"ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়" আমাদের সকলের প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , শতসংগ্রাম আর ঐতিহ্যের সূতিকাগার। বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাস সৃষ্টির এক অনবদ্য কারিগর এই প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়।
আর এই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের অন্যতম গর্বিত অংশীদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহান শিক্ষক মহোদয়েরা। কিন্তু ইদানিং এই মহান পেশায় নিয়োজিত শিক্ষকদের অতিমাত্রায় উচ্চভিলাষ আর লোভ, গবেষনা ও শিক্ষাদানের প্রধান অন্তরায় হয়ে যাচ্ছে।এই মহান পেশা এভাবে কলুষিত হতে থাকলে একটি জাতির নৈতিক অবক্ষয় অভিসম্ভ্যাবি।
এই পেশায় থেকে যদি নিজেদের নৈতিকতা ধরে রাখতে না পারেন তবে কেন আপনাকে এই মহান পেশায় আসতে হবে? আপনি চাইলেই তো আপনার মেধাকে অন্যত্র খাটাতে পারেন, সেখানে বসে নিজের অবক্ষয় ঘটান! তাতে সমাজের কিছু যায় আসবে না।দয়া করে মানুষ গড়ার কারিগরের এই মহান পেশাকে কলুষিত করবেন না।
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক ছাত্র।এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ঐতিহ্য আর অহংকারের গর্বিত অংশীদার।কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বর্তমানের মতো শিক্ষকদের অতিমাত্রার অবক্ষয় সত্যিই আমাদের ব্যথিত করে। সেই প্রাইমারি স্কুলের সাদামাটা শিক্ষকদের প্রতি আমাদের যে গভীর শ্রদ্ধাবোধ তা আজও আমাদের হৃদয়কে আলোড়িত করে।তাঁদের পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিয়ে আজও হৃদয়ে যতটা স্বস্তি মেলে, সেই শ্রদ্ধাবোধ আর স্বস্তি কেন যেন এই উচ্চশিক্ষিত শিক্ষক নামের স্বার্থপর মানুষগুলোর প্রতি আনতে পারি না।
এটা সত্যিই অনেক দুঃখের, অনেক কষ্টের।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস নিয়ে, ভালোমনে, যে সকল প্রতিষ্ঠানে সৎ মানুষ মনে করে এই সব উচ্চাভিলাষি শিক্ষকদের বসিয়েছেন, তারা প্রায় সবাই-ই নেত্রীর বিশ্বাসের অমর্যাদা করেছেন। তারা নানা অনিয়ম আর অনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের হরহামেশাই লিপ্ত করেছেন, তারা অবলীলায় ভুলে গেছেন যে, সমাজের চোখে তারা এক একজন অতি মহান শিক্ষক। তাদের স্বেচ্ছাচারিতা আর অতিমাত্রার লোভের কারণে আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রসংসদ বিলুপ্ত হওয়ায় পথে।
দেশের রাজনৈতিক অবস্থার অজুহাতে তারা ছাত্রদের তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বার বার বঞ্চিত করছে এবং এর ফলে ভবিষ্যতের জাতীয় রাজনীতির কাঠামো দুর্বল করে দিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছেন।এটা নিতান্তই তাদের ছোট মানুষিকতার বহিঃপ্রকাশ।
ছাত্রসংসদ থাকলে ছাত্ররা তাদের অধিকারের কথা বলবে এবং তাতে একটু হলেও শিক্ষকদের জবাবদিহিতামূলক পরিবেশ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেজন্য সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট হবে এই ধোয়াশা তুলে তারা পরিকল্পিতভাবে সরকারের উপর দায় চাপিয়ে ছাত্রসংসদ বন্ধ করে রেখেছে।অথচ শিক্ষকে শিক্ষকে প্রকাশ্যে হাতাহাতি মারামারি কিল ঘুষি লাথি সবই চলে।
প্রকাশ্যে অকথ্য গালাগালি তো নিত্যদিনের ঘটনা!
তাতে সুষ্ঠ পরিবেশ বিনষ্ট হয় না। কারণ, তারা শিক্ষক, সমাজের মাথা। তাদের ভুল হওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষকসমিতির নির্বাচন হচ্ছে। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এমনকি চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতির নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে। লাল-সাদা-নীল-গোলাপী-বেগুনী সবই চলে।
শুধু ছাত্রসংসদ হলেই পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার ফালতু অযুহাতে ছাত্রদের তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে শিক্ষক নামের তথাকথিত স্বার্থান্বেষী মহল।
এই সব কর্মকাণ্ড যে তাদের স্বার্থের খেলা তা বুঝতে খুব বেশী বুদ্ধিমান হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এটা শিক্ষকদের নৈতিকতার চরম অবক্ষয়। এবং এই ধারাবাহিকতায় অধিকতর অযোগ্য মানুষগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে শিক্ষক নামের এই মহান পেশাকে আরো বেশী কলুষিত করে যাচ্ছে। এর দায় অবশ্যই কর্তাব্যক্তিদের নিতে হবে।
সব শিক্ষকরা তো আর খারাপ না।লোভ, স্বেচ্ছাচারীতা আর অতিমাত্রায় দলবাজী প্রবণতা তো এখনো সবাইকে গ্রাস করেনি। অনেক যোগ্য ও মহৎ মানুষ এই মহান পেশায় মানুষ গড়ার কারিগর হওয়ার মহান ব্রত নিয়ে শিক্ষাদান করে যাচ্ছেন। ঘুনেধরা এই পশ্চাৎপদ সমাজকে আলোর পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
এই মহান মানুষগুলো কেন এই অপবাদের বোঝা বয়ে বেড়াবে? আমরা এর অবসান চাই, মহান পেশার মানুষগুলোকে মহান দেখতে চাই, শ্রদ্ধার সর্বোচ্চ শিখরে তাদের অবস্থান দিতে চাই।
আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন।
লেখক : সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ
বিবার্তা/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]