শিরোনাম
আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জয়যাত্রা
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০১৬, ১৯:২০
আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জয়যাত্রা
আব্দুল্লাহ আল সাদি সিয়াম
প্রিন্ট অ-অ+

জেলহত্যা আমাদের ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক অবস্থায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ চার সহচর এবং মুজিবনগর সরকার ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকে। এই জাতীয় চার নেতা হলেন : সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান।


১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতির কোনো ঘটনাই বিচ্ছিন্ন নয়। পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট শুরু হয় একাত্তরের অর্জনগুলোকে সমূলে বিনাশ করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের প্রথম টার্গেট বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও তাঁর নিকট আত্মীয়। দ্বিতীয় টার্গেট ৩রা নভেম্বরের জেলহত্যা। এ ঘটনারও শিকার বঙ্গবন্ধুর চার সহচর। এরপর ধারাবাহিকভাবে সংবিধান হত্যা বা কর্তন এবং যাঁরা একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, নেতৃত্বদান করেছিলেন, তাদের গুণে গুণে হত্যা। আর অকথ্য নির্যাতন-নিপীড়ন ভোগ করেছিলো বঙ্গবন্ধুর প্রিয়জন ও তাঁর অনুসারীরা।


সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের মূল সংগঠক এবং একাত্তরের জাতীয় বীর। সারাজীবন তাঁরা বঙ্গবন্ধুর চারপাশে থেকে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। আইয়ুব-মোনায়েমের নির্যাতন-নিপীড়ন ভোগ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে কখনো বিচ্যুত হননি। জেলখানায় গিয়েও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি ছিলেন অবিচল। এ কারণেই তাদের জেলখানার অভ্যন্তরে প্রাণ হারাতে হয়।


মোশতাক চক্র বঙ্গবন্ধু ও তাদের সহচরদের খুন করেই থেমে থাকেনি, খুনিদের বিচার করা যাবে না মর্মে অধ্যাদেশও জারি করেন মোশতাক। পরবর্তীকালে এই অধ্যাদেশ জিয়াউর রহমান সংবিধানে প্রতিস্থাপন করে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর সহচরদের হত্যার বিচার বন্ধ করে দেন।


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন স্বাধীন বংলাদেশ সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি। সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি এবং বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তাজউদ্দীন আহমেদ ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবংদলের সাধারণ সম্পাদক। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও কামরুজ্জামান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মন্ত্রী ছিলেন।


বঙ্গবন্ধু যেভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন সেভাবেই তাঁরা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং বিজয় অর্জন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের এই বিজয় ঘাতকের দল মেনে নিতে পারেনি, যে কারণে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যা করে আর ৩ নভেম্বর জেলখানায় হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির দালালরা তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই এই জিঘাংসা চরিতার্থ করে।


পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের খুনিদের আংশিক বিচার হয়েছে ঠিকই, কিন্তু জেলহত্যার বিচার এখনো সম্পন্ন হয়নি। বঙ্গবন্ধুরা খুনিরা যেমন রেহাই পায়নি, জাতীয় চার নেতার হত্যকারীরাও রেহাই পাবে না। যদিও ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের হোতারা একই গ্রন্থিতে বাঁধা।


এ দুটি হত্যাকাণ্ড থেকে আমরা এ শিক্ষাই গ্রহণ করতে পারি যে, স্বাধীনতার শত্রুরা কখনো মাটি ও মানুষের আপন হয় না। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এরা পর্দার আড়ালে ষড়যন্ত্র করে এবং নীলনকশা অনুযায়ী জঙ্গি রূপ ধারণ করতে পিছপা হয় না। এদেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে, বেঁচে থাকার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করেছে, অথচ এদের ভয়াল থাবার কালো ছায়ায় আমরা এখনো হোঁচট খাচ্ছি।


এদের প্রতিহত করার শপথ নিতে হবে। এরা সমাজ ও রাষ্ট্রের দুশমন, মানবতার শত্রু। আমাদের স্বাধীনতার অর্জনগুলো এরা বিনাশ করতে চায়। আসুন, আমরা এদের প্রতিহত করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হই এবং সচেতন থাকি। আমরা চাই হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জয়যাত্রা।


লেখক : সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জামালপুর জেলা শাখা


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com