৮৭ একরের গল্প শুরু হয়েছিলো সে প্যানিক সৃষ্টি করা "ওয়ার অফ দি ওয়ার্ল্ড" নাটকের প্যানিক সৃষ্টির বছরে, সেই বছরে যে বছরে হিটলারের ন্যাজি বাহিনী ইহুদী নিধন শুরু করেছিলো, যে বছর নায়াগ্রা ফলসে হানিমুন ব্রীজ ধ্বসে পড়েছিলো, হ্যারিকেনে স্তব্ধ হয়েছিলো ইংল্যান্ড, কুইন এলিজাবেথ রাজ্যের রানী হয়েছিলেন, ইতালি জিতেছিলো বিশ্বকাপ, বল পয়েন্টের আবিষ্কার হয়েছিলো, সৌদি আরব প্রথম তেল খুঁজে পেয়েছিলো ভূগর্ভে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এই বছরেই "Agricultural Adjustment Act" চালু হয়, যেটা ছিলো কৃষিতে এক বিপ্লবের নাম, হাজার কৃষকের চোখের জলের দাম দিতে শিখেছিলো বিশ্ব। ভাবতেই অবাক লাগে, আমরা কতো এগিয়ে ছিলাম, প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছিলাম কৃষি শিক্ষার প্রথম স্কুল, এখানকার লাইব্রেরী ছিলো বাংলার প্রথম লাইব্রেরী।
আবেগ, অনুভূতি আর ভালবাসার প্রথম পাঠ এই ৮৭ একরেই। সোঁদা মাটির গন্ধ মেখে যে আবেগের শুরু হয়েছিলো তাঁর কিছুটা আঁচ পেয়েছিলাম তখন, যখন সবার হাতে-হাতে হালের প্রযুক্তির মুঠোফোন ছিলো না, কথা বলাতেই সীমাবদ্ধ ছিলো তার চলাচল। সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে আলো-আঁধারীর অসামান্য খেলা চলতো, গিটারের টুংটাং আওয়াজ শুনিনি এমন সন্ধ্যা বিরল। খাঁচায় আটকানো সংস্কৃতি তখনো চালু হয়নি, বৃষ্টিতে ফুটবলের দৌরাত্ম তখন গগনচুম্বী, সরিষা-গমের ক্ষেতের মাঝে হারিয়ে যাওয়া অস্তাচলের সূর্য তখনো অনেক গন্ধমাখা ভালোবাসার স্মৃতি। তখন প্রতিবাদ ছিলো, প্রতিরোধ ছিলো, অযৌক্তিক দাবির বিরুদ্ধে উস্কোখুস্কো এলোমেলো কিছু তরুণ-তরুণীর কণ্ঠস্বর ছিলো।
আমি অনেক ছেলের মাঝে একজন হাসিখুসি আপুকে প্রানখুলে হাসতে দেখেছি, আপুদের 'কিরে, কেমন আছিস?' এখনো কানে বাজে। মেয়েদের কখোনো মনে হয়নি তাঁরা পিছিয়ে গেছে হাজার বছর। গমগমে বিকালগুলো ডুবে গেছে। সকাল-বিকেল-সন্ধ্যার টাওয়ারের হাসিখুশি মানুষগুলো হারিয়ে গেছে, তাঁদের ভালোবাসার টাওয়ারে আজ তেলাপিয়া প্রবল আনন্দে সাঁতার কাটে।
জৌলুস হারিয়েছে আমাদের প্রাণ, মন, সত্ত্বা। মনের জৌলুসের সাথে ক্যাম্পাসের ময়নাতদন্তের কোনো প্রতিবাদ করিনি। সবুজ গাছে বানরের দল শেষ কবে দেখেছি মনে পড়ে না। অথচ এই বানরগুলো একসময় হাত থেকে খাবার ছিনিয়ে নিতো, বানরশাবকের সেই অপূর্ব মুখোভঙ্গি এখনো ভুলতে পারিনি।
আজ স্বপ্নগুলো টেবিলের বইয়ের তাকে তোলা, গিটারের আওয়াজ আদিখ্যেতা, কোনো তরুণীর রাস্তায় একাকী হেঁটে যাওয়া, বেয়াড়াপনা, অনেক পুরুষের মাঝে কোনো তেজস্বীতিা! সেতো বেলাল্লাপনা।
এখানে উস্কোখুস্কো তরুণের স্বপ্নের লীলাভূমি লোহার শিকে বন্দী, প্রতিবাদী মুখগুলো ডিগ্রীর ভয়ে দিশেহারা। কিছু স্বপ্নময় ভালোলাগার মোড়ক কেউ খুলতে চায় না। অন্তরীন মানুষগুলো নতুন প্রজন্মকে কিছু দিতে পারছে না তা নয়, সবুজ পৃথিবীর যে অঙ্গীকারে জোনাকির মতো আবেশী স্বপ্ন দেখানোর কথা ছিলো সাজেশনের মোড়কে সেখানে আসছে আয়েশী স্বপ্ন।
৮৭ বছর আগে যে তরুণ-তরুণী কৃষির এই বিদ্যাপীঠে বসে তাঁদের অনাগতের জন্য এক সবুজ, সমৃদ্ধ, প্রগতিশীল কৃষিধারা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলো, তাঁরা হয়তো ভেবেছিলো কোনো বিপ্লব হবে, কোনো তরুণ কৃষকদের কান্না মোছাবে, কোণো তরুণ কৃষকদের জন্য গাইবে, অনাগত ইতিহাস হবে কোনো সবুজ ভোরের।।
হয়তো পেরেছি, হয়তো পারিনি। হয়তো কোনো সবুজ বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে আমরা।
তবে ৮৭ একর যদি হাজার তরুণ-তরুণীর স্বপ্নের লীলাভূমি হয়, যদি ক্যাম্পাস আমাদের মাতৃতুল্য হয়, আমরা ভালো করিনি, ক্ষতবিক্ষত করেছি প্রতিনিয়ত। স্বপ্ন দেখি, সবুজ বিপ্লবের নেতৃত্ব দেবে আমার ভালোবাসা, স্বপ্ন দেখি আবার উস্কোখুস্কো স্বপ্নগুলো ফিরে আসবে, স্বপ্নের কোনো নায়ক আসবে যে আমাদের অস্তিত্বকে সাজাবে ভালোবাসায়। সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো যখন হাতে লাঠির অবলম্বন নিয়ে, চামড়ার ভাঁজ নিয়ে, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা চাপিয়ে ফিরে আসবে, তাঁর দ্বিতীয় প্রজন্মের কোনো কচিহাত ধরে বলবে, "দেখো দাদুভাই, এই আমার ভালোবাসা, আমার প্রাণ, আমার অস্তিত্ব, আমার সব থেকে ভালোবাসা নিয়ে দেখা কোনো স্বপ্নালু ভোর।"
শুভ জন্মদিন প্রাণের বিদ্যাপীঠ।
লেখক : সাংগঠনিক সম্পাদক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ
বিবার্তা/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]