স্টিফেন হকিং যখন প্রেমে পড়েন, ক'দিন বাদেই তাঁর মটর নিউরন ডিজিজ ধরা পড়ে। ডাক্তার স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে সর্বোচ্চ দুই বছর সুস্থ থাকবেন হকিং, তারপর আমরণ পঙ্গুত্ব।
হকিং তখন গ্রাজুয়েশন করছেন; ক্যামব্রিজে।
নিজের ভবিষ্যত জানার পর প্রেমিকাকে ফিরিয়ে দিতে চান হকিং। কিন্তু ফিরে যাননি তার প্রেমিকা, জেন ওয়াইল্ড। হকিংয়ের ঠোঁটে গাঢ় চুমু এঁকে বলেন, আমি তোমাকে ভালোবাসি। পঙ্গু হয়ে যাচ্ছো, তাতে কী? মারা তো যাচ্ছো না!
তারপর হকিংয়ের চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিজের জামা দিয়ে মুছে দেন। হকিংয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বলেন, সব সময় তোমার চশমাটা অপরিষ্কার থাকে। আমি না থাকলে কে এটা পরিষ্কার করে দেবে?
জেন ওয়াইল্ডের কথায় মুগ্ধ হন হকিং। ১৯৬৫ সালে দু’জন বিয়ে করেন। তিনটা বাচ্চাও হয় তাঁদের। এগিয়ে চলে হকিংয়ের singularity theorems. এরই মধ্যে অবশ্য পদার্থবিদদের মধ্যে হইচই ফেলে দিয়েছেন তিনি। ব্ল্যাক হোল, ইউনিভার্স, টাইম ইত্যাদি বিষয়ের ওপর তাঁর গবেষণা মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণা এগিয়ে নিয়ে গেছে হাজার বছর।
পুরো পৃথিবী যখন স্টিফেন হকিং-এর প্রতি মুগ্ধ, তখন একজন কিছুটা বিরক্ত। তিনি জেন ওয়াইল্ড। হকিংয়ের প্রেমিকা স্ত্রী। কারণ, ততোদিনে হকিং পুরোপুরি পঙ্গু। ইলেক্ট্রিক চেয়ারে বসে থাকেন সব সময়। হাত-পা, মাথা কিছুই নাড়তে পারেন না। এমনকি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অস্পষ্ট বাকশক্তিটুকুও হারিয়েছেন। হকিংয়ের এই পঙ্গু জীবনের সঙ্গে ব্যালান্স করতে পারেন না জেন। হকিংয়ের প্রতি এক ধরনের উদাসিনতা আসে তাঁর। যদিও দায়িত্ববোধের জায়গাতে সর্বোচ্চটাই করার চেষ্টা করেছেন তিনি। তারপরও হকিংয়ের পেছনে ২৪ ঘণ্টা সময় দেয়া জেনের পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠল।
ইতোমধ্যেই হকিং হয়ে উঠেছেন বিশ্বব্যাপী পরিচিত নাম, পৃথিবীর সবচে ব্যস্ত ‘পঙ্গু মানুষ’। জেন এবার হকিংয়ের জন্য একজন সেক্রেটারি নিয়োগ দিলেন - সুন্দরী, স্মার্ট, বুদ্ধিমতি এলেন ম্যাসন।
হকিং তার সময়ের সেরা গাণিতিক। জীবনের অঙ্ক তিনি নতুন করে মেলালেন। প্রেমে পড়লেন এলেন ম্যাসনের। অন্যদিকে জেনকে ‘যা খুশি তা-ই’ করার স্বাধীনতা দিলেন। ফলাফল - ডিভোর্স। স্টিফেন হকিং ও জেন ওয়াইল্ডের ডিভোর্স হয়ে যায় ১৯৯৫ সালে। সবাইকে হতবাক করে বিশ্বে প্রায় কিংবদন্তি হতে যাওয়া এক যুগলের প্রেমকাহিনী ভেঙ্গে গেল।
সবাইকে আরো হতবাক করে বিশ্বসেরা তাত্ত্বিক পদার্থবিদ একই বছর এলেন ম্যাসনকে বিয়ের ঘোষণা দেন। কথা বলতে না পারা রসিক হকিং বিশেষ কম্পিউটারে বিয়ের বার্তা জানিয়েছিলেন এই বলে - ‘ইটস ওয়ান্ডারফুল! আই হ্যাভ ম্যারিড দ্য লেডি আই লাভ।’
ম্যাসনের মতো সুন্দরী, বুদ্ধিমতির পঙ্গু হকিংকে বিয়ে করার কারণ ছিল অস্পষ্ট। বিয়ের পর হকিং একা হয়ে পড়েন। বন্ধু-পরিবার থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখেন ম্যাসন। তবে এ বিয়ে টেকেনি। ২০০০ সালে খুব নীরবে তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়।
এর পরের গল্পটা বেশ মিষ্টি। হকিং সম্পর্ক পূণঃস্থাপন করেন জেন এবং তার তিন সন্তান ও নাতি-নাতনির সঙ্গে। জেনের সঙ্গে হকিংয়ের সম্পর্কটা এখন দারুণ। দু’জন দু’জনের প্রিয়তম বন্ধু। ইলেকট্রিক চেয়ারে বসে বিশেষ কম্পিউটারের বাটন টিপে হকিং বলেন, আমি যদি পৃথিবীর সেরা রকস্টার হতাম, তাহলে তোমাকে গান শোনাতে পারতাম।
হকিংয়ের চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিজের জামা দিয়ে পরিষ্কার করে জেন বলেন, তুমি এই ইউনিভার্সের সেরা রকস্টার। আমি কেন, মহাবিশ্বের প্রতিটা গ্রহ-নক্ষত্র তোমার গান শুনছে বসে বসে।
বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]