শিরোনাম
বিএনপির অসুস্থ রাজনৈতিকরা আজ প্রত্যাখ্যাত
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০১৭, ১৪:০৬
বিএনপির অসুস্থ রাজনৈতিকরা আজ প্রত্যাখ্যাত
সৈয়দ মিজানুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

আত্মঘাতী জাতির পরিচয়ে বিএনপি বার বার বিশ্ব জনসম্মুখে বাঙ্গালিকে লজ্জাজনক অবস্থায় পতিত করেই চলেছে। আত্মশুদ্ধির পাথেয় পিতা হারানোর শোকে বিভোর জাতি যখন গভীর ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করে, এবং ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড বোমা হামলার ভয়াবহতায় মুহ্যমান; ঠিক তখনি হত্যার রাজনীতি থেকে সৃষ্ট বিএনপির হিংসাত্মক মতাদর্শে বিশ্বাসী নেতারা জাতির সাথে নিন্দনীয় তামাশায় মেতে উঠে।


জাতীয় ইতিহাসে ১৫ আগস্ট এবং ২১ আগস্ট এর তাৎপর্য জানতে চেয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বক্তব্যে জাতি আবারো নির্লজ্জ বিএনপির আসল চরিত্র অবলোকন করলো। তিনি বলেছেন, ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্টের ঘটনা জাতীয় জীবনে কোন ক্ষত নয়, বিএনপি এটাকে দুর্ঘটনা হিসেবেই দেখছে, পৃথিবীর অনেক দেশের রাজনীতিতেই এমনটা ঘটে মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন পুরনো ইতিহাস নিয়ে এতো আলোচনার কিছু নেই। কান্নাকাটির কিছু নেই।


তার এহেন বক্তব্য বিশ্বজনমনে বাঙ্গালিকে পুনরায় আত্মঘাতী জাতির পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত করার গভীর ষড়যন্ত্র। দেশের তরুণ প্রজন্ম ও ছাত্রসমমাজের পক্ষ থেকে আমরা ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ (উত্তর) এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।


দেশের বুদ্ধিজজীবী এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহল রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দাবি করে এ ঘটনাগুলোকে সন্ত্রাসের রাজনীতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তৎকালীন বিএনপি জামাত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এবং তারেক জিয়ার ঘৃণ্য পরিকল্পনায় এই গ্রেনেড বর্বরতা দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথকে ব্যাহত করেছে। আর ড. খন্দকার মোশারফ হোসেনের এমন বক্তব্যেই প্রমাণ করে, জেনেবুঝে সত্য গোপন করাই বিএনপি নেতাদের রাজনীতির আদর্শ।


ঠাণ্ডামাথার খুনি জিয়া ১৫ আগস্ট নারকীয় নির্মম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থেকেও পরে জাতির কাছে সাধু সাজার অপচেষ্টা করে। স্বামী জিয়ার ষড়যন্ত্রের দীক্ষায় আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে বেগম জিয়াও কম যাননি।


২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা প্রসঙ্গে বেগম জিয়া বলেছিলেন, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা নিজেই তার ভ্যনেটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে তার সভাস্থলে ফাটিয়েছে। তার নিয়ন্ত্রণাধীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় কর্তৃক জজ মিয়া নামের এক নিরাপরাধ ব্যক্তিকে ২১ আগস্টে হামলার আসামি সাজিয়ে ঘটনার মূল আসামি তারেক গংদের আড়াল করার চেষ্টা করে। শুধু তাই নয় ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলায় ঘটনার আলামত কর্তব্যরত গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও উর্ধতন সেনা অফিসারের আদেশে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে ফেলা হয়।


এমনি বহু নৃসংশ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বিএনপি জামাত জোট দেশে একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে গিয়ে বারংবার হত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এযাত্রায় বিএনপি জামাতিদের লক্ষ্য ও টার্গেট ছিলো এক এবং অভিন্ন। তারা বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দের্শে এপর্যন্ত ১৯ বার সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে শত শত নিরপরাধ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। দেশবাসীর দোয়ায় মহান সৃষ্টিকর্তার মেহেরবানিতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা এখনো জীবিত এবং অক্ষত রয়েছেন।


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রাণনাশের সকল ধরনের অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে রাজনৈতিক দেউলিয়াগ্রস্ত বিএনপির কাছে ষড়যন্ত্রের প্রতিটি প্রদক্ষেপই এখন দুর্ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। দেশের স্বাধীন চেতনার মানুষ বিএনপির এরূপ মিথ্যাচার ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।


বিএনপি জামাতসহ স্বৈরশাসক গোষ্ঠীদের সন্ত্রাসী হামলায় বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা বার বার মৃত্যুর দ্বার থেকে বেঁচে ফিরেছেন।


শেখ হাসিনা প্রথম হামলার শিকার হন ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি, চট্টগ্রামে। লালদীঘি ময়দানের আট দলীয় জোটের মিছিলে শেখ হাসিনাকে হত্যায় পুলিশ ও বিডিআর গুলি বর্ষণ করে। এতে সাতজন নিহত ও গুরুতর আহত হয়েছিল ৫৪জন।


১৯৮৯ এর ১১ আগস্ট রাতে ফ্রিডম পার্টির একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে গুলি বর্ষণ ও গ্রেনেড হামলা চালায়।


১৯৯১ এর ১১ সেপ্টেম্বর টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকায় ফিরে গ্রিনরোডের কাছে ধানমণ্ডি স্কুলে উপনির্বাচনের ভোট প্রদানের পর গ্রিন রোডে পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ভোটের পরিস্থিতি দেখতে যান শেখ হাসিনা। গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপির কর্মীরা গুলিবর্ষণ ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়।


১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরদী ও নাটোর রেল স্টেশনে প্রবেশের মুখে তাকে বহনকারী রেলগাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়।


১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর শেখ রাসেল স্কয়ারের কাছে সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় শেখ হাসিনার ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়।


১৯৯৬ সালের ৭ মার্চ সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে শেখ হাসিনার বক্তৃতার পর হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস থেকে সভা মঞ্চ লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে ২০জন আহত হয়।


১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পুত্র কন্যাসহ ৩১জনকে হত্যার জন্যে পুরস্কার ঘোষণা করে ই-মেইল করে ইন্টার এশিয়া টিভির মালিক শোয়েব চৌধুরী।


২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় জনসভাস্থলের কাছে ও হ্যালিপ্যাডের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল। ঘটনাস্থলের কাছে শেখ লুৎফুর রহমান ডিগ্রি কলেজ মাঠের এক সভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দেয়ার কথা ছিল।


২০০১ সালের ২৯ মে খুলনার রূপসা সেতুর উদ্বোধন করতে যাওয়ার কথা ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। জঙ্গিরা সেখানে বোমা পুঁতে রাখে যা গোয়েন্দা পুলিশ উদ্ধার করে।


২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেদিন রাত ৮টার দিকে জনসভাস্থল থেকে ৫০০ গজ দূরে একটি বাড়িতে বোমা বিস্ফোরিত হলে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়।


২০০২ সালের ৪ মার্চ, যুবদল ক্যাডার খালিদ বিন হেদায়েতের নেতৃত্বে নওগাঁয় বিএমসি সরকারি মহিলা কলেজের সামনে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা চালানো হয়।


২০০২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বিএনপি-জামাত নেতাকর্মীরা সাতক্ষীরার কলারোয়ার রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালায়।


২০০২ সালের ৩০ আগস্ট শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে তার গাড়ি বহরে হামলা চালানো হয়।


২০০৪ সালের ২ এপ্রিল গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলিবর্ষণ করে জামাত-বিএনপি।


২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে জিয়াপুত্র তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ মদদে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু গ্রেনেডের আঘাতে নিহত হন দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন। আহত হন আরো প্রায় ৫শতাধিক। যাদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন।


২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সেনাবাহিনী সমর্থিত ১/১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে গ্রেফতার করেছিল। তাকে রাখা হয়েছিল জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ সাব-জেলে। সে সময় শেখ হাসিনার খাবারে ক্রমাগত পয়জন দিয়ে তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়।


২০১১ সালে শ্রীলংকার একটি সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের শত্রু রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য চুক্তি করে এবং সেজন্যে আগাম অর্থ লেনদেন করা হয়।


২০১১ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করার লক্ষ্যে একটি সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার পরিকল্পনা করা হয়েছিল যা পরে ব্যর্থ হয়।


২০১৪ সালের শেষে দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র এবং অভ্যুত্থানের পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতার জঙ্গি শাহানুর আলম ওরফে ডাক্তার।


সর্বশেষ ২০১৫ এর ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার সময়ে কারওয়ানবাজারে তার গাড়ি বহরে বোমা হামলা চালানোর চেষ্টা চালায় বিএনপি জামাত কর্তৃক সৃষ্ট জেএমবি।


প্রতিনিয়ত নিশ্চিত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে বাংলাদেশকে একটি স্বনির্ভর রাষ্ট্রে অধিষ্ঠিত করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন দেশের সফল প্রধানমন্ত্রী ও বাঙালির আশা ভরসার একমাত্র ঠিকানা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব অর্থনীতির সাথে পাল্লা দিয়ে উন্নত বিশ্বের দোরগোড়ায় অবস্থান করছে।


এমতাবস্থায় দেশের বাইরে গিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে আঁতাত করে বেগম জিয়া এবং তার পুত্র তারেক রহমানের পরিকল্পনায় নতুন ষড়যন্ত্রের পাঁয়তারা চালাচ্ছে এই সন্ত্রাসী দলটি। তারই অংশ হিসাবে বিএনপি নেতাদের সকল মির্থাচার ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে ছাত্রলীগ জাতির একমাত্র বিশ্বস্থ হাতিয়ার হিসেবে অতীতেও সাথে ছিলো! ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে- ইনশাআল্লাহ্।


লেখক: সভাপতি, ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com