বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে।
১৯৮৭-এর পর কলকাতার সিরাজউদ্দৌলা হোটেলে কিছু রাজনৈতিক কর্মী সমবেত হন। তারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ধারার সংগঠন করার জন্য কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান শুরু থেকেই পূর্ব পাকিস্তানকে অসাম্প্রদায়িক অঞ্চল হিশেবে গড়ে তোলার সেই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন।
১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তানের কর্মী সম্মেলন হয়। সেখানে কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়, যা পাঠ করেন তখনকার ছাত্রনেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তান কর্মী সম্মেলন প্রস্তাব করিতেছে যে, বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের লিখার বাহন ও আইন আদালতের ভাষা করা হউক।" (সূত্র : ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা’ গাজীউল হক, ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্র, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪)
এরপর ১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু গঠন করলেন ছাত্রলীগ। তার দূরদৃষ্টি দিয়ে তিনি বুঝেছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও ভাষা আন্দোলনসহ যাবতীয় দাবি আদায়ের লড়াইয়ে ছাত্রদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ জরুরী। তাই ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি গঠিত হয় ছাত্রলীগ, যা আজ ২০১৭ সালে এসে সারাবিশ্বের সবচেয়ে বড় ছাত্রসংগঠন হিশেবে বিবেচিত হচ্ছে!
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ছাত্রলীগ ১০ দফা নিয়ে কাজ শুরু করে। যার অন্যতম ছিলো, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা।
১১ মার্চ, ১৯৪৮ সাল। সেদিন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনের প্রথম সফল হরতাল পালিত হয়। সেদিনের ছাত্রনেতা মুজিব হরতাল করতে গিয়ে গ্রেফতার হন, নির্যাতনের স্বীকার হন। বাংলাদেশে ছাত্রলীগের বহু নেতারা এরপর বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে রাজপথে সংগ্রাম করেছেন। এই সংগ্রামে বহু নেতা কর্মীআহত হয়েছেন, নিহত হয়েছেন।
ছাত্রলীগ এমন একটি সংগঠন যার জন্মই হয়েছিলো ইতিহাসের প্রথম পাতায়। তাই যেনো তেনো ভাবে ছাত্রলীগকে কথায় কথায় আজ যারা আক্রমণ করেন তাদের কাছে অনুরোধ ইতিহাস ভুলে যাবেন না।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতির জনকের প্রশ্নে, দেশনেত্রীর প্রশ্নে আর মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে কারো সাথে আপোষ করে না। কারণ, হারানোর বেদনা কি সেটা ছাত্রলীগ জানে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হারিয়েছে ১৭ হাজার নিবেদিত প্রাণ নেতা কর্মী। হারিয়েছে তার অভিভাবক, তার অনুপ্রেরণা, তার সাহসিকতার বাতিঘর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে।
যে মাটিতে পা রেখে আজ কেউ কেউ জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, যে মাটিতে পা রেখে সকাল-বিকাল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কুৎসা রটাচ্ছেন, এ মাটিতে পা রাখার যোগ্যতা আপনাকে করে দিতে জীবন দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দিনের পর দিন কারারুদ্ধ হয়ে থাকতে হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে। ইতিহাস ভুলে যাবেন না এত দ্রুত।
অতীতের কথা মনে করিয়ে দিলে অনেকে আবার নাখোশ হন। তাই বর্তমানের কথা বলি।
বর্তমানে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিশ্বের অন্যসব দেশের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বাংলাদেশেও জঙ্গি তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য জনমনে ভীতির সঞ্চার করে দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করা। দেশকে পিছিয়ে মধ্যযুগে নিয়ে যেতে চায় তারা। ধর্মের নামে যে জঙ্গি তৎপরতা এই মৌলবাদকে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। কারণ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী। তাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সারাদেশে দূর্বার বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেছিলো সিলেটে জঙ্গি হামলা হওয়ার পর।
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা ছাত্রলীগের জঙ্গিবাদবিরোধী মিছিল ও প্রতিবাদ নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছিলো। সেখানে তারা লিখে, "আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জেগে উঠেছে দেশজুড়ে মাথাচাড়া দেয়া সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। গুলশন থেকে সিলেট— জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন নেওয়ার দাবিতে।"
শুধু তাই নয়, যারা ধর্মের বিরুদ্ধে কটুক্তি করে তাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। গণজাগরণ মঞ্চ সহ বিভিন্ন বাম সংগঠন যারা বিভিন্ন সময় ধর্মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কটুক্তি করেছে তাদের বিরুদ্ধেও সম্প্রতি শক্ত প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সক্রিয় থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা প্রতিহত করে যাচ্ছে এসব তথাকথিত মুক্তমনাদের, যারা ঘৃণা ছড়িয়ে দেয় বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মনে।
একটি কথা খুবই পরিষ্কার। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বলতে ছাত্রলীগ বুঝে সব ধর্মের মানুষের মিলেমিশে থাকার অধিকার। এখানে নির্দিষ্ট কোনো ধর্মকে কেউ পুঁজি করে জঙ্গিবাদ করবে কিংবা নির্দিষ্ট কোনো ধর্মকে কেউ আঘাত দিয়ে কথা বলবে - কোনোটিই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সমর্থন করে না। কারণ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে।
লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]