শিরোনাম
‘সব সুতার নাটাই তারেকের হাতে’
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০১৮, ২২:৫১
‘সব সুতার নাটাই তারেকের হাতে’
আল আমিন বাবু
প্রিন্ট অ-অ+

অনেকটা সময় ধরে অনুসন্ধানী চোখে খেয়াল করলাম বিভিন্ন সংবাদ, সংবাদপত্রের প্রতিক্রিয়া, রাজনৈতিক, প্রগতিশীল, প্রতিক্রিয়াশীল মানুষদের প্রতিক্রিয়া। দেখলাম বুদ্ধিবেশ্যা একদল সুশীলের প্রতিক্রিয়া এবং জঙ্গিবান্ধব বাঙালিদের প্রতিক্রিয়া।


বলছিলাম বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ লেখক ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা পরবর্তী অস্থার কথা। যদিও এ হামলা শুধুই জাফর ইকবাল স্যারের ওপর হামলা নয়। এটা গোটা জাতির ধর্মনিরপেক্ষ বিবেকের ওপর হামলা। এ হামলা বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যার গ্রাউন্ডওয়ার্কের একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া মাত্র।


এরপর সিরিয়ালে আছেন সাংবাদিক আবেদ খান, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, কামাল পাশাসহ আরো অনেকেই। না। এখানেই শেষ নয়। এরপর বিদেশি নাগরিক হত্যা। কূটনীতিক হত্যা। ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের হত্যা- এমনকি আর্টিজানের মতো আরো আর্টিজান ঘটলেও অবাক হবো না। তবে মূল টার্গেট শেখ হাসিনা। তেড়ে আসছেন তো আমার দিকে। শেখ হাসিনার দলকানার তকমা আমার গলায় ঝুলাতে? সে যাই বলুন না কেন, আমি আমার কথাই বলবো। আজ পর্যন্ত যা বলেছি তার সবটাই যে ভুল হয়েছে তাও কিন্তু নয়।


জানতে চান ? তাহলে সময় নিয়ে পড়তে হবে, কারণ এটি নিছক কোনো লেখা নয়। এখানে এমন কিছু অনুসন্ধানের জানালা উন্মোচন করার চেষ্টা করবো যা থেকে আপনারাই আপনাদের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মিলিয়ে নিতে পারবেন।


প্রথমেই কিছু প্রতিক্রিয়ার ভাষা তুলে ধরছি-


ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারীর পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। তার নাম ফয়জুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে কুমারগাঁওয়ের বাসিন্দা ওই যুবক মাদ্রাসার ছাত্র। আবার শুনেছি তারা কয়েক মাস আগে সপরিবারে কুমারগাঁওয়ে বসবাস শুরু করেছে। তাহলে কি ফয়জুর তার মিশন সফল করতেই এখানে এসেছিলো?


ড. জাফর ইকবাল পুলিশ প্রহরায় ছিলেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রই নয়, সে কী করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিল? ড. জাফর ইকবাল তার বিভাগেরই ওই অনুষ্ঠানের মঞ্চে বসা ছিলেন। আক্রমণকারী মঞ্চে তারই পেছনে দাঁড়িয়ে মাথায় আঘাত করে। কীভাবে সম্ভব?


ড. জাফর ইকবালের মঞ্চে যারা উঠেছে কেন তাদের তল্লাশি করা হয়নি? অন্য বিভাগের ছাত্রদের তো তার মঞ্চে ওঠার কথা নয়! যেহেতু তিনি বেশ কয়েকবার হত্যার হুমকি পেয়েছেন এবং পুলিশ প্রহরায় চলাফেরা করছেন, হামলাকারী তার এত কাছাকাছি এসে কী করে আঘাত করতে পারে?


এ ব্যাপারে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেছেন, এই হামলা কারা করেছে এরইমধ্যে আমরা তা জেনেছি। ওই জঙ্গিবাদ, জামায়াত শিবিরের প্রেতাত্মারাই করেছে। এছাড়া এই হামলায় যারা প্ররোচিত করেছে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।


ইমরান এইচ সরকার বরাবরের মতো এবারো সরকারের দিকেই তার আঙ্গুল তাক করে বলেন, ড. জাফর ইকবালের মত মানুষের ওপরও আজকে হামলা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে যখন হামলাগুলো অব্যাহত ছিল, তখন আমরা দেখেছি কিভাবে সেগুলোকে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে।


আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এই হামলা চক্রান্ত, এটা সত্য। চক্রান্ত তাদের, যাদের বিএনপি পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। কে ঘটনা ঘটিয়েছে, কারা কারা তাকে দিয়ে ঘটনা ঘটিয়েছে, এই বিষয়টি ইতোমধ্যে পরিষ্কার। এই বিষয় নিয়ে একথা-সেকথা বলে বিভ্রান্তি যারা সৃষ্টি করে, তারা আজকে দেশের স্বার্থের পক্ষে কাজ করছে না।


বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যারা এই ঘটনাগুলো ঘটায়, এরাতো ধর্মান্ধ হয়ে গেছে। তারা মনে করে একটা মানুষ খুন করলেই বুঝি তারা বেহেস্তে চলে যাবে। তারা কোনোদিন বেহেস্তে যাবে না, তারা দোযখের আগুনে পুড়বে। কারণ, নিরীহ মানুষকে হত্যা করে কেউ বেহেস্তে যেতে পারে না।


এবার আসুন আমরা কিছু ঘটনা মিলিয়ে দেখি। গোটা দেশ খুব উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিল যে, খালেদা জিয়াকে জেল দিলে সারাদেশে কী হবে? সত্যি এ প্রশ্ন আমার মাঝেও এসেছিলো। কারণ তারমতো বদমেজাজি অহংকারী চরিত্রের মানুষ যিনি কখনোই কোনো কোর্টকাচারি থোড়াই পাত্তা দিয়েছেন। তার নিজস্ব ইচ্ছা ছাড়া তাকে ধরে বেঁধে জেলে নেয়া যাবে না। তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়ালো? নিশ্চয় তিনি এমন কোথাও থেকে এমন কোনো ইঙ্গিত পেয়েছেন যে কারণে তিনি নিজেই বাড়ি থেকে কাপড় গুছিয়ে নিয়ে সবাইকে সান্ত্বনা দিয়ে জেলে ঢুকে গেলেন। না। মিললো না। এটা বেগম জিয়ার চরিত্রের সাথে একদম যাচ্ছে না।


আমেরিকা-ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকরা বারবার উপদেশ দেয়া সত্ত্বেও বিএনপি ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়াকেই তাদের পরবর্তী নেতৃত্বে চাচ্ছে। কেন? এখানে অনুপস্থিত থেকেও তিনি সুদূর লন্ডনে বসে তালেবান জঙ্গি স্টাইলে যা নির্দেশ দিচ্ছেন এখানকার তার পিতৃতুল্য নেতারা অপমানিত চেহারা নিয়ে বেড়ালের মতো মিঁউ মিঁউ করে মনে হয় অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাই মেনে নিচ্ছেন। অথচ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাঠে কিন্ত ওই সব নেতারাই সম্মুখ লাইনে দাঁড়ানো। কারণ কী? তারা কি তারেক জিয়ার বাধ্যগত? তাদের রাজনৈতিক মেধা কি তারেক জিয়ার নখাগ্রের চাইতেও কম? উত্তর না।


তারা তারেক জিয়াকে ভয় করেন। তারা বিএনপির ভেতরে থেকেও তারেক জিয়ার হাতে ভীষণ অনিরাপদ। কেন অনিরাপদ? চলুন এবার আমরা এফবিআইয়ের রিপোর্ট গুলো পড়ি। যারা তারেক জিয়া সম্পর্কে সতর্ক করেছেন লন্ডনের স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের গোয়েন্দা বিভাগকে। চলুন, তারা তারেক জিয়া সম্বন্ধে যা বলেছে সেদিকে একটু চোখ রাখি।


মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই যুক্তরাজ্যের কাছে পাঠানো এক গোপন বার্তায় তারেক জিয়াকে উগ্রবাদী জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষক এবং মদদদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে তাকে সর্বোচ্চ নজরদারিতে রাখার জন্য যুক্তরাজ্যকে পরামর্শ দিয়েছে। এফবিআই বলেছে, এই ব্যক্তিটি যুক্তরাজ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এফবিআই এও পূর্বাভাস দিয়েছে যে, তারেক জিয়া আগামী ৬ মাসের মধ্যে বাংলাদেশে বড় ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করেছে। এই পরিকল্পনার কিছু নমুনাও এফবিআই যুক্তরাজ্যকে দিয়েছে।


এফবিআই তার গোপন বার্তায় বলেছে, বিএনপির নেতৃবৃন্দকেও রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে তাকে বাদ দেয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করার পরও তারা শোনেনি। ২০০৭ সালে আর রাজনীতি করবেন না, এই মুচলেকা দিয়েই তিনি দেশত্যাগের অনুমতি পান। কিন্তু কার্যত তিনিই এখন বিএনপির মূলনেতা। বিএনপি তাকে বাদ দিয়ে কোনো রাজনৈতিক পরিকল্পনার কথা চিন্তাও করতে পারে না। সমস্যা হলো, তার চিন্তাগুলো রাজনীতি মনস্ক নয়; বরং সন্ত্রাস মনস্ক।


এফবিআই রিপোর্টে বলেছে, একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার চিন্তা কখনো সুস্থ রাজনৈতিক চিন্তা হতে পারে না। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে তারেক জিয়া এরকম একটি ঘৃণ্য পরিকল্পনায় তার সব রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক শক্তি ব্যয় করছে। এফবিআই মনে করছে, লন্ডন থেকে তারেক জিয়া এমন কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং মদদ দিচ্ছে যারা সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক। অবিলম্বে এই তৎপরতা বন্ধ না হলে সন্ত্রাসবাদই লাভবান হবে।


এই রিপোর্টটি পড়েছি এক সপ্তাহও হয়নি। এর মধ্যেই প্রথম আঘাত নেমে এলো জাফর ইকবাল স্যারের ওপর। কিছুদিন আগে ভারতে ধরা পড়েছে দুই জঙ্গি। তারাও তাদের স্বীকারোক্তিতে বলেছিলো জাফর ইকবালসহ আরো কিছু নামের কথা। যারা তাদের হিটলিস্টে রয়েছে। এইসব জঙ্গিদের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মাধ্যমে ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। যা আবারো নতুন মাত্রা পেয়েছে সরাসরি তারেক জিয়ার তত্ত্বাবধানে সাংগঠনিক ও অর্থনৈতিক দুই খাতেই।


এরা ছোট ছোট দলে বিচ্ছিন্নভাবে ট্রেনিং নিচ্ছে। এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে চেনেও না। মনে করা হচ্ছে এই সব গ্রুপে বাছাই করা হয়েছে কিশোর থেকে যুবকদের। তবে এদের ভেতর মানসিক প্রতিবন্ধী বা কমবুদ্ধির বোকা টাইপের ছেলেমেয়েদের রিক্রুট করা হচ্ছে। যাদের ধর্মের অপব্যখ্যা দিয়ে সহজেই মোটিভেটেড করা যায় এবং ধরা পড়লেও তারা যাতে আইনের ফোকর গলে সহজেই বেরিয়ে যেতে পারে। এই মোটিভেশনের কাজ হচ্ছে খুব সহজেই, সবার চোখের সামনেই। বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল ও ফেসবুক ইউটিউবের মাধ্যমে।



এই সরকারের উন্নয়নের ডিজিটাল সুবিধার সবটুকুই জঙ্গিবাদের দল ব্যবহার করেছে। আবার মিডিয়াও সবচাইতে সুবিধা পেয়েছে এই সরকারের কাছ থেকেই। মোটকথা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নামক শব্দটিকে এই সরকারই বাস্তবায়ন করেছে যা বুঝতে শুধু চ্যানেল আইএর ‘তৃতীয় মাত্রা’ প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। অন্যান্য মিডিয়ার কথা না হয় নাই বলি।


এবার তাকাই সোশ্যাল মিডিয়ার দিকে। জাফর ইকবাল স্যারের ওপর আঘাতের পর তিনি বেঁচে গেলে ফেসবুকে হাজার হাজর ইউজার যেভাবে ইসলামের নামে জাফর স্যারকে নাস্তিক উপাধি দিয়ে এই হত্যা উদ্যোগকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেছে, তাতে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার দিকেই আঙ্গুলি নির্দেশ করা হয়েছে। তাতে এটুকুই বোঝা যায় যে, তারেক জিয়ার টাকা তার ‘শেখ হাসিনা হত্যা মিশন’ এ বেশ ভালোই কাজ করছে।


ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, একদল মানুষ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকেও অন্য খাতে ঘোরানোর চেষ্টায় মত্ত। একদল তো জাতীয় সঙ্গীতকে হিন্দু কবির গান বলে বদলে দেয়ারও প্রাণপণ চেষ্টা করছে। এইতো সেদিন মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল আন্দোলনের নাম দিয়ে শাহবাগেই একদল সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে তাদের নোংরা আঙ্গুলি নির্দেশ করেছে।


এর সবকিছুই কিন্ত শেখ হাসিনা ও তার সরকারের বিরুদ্ধেই আন্দোলন হিসেবে গড়ে উঠছে। আমাদের অনেকেই বুঝে বা না বুঝে এইসব আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ছেন। তবে আমার চোখে এগুলো একই সুতোয় বাঁধা, যে সুতোর নাটাইটি তারেক জিয়ার হাতে। মিশন একটাই শেখের বেটির বিনাশ।


বিবার্তা/বাবু/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com