শিরোনাম
স্বাধীনতাবিরোধীদের অনুপ্রবেশ এবং বিভ্রান্ত ছাত্রলীগ
প্রকাশ : ১৫ মে ২০১৮, ১৮:২১
স্বাধীনতাবিরোধীদের অনুপ্রবেশ এবং বিভ্রান্ত ছাত্রলীগ
এফ এম শাহীন
প্রিন্ট অ-অ+

প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগে পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদল-ছাত্র শিবিরকে অনুপ্রবেশ করানো হয়েছে। বিগত কয়েকটি কমিটিতে নজর দিলে তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উপর নজর রাখলে। সাংগঠনিক চর্চা কিংবা কার্যক্রম বাদ দিয়ে তারা মনোযোগী ছিল ব্যবসায়-বাণিজ্যে, গ্রুপিং-লবিংয়ে। অর্থের বিনিময়ে পদ-পদবী বিক্রি করা ছিল নজিরবিহীন। বাঙালী সংস্কৃতি চর্চা– মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিজেদের বিকশিত করার অভাব যে প্রকট সেটি সর্বশেষ দেখতে পায় কোটাবিরোধী আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণে। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, অনুপ্রবেশকারীদের হাতে বর্তমান ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ।


স্বাধীনতাবিরোধী জামাত-শিবির ছদ্মবেশে তারা স্থান করে নিয়েছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ তারপর আওয়ামী লীগে। তার বড় কারণ তারা জানে, লালন-হাছন, রবীনন্দ্রনাথ-নজরুলের দেশে তারা সুবিধা করতে পারবে না। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে ভেজা মাটিতে তাদের মওদুদীবাদ এই দেশে প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। বাঙালীর হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু যেভাবে গেঁথে আছে তাতে কোনোভাবেই সুবিধা করতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তাদের কাছে পাহাড় সমান বাঁধার মত। তারা বুঝে গিয়েছে ধর্মকে আশ্রয় করে খুব বেশি দূর যাওয়া ভীষণ কঠিন।


তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ঠেকাতে হলে ভেতরে প্রবেশ জরুরী এবং একমাত্র পথ। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ,আওয়ামী লীগকে ঠেকানোর বড় উপায় হলো ভেতরে থেকে এই সংগঠনকে বিতর্কিত প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলা। বাংলাদেশকে থামাতে একমাত্র উপায় হল এই সকল সংগঠনকে বিভ্রান্ত করা। সুকৌশলে ছদ্মবেশ ধারণ করে লোভী আদর্শহীন আওয়ামী নেতাদের টাকা, সম্পদ এবং নারী সরবরাহ করে তাদের লক্ষ্য অর্জনে এগিয়েছে তারা।


এই দেশের বুদ্ধিজীবীরা যে টাকার গোলাম সেটি তারা প্রমাণ করেছে বহুবার। একটি মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানাতে মরিয়া ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এর পর থেকে। ত্রিশলাখ শহীদের স্বপ্নকে এক কালো অন্ধকার রাতে থামিয়ে দেয়া হয়েছিল। এককথায় থামিয়ে দেয়া হয়েছিল বাঙালীর অগ্রযাত্রাকে। ইতিহাসকে বিকৃত করে কয়েকটা বিভ্রান্ত প্রজন্ম তৈরি করে দলের কর্মী সংখ্যা বাড়িয়েছে তারা।


সত্য বলতে সফলতার কাছাকাছি তারা। এই দেশের শিক্ষিত সমাজের বড় অংশের মস্তিষ্কে মৌলবাদের বীজ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। লোভ আর মোহে তারা আমিত্বে মশগুল। এই শ্রেণির কাছে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ, মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম বলতে কিছু নেই। নিজের চাওয়া-পাওয়া ভাল থাকা নিজেদের ভাল রাখায় মহাব্যস্ত। এই সুবিধাভোগী শ্রেণির কাছে তাদের পরিবারের সুরক্ষাই প্রধান কর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছে।


তবে রাষ্ট্রকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিনির্মাণ করতে হলে যে সব সংগঠনের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল, বাঙালীরা বিশ্বমানচিত্রে একেছিল লালসবুজের বাংলাদেশ, সেই সকল সংগঠনকে আদর্শিক কর্মীদের হাতে তুলে দিতে হবে। এর বিকল্প হলে এক বিভ্রান্ত সমাজ আর নীতিহীন রাষ্ট্র বানাতে দায় নিতে হবে সকলের।


বিশ্বাস করি, শতভাগ সফল তারা হয়নি তার বড় কারণ এই দেশের কৃষক, শ্রমিক জেলে মজুর শতভাগ অসাম্প্রদায়িক হওয়ার ফলে। মনে করি, এই দেশের অগণিত নদনদীর পলিমাটিতে বেড়ে ওঠা মানুষ আর বাঙালীর হাজার বছরের প্রবাহমান সংস্কৃতি উগ্রবাদকে আশ্রয় দিবে না। এই দেশের মানুষ বিশ্বাস করে ধর্মকে আশ্রয় করে যারা এসেছে তাদের কাছে সবাই ভন্ড ধর্মব্যবসায়ী ছাড়া অন্যকিছু নয়।


লেখক : সাংবাদিক ও এক্টিভিস্ট


বিবার্তা/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com