শিরোনাম
মা-মাটি-মানুষের নেত্রী শেখ হাসিনা
প্রকাশ : ১৭ মে ২০১৭, ১৭:০৫
মা-মাটি-মানুষের নেত্রী শেখ হাসিনা
মো. রাশেদুল ইসলাম রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

১৭ মে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩৬তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।


বাঙালি জাতিকে আলোর পথ দেখাতে, বাংলার মাটিতে প্রত্যাবর্তন করলেন মা-মাটি-মানুষের নেত্রী শেখ হাসিনা। নেতৃত্বশূন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে শুধু প্রাণসঞ্চারের জন্য নয়, আমাদের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং বঙ্গবন্ধুর অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য একটি লক্ষ্যহীন-উদ্দেশ্যহীন জাতিকে সঠিক পথ দেখিয়ে দেশ ও জাতির ভাগ্যন্নয়ন, ভাত-রুটির অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সমৃদ্ধ উন্নত দেশ প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তাঁর একমাত্র লক্ষ্য।


তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।


তিন দশক আগে ১৯৮১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নির্বাসন শেষে তিনি বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। ওই দিনটি ছিল রবিবার। ওই দিন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লী থেকে কলকাতা হয়ে ঢাকার তৎকালীন কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে তাঁকে একনজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত এলাকাজুড়ে লাখো জনতার ঢল নামে। সারাদেশের গ্রামগঞ্জ-শহর-নগর-বন্দর থেকে অধিকারবঞ্চিত মুক্তিপাগল জনতা সেদিন ছুটে এসেছিল রাজধানী ঢাকায়। এ সময় সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী লাখো কণ্ঠের শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা বিমানবন্দর এলাকা। সেদিনের গগনবিদারী মেঘ গর্জন, ঝাঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ প্রকৃতি যেন নতুন এক উন্মাদনা নেচে উঠলো।


ঢাকা শহর সেদিন পরিণত হয়েছিল মিছিলের নগরীতে। মুখে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান ও হাতে বঙ্গবন্ধুর ছবি, দলীয় প্রতীক নৌকার প্রতিকৃতি নিয়ে বিমানবন্দরে ভিড় করে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে নিজ মাতৃভূমিতে স্বাগত জানাতে। কালবৈশাখী ঝড় ও প্রবল বৃষ্টি কিছুই সেদিন মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উৎসাহ-উদ্দীপনাকে এতটুকু বিঘ্নিত করতে পারেনি। আনন্দ আর বিষাদের অশ্রু দিয়ে মুক্তি পাগল বাংলার জনগণ তাকে বরণ করে নেয়। তিনি যখন দেশের বাইরে গিয়েছিলেন, তখন দেশে তার বাবা, মা, চাচা, ভাই সবাই ছিলেন। ১৭মে যখন বাংলার মাটিতে পা রাখলেন, তখন তার ‘কোথাও কেউ নেই’। আছে বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষমান লাখো মানুষের ভালোবাসা। তাই তো স্বজন হারানোর বেদনায় কাতর বঙ্গবন্ধুরকন্যা সেদিন বলেছিলেন, ‘আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই ছোট্ট রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাঁদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।’


শেখ হাসিনা সেদিন জনগণকে দেয়া সেই অঙ্গীকার পূরণে ৩৬ বছর ধরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে দেশকে আত্মনির্ভরশীল, সুখী-সমৃদ্ধ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিসম্পন্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিরলসভাবে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।


১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ সময় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রবাসে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৮১ সালের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মেলন। ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ঐতিহাসিক হোটেল ইডেনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। এরপর দীর্ঘ নির্বাসিত সময় কাটানোর পর আজকের এই দিনে দেশে ফিরে আসেন তিনি। দেশে ফিরে বিমানবন্দরে লাখো জনতার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলার মানুষের মুক্তি সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি। আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’


স্বজন হারানোর বেদনায় কাতর বঙ্গবন্ধুকন্যা অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমি আমার এ জীবন দান করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ছোটভাই রাসেলসহ সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই।


শেখ হাসিনা দেশে ফিরে শক্ত হাতে দলের হাল ও গণতন্ত্রের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে রেখে সহস্র বাধা অতিক্রম করেন। তিনি জনগণের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে দেশে ফেরার ১৫ বছরের মাথায় আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন। পাঁচ বছর দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে সরকার পরিচালনা করে দেশকে নিয়ে যান উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে। এরপর আবারও ষড়যন্ত্র। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছরের বিভীষিকাময় নির্যাতনে নেতা-কর্মীরা যখন দিশেহারা, তাঁকেসহ পুরো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করতে মারণঘাতী গ্রেনেড হামলার মুখেও অবিচল থেকে দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে বন্ধুর পথ পাড়ি দেন বঙ্গবন্ধুর এই কন্যা।


এরপর ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সামরিক নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দীর্ঘদিন কারাবাসে থেকেও কোনো অপশক্তির কাছে মাথানত করেননি শেখ হাসিনা। ওই সময় ভয়-ভীতি ও ষড়যন্ত্রে অনেক নেতার পথভ্রষ্ট হওয়ার উপক্রম হলেও জেলে থেকে সফল দিক-নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের অটুট বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সক্ষম হন তিনি। শেখ হাসিনার এই অবিচল ও সাহসী নেতৃত্ব আর জনগণের প্রতি অগাধ বিশ্বাসের কারণেই ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে দেশের জনগণ তিন-চতুর্থাংশ আসনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে প্রধানমন্ত্রী করেন শেখ হাসিনাকে। সর্বশেষ গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা।


বিপুল সমর্থন নিয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়ে শেখ হাসিনা দেশকে আত্মনির্ভরশীল, সুখী-সমৃদ্ধ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সম্পন্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিরলসভাবে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।


পূর্বে আমাদের কোনো লক্ষ্য ছিল না, ছিল না আলোকবর্তিকা, কিন্তু আজ? আজ আমদের একটা লক্ষ্য আছে, সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। আছে ডিজিটাল বাংলাদেশের আর মধ্য আয়ের বাংলাদেশ বিনির্মাণ মিশন, আছে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার ভিশন। এই ভিশন অর্জনে আজ শুধু আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরাই না বরং দেশের তরুণ, বৃদ্ধ, ছাত্রসমাজের সকলে কাজ করতে দৃঢ় প্রত্যয়ী।


শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে চলেছে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের দিকে সাফল্যের সাথে, তখন বাংলার সকল মানুষ নতুন প্রত্যয়ে জেগে উঠেছে মাথা উঁচু করে। মা-মাটি-মানুষের শেখ হাসিনার জন্যই আজ বাংলাদেশ এতোটুকু এসেছে এবং বাকিটুকুও এগিয়ে যাবে সাফল্যের সাথে।


লেখক : সদস্য, প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ


বিবার্তা/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com