওয়ার্ক কত শক্তিশালী। এর বিপরীতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রপাগান্ডা ও কাউন্টার প্রপাগান্ডার কিছু চোখে পড়ছে না। এই দায়িত্বে যাঁরা আছেন তাঁদের মনে কী আছে তা-ই বা বলি কী করে। সুতরাং চারদিকে শুধুই ষড়যন্ত্রের গন্ধ।


২০০১ সালের নির্বাচনের আগে আমি ঢাবির ছাত্র হিসাবে জগন্নাথ হলে থাকতাম এবং ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসাবে নিয়মিত মিছিল-মিটিং করতাম। তখন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন বাহাদুর বেপারী এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অজয় কর খোকন। নির্বাচনের পূর্বে নেতাদের মুখে শুনতাম আওয়ামী লীগ কমপক্ষে ১৮০ আসন পাবে এবং সরকার গঠন করবে। তাই চার দিকে সকল নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছিল আত্মতৃপ্তির ছাপ। কিন্তু নির্বাচনের পর কী হয়েছিল তা তো সকলেই জানেন। এবারের অবস্থাও সেই সময়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ অর্থাৎ নেতাদের মধ্যে আত্মতৃপ্তির ছাপ এবং তাদের আচার-আচরণে মনে হচ্ছে পুনরায় সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র।


আত্মবিশ্বাস ভালো; কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস অনেক সময় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আওয়ামী লীগের সকল স্তরে যেরুপ চাওয়া-পাওয়া হিসাব নিয়ে জটিলতা রয়েছে তা নির্বাচনের পূর্বে সমাধান করতে না পারলে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া কঠিন হবে। কারণ দেশের জনগণ উন্নয়ন দেখে ভোট দেয় না। ভোট দেয় নৌকা বা ধানের শীষকে। এবং সেই ভোট আনতে হয় ত্যাগী কর্মীদের শ্রমের মাধ্যমে। অতএব সাধু সাবধান।


লেখক : রাজনীতিক


বিবার্তা/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com