শিরোনাম
ইসলামের জিহাদ, শিবিরের জিহাদ
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০১৮, ১৭:১৫
ইসলামের জিহাদ, শিবিরের জিহাদ
আসিফ তালুকদার
প্রিন্ট অ-অ+

প্রতিটা মানুষ নিজস্ব সত্তায় বিকশিত। সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেকটি মানুষকে নিজস্ব বুদ্ধি-বিবেক দান করেছেন, যার সাহায্যে একজন সচেতন মানুষ বুঝতে পারে কী তার করা উচিৎ আর বৃহৎ স্বার্থে কী ত্যাগ করা উচিৎ।


বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের আবেগের একটি স্বীকৃত স্থান হলো স্বাধীনতা যুদ্ধ। বাঙালি যখন ব্যস্ত বুকের তাজা রক্তের বদলে তার মাতৃভূমি শত্রুমুক্ত করতে ঠিক তখনই জামাতে ইসলামী নামের দলটি ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পাকিস্তানিদের সান্নিধ্য পেয়েছিল। স্বকীয়তা ভুলে তারা সাহায্য করেছিল পাক সেনাদের, যার বলি লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষ এবং মা-বো্নের সম্ভ্রম।


বাঙালির ইতিহাসে এ বেঈমানদের রাজাকার বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের উত্তরসূরী শিবির হলো বর্তমান বাংলার বুকে মূর্তিমান আতঙ্ক। জন্মগতভাবে কেউ জামাতিদের রক্ত বহন করে শিবির হয়ে ওঠে, আবার কেউ সঙ্গ দোষে বা জ্ঞানের অভাবে এমনকি লোভে পড়ে শিবির হয়।


এমন উদাহরণ খুব কম নয় যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, কিন্তু পরিবারের অজান্তে সে শিবিরের কব্জায়।


কিন্তু একটি ছেলে কেন শিবির করে ?


এর পেছনে দুটি কারণ বিদ্যমান। প্রথমত হলো অর্থ লোভ বা অভাব মেটানোর আশায় ( যেমন টিউশনি , শিবির নিয়ন্ত্রিত কোচিংয়ে শিক্ষকতা করার সুযোগ) এবং দ্বিতীয়ত, ইসলামের ভুল ব্যাখ্যায় বিভ্রান্ত হয়ে।


প্রথম ক্ষেত্রে যা ঘটে, শিবিরচক্র এমন শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে, যারা সাধারণত তুলনামূলক অসচ্ছল পরিবার থেকে আসে। তাছাড়া জামাতী পরিবারের সন্তান জন্মগতভাবে শিবির হয়ে থাকে, যার ফলে শিবিরের টার্গেট এখন আওয়ামী পরিবারের দিকে বা এমন পরিবারের দিকে, যাদের সাধারণত কোনো পারিবারিক রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই। এভাবে শিবিরের বিস্তৃতি ছড়িয়ে পড়ে জামাতী পরিবারের বাইরেও।


দ্বিতীয়ত, ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে শিবির করলেই জান্নাত নিশ্চিত। যেহেতু ইসলামের মূল লক্ষ্য হলো জান্নাত লাভ, সেহেতু ইসলামের এই ভুল ব্যাখ্যায় বিভ্রান্ত হয়ে সাধারণ ছেলেরা শিবির কর্মী বনে যায় এবং নানা ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। এমনকি মানুষ হত্যা করতেও পিছপা হয় না।


এ প্রসঙ্গে এটা বলাই বাহুল্য যে, ইসলাম কখনো কোনো ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম সমর্থন করেনি। তা-ই যদি হতো তাহলে মহানবী (স) কাফেরদের শত নির্যাতন সহ্য করেও কাফেরদের দুয়ারে বার বার ইসলামের দাওয়াত নিয়ে যেতেন না। উদাহরণ হিসেবে তায়েফে মহানবী (স)-এর ইসলাম প্রচারের ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। তায়েফে মহানবী (স) ইসলামের দাওয়াত নিয়ে যান। কাফেররা দাওয়াত তো গ্রহণ করলোই না বরং আমাদের প্রিয় নবীকে এমনভাবে পাথর নিক্ষেপ করলো যে তাঁর রক্ত জমাট বেঁধে জুতা আটকে গেল। এ ঘটনা দেখে জীব্রাঈল (আ) এলেন এবং নবীর কাছে অনুমতি চাইলেন দুই পাহাড় চেপে এনে তায়েফবাসীকে পিষে মেরে ফেলার জন্য। মহানবী (স) তাকে বললেন যে তুমি যদি এদের মেরে ফেলো তাহলে আমি ইসলাম প্রচার করবো কাদের কাছে?


এ-ই হলো ইসলামের মহানুভবতা।


এ কথা প্রমাণিত যে যদি আল্লাহর রসূল চাইতেন তাহলে কোনো কষ্ট ছাড়াই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব ছিল। আল্লাহর রসূল ততোক্ষণ জিহাদ করতেন না যতোক্ষণ না ইসলামকে একদম নিঃশেষ করে দেয়ার জন্য কাফেররা তৎপর হতো। আর আজ শিবির ব্যস্ত কথায় কথায় ''জিহাদ'' করতে। দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে কিংবা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিবিরে রূপান্তরিত করে তাদের হাতে চাপাতি, পেট্রোল বোমা ধরিয়ে দেয়া হয়। ফলে তাদের হাতে ঝলসে মরে নারী, শিশু, বৃদ্ধ, যুবক এবং এই সংঘাতে যদি সেই শিবিরকর্মী মারা যায় তাহলে সে হয়ে যায় ''শহীদ''। কী অদ্ভুত ব্যাখ্যা!


কে তাদের বোঝাবে যে, সাধারণ মানুষ মেরে জিহাদ হয় না, যেখানে মানুষ হত্যা করা ইসলামের দৃষ্টিতে মহাপাপ বলে স্বীকৃত। জিহাদের অন্য অনেক পথ আছে - সত্য কথা বলা মিথ্যার বিরুদ্ধে জিহাদ, সততার জিহাদ অসততার বিরুদ্ধে, ভালো কাজ খারাপের বিরুদ্ধে জিহাদ, মানুষ বাঁচানো হত্যার বিরুদ্ধে জিহাদ।


মনে রাখা উচিৎ যে, আল্লাহ জান্নাত শিবিরের জন্য তৈরী করেননি, তৈরী করেছেন মুসলমান এবং সত্যিকারের মুমিনদের জন্য। অতিরিক্ত আবেগ ইসলাম থেকে আপনাকে আলোকবর্ষ দূরে নিয়ে যেতে পারে চোখের পলকে। নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ করা হয়েছে , এখন যদি আপনি অতি আবেগতাড়িত হয়ে দশ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ পড়েন তাহলে আপনি ইসলাম বিকৃত করছেন এবং এ দায়ভার ইসলামের নয়, একান্ত আপনার।


লেখক : সাধারণ সম্পাদক, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com