শিরোনাম
ক্রসফায়ার করে মাদক নির্মূল হবে না
প্রকাশ : ০৪ জুন ২০১৮, ১৯:২৬
ক্রসফায়ার করে মাদক নির্মূল হবে না
এম আই কে রাশিদুল ইসলাম রাশেদ
প্রিন্ট অ-অ+

প্রথমেই বলে রাখি, সর্বগ্রাসী মাদক সমস্যা নির্মূলে ক্রসফায়ার একটি অসহায় অাচরণ বৈ আর কিছু নয়। আজ অবধি ক্রসফায়ার দিয়ে কোনো সিস্টেম ডেভলেপ করা যায়নি, হয়তো ভবিষ্যতে যাবেও না। মানুষ চিরকাল চরিত্রগতভাবে তার পুর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে চায়। তাই সিস্টেম ডেভলেপ করতে হবে এবং তা করতে হলে প্রয়োজন প্রক্রিয়াজাত অবস্থার পরিবর্তন করা।


যেমন, দেশে গত দশ বছর ধরে সব ধরণের পরীক্ষায় প্রশ্ন আউট হয়েছে এবং মহামারির মতো হয়েছে। কিন্তু এবার হয়নি, এবার হয়নি বলে প্রশ্ন আউটের মহামারিও একেবারে বন্ধ (বিশেষত ২০১৮ সালের উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষাতে প্রশ্ন আউটের ভ প্রমাণ মেলেনি)। এজন্য কিন্তু কাউকে ক্রসফায়ার দেয়া লাগেনি, শুধু প্রক্রিয়াগত বিষয়গুলো রোধ করা হয়েছে বলে তা সম্ভব হয়েছে। গ্রামদেশে প্রচলিত একটি গল্প এরকম - প্রতিদিন যদি কারো শস্যক্ষেত ছাগলে খায়, তাহলে প্রতিদিন দৌঁড়িয়ে ছাগল ধরে খোয়াড়ে নেয়ার পরিবর্তে ক্ষেতে বেড়া দেয়াি উত্তম। বেড়া থাকলে ছাগল আর শস্যক্ষেতে ঢুকতে পারবে না। তখন আর কৃষককেও ছাগলকে তাড়াতে অযথা পরিশ্রম করা লাগে না। ফলে শস্য ভালো থাকে , ছাগল ক্ষেত খেতে পারে না, কৃষকের অযথা পরিশ্রম করতে হয় না।


অনেকেই মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাতে লাভের লাভ যেটা হয়, সেটা হলো ফলাফল শূণ্য। ওই সিস্টেমে সমস্যার যেটা মূল, সেটা থেকেই যায়। বর্তমানের বহুল আলোচিত বিষয় হলো রাষ্ট্রের মাদকবিরোধী অভিযান। এটা ওপেন সিক্রেট যে, এই মাদক সিস্টেমের সাথে আর্থিক লাভের প্রক্রিয়াতে পুলিশ, বর্ডারগার্ড, কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য সরাসরি জড়িত। সেখানে ক্রসফায়ারে কিছু মাদকব্যবসায়ী হত্যা খুচরা খরচ মাত্র। আর খুচরা কাজের হিসেব কখনো পাইকারির হিসেবের মতো মিলিয়ে চলে না। তাই মাদকের এই পুরো পাইকারি সিস্টেমকে বন্ধ করতে হবে। নতুবা কোনো সফলতা আসবে না।


এজন্য বলা যায়, ক্রসফায়ার নামক নাটক সাময়িক সফলতার নামান্তর হতে পারে, এর বেশি কিছু নয়। এই ক্রসফায়ারের ''সফলতা'' সাদা চোখে সাময়িক দেখা গেলেও অাখেরে কিছুই লাভ হবে না। আবার এমন জনশ্রুতিও রয়েছে যে, টাকার বিনিময়ে নিরপরাধ মানুষকে ক্রসফায়ারে দেয়া হয়। নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডার হয়েছিলো, যেটাকে কন্ট্রাক্ট কিলিং হিসেবে অভিহিত করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে ইতিমধ্যে। মাদকবিরোধী অভিযানেও ইতিমধ্যে কিছু কিছু জায়গায় এমন হত্যার অভিযোগ অলরেডি উঠেছে। তাই এই পুরো প্রক্রিয়ায় হাজার না লাখো ক্রসফায়ারেও কোনো সুফল হবে না বলে আমি মনে করি। বরং অপরাধীদের পাশাপাশি অযথা কিছু নিরপরাধ মানুষের প্রাণ যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এভাবে নিরপরাধ মানুষের প্রাণ হরণ হলে রাষ্ট্র স্বয়ং অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হয়।


তাই বলতে চাচ্ছি, সেজন্যে এই পুরো প্রক্রিয়াকে যেভাবে নিয়ন্ত্রণে এনে বন্ধ করা যায়, সেটা আগে করতে হবে। আর সেটার জন্য সবার আগে মাদকের উৎপাদন, আমদানী ও সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। এমনকি মনস্তাত্ত্বিকভাবে মাদক দুর্নীতিকে বন্ধ করতে হবে। এজন্যে বিশেষ করে রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে মাদক দুর্নীতিগ্রস্ত হতে বিরত থাকতে হবে। তারপর মাদক গ্রহণকারী-গ্রহণকারিণীকে শাস্তি ও মনোচিকিৎসা দিয়ে এই অসুস্থতাকে সুস্থ প্রক্রিয়াতে আনতে হবে এবং প্রতিরোধ করতে হবে। নতুবা ভবিষ্যতের হতাশাগ্রস্ত তরুণসমাজে গাঁজা, ইয়াবা আর ফেনসিডিল দমনের ফাঁকে কোকেন এবং ক্রিস্টাল ম্যাথের সরবরাহ ও বাজারজাত হবে হয়তো।


এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের মাদকবিরোধী অভিযানের ফলাফল নষ্ট হওয়ার আগেই সরকারকে খুব করে ভাবতে হবে, যেন হিতে বিপরীত না হয়। কেননা সাধারণ মাদকরসে আসক্ত গ্রহণকারী থেকে মাদকব্যবসায়ীরা অনেক শক্তিশালী এবং এই মাদকব্যবসা একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা বটে। এ মাদকব্যবসার চক্র অনেক শক্তিশালী। তাই মাদকব্যবসায়ীরা এই মাদকবিরোধী অভিযানকে বুমেরাং করতে প্রস্তুত। সুতরাং রাষ্ট্রকে মাদকমুক্ত করতে সরকারের প্রচেষ্টাকে আরো চতুর্মুখী করতে হবে। নতুবা কৃষাণের সেই প্রতিদিন ছাগল তাড়িয়ে ধরার মতো অবস্থা হবে। কতবার ছাগল খোয়াড়ে নিবেন!


লেখক: সদস্য, বন ও পরিবেশ উপ-কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com