শিরোনাম
মাতৃ প্রজনন ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে সাফল্যের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০১৭, ১৬:৪৬
মাতৃ প্রজনন ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে সাফল্যের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে
হায়দার মোহাম্মাদ ‍জিতু
প্রিন্ট অ-অ+

‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’ উপন্যাসে ‘আহমদ ছফা’ এঁকে গেছেন নারীর বহুরূপতা এবং ভেদহীন রহস্যকে। তবে এই উপন্যাস পাশাপাশি আরেকটি বিষয়কেও স্পষ্ট করে যে, চিন্তার গতিসীমা এবং বিস্তৃত পরিধি অঙ্কনেও নারীর কারিশমা অনেক।


একদা বিশ্ব ইতিহাসে নারী ছিল শুধু ভেদনযোগ্য একখানা উর্বর জমিন। তবে সময়ের পরিক্রমণ এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির বদলে নারী এখন এগিয়ে চলছে প্রায় সমানে সমানে। সেই দৃষ্টিভঙ্গির এক উজ্জ্বল ফসল আজ বাংলাদেশ।


নারীর ক্ষমতায়ন অর্জন এবং তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বে বাংলাদেশ আজ শুধু একটি প্রশংসনীয় রাষ্ট্র নয় বরং একই সাথে অনুকরণীয় রাষ্ট্র বটে। কারণ ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার’ নেতৃত্বে ‘মাতৃ প্রজনন ও শিশু মৃত্যুহার’ হ্রাসে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ আজ তারা পেয়েছেন ‘সাউথ সাউথ পুরস্কার’। নারীর ‘স্বাক্ষরতা’ সাফল্যে পেয়েছেন জাতিসংঘের ‘শান্তি বৃক্ষ’ পুরস্কারও।


সমাজের লিঙ্গ বৈষম্যকে কাটিয়ে ওঠার তাগিদে বর্তমান সরকার নিত্য নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। যার ফলাফলও আমাদের সামনে দৃশ্যমান। কারণ, লিঙ্গ বৈষম্যকে কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে এই রাষ্ট্রটি এখন পেছনে ফেলেছে এশিয়ার ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মতো রাষ্ট্রকেও। বিশ্বের ১৪৫টি রাষ্ট্রের মাঝে করা জরিপে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের অবস্থান যেখানে যথাক্রমে ১০৮, ৮৪ ও ১৪৪, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৪তম।


জরিপটি বোঝা যায় সরকারের নেয়া কিছু পদক্ষেপের দিকে তাকালে। অবিভক্ত পাকিস্তান রাষ্ট্রে যেখানে সংসদীয় ব্যবস্থায় নারী সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ছিল মাত্র ১০টি, সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশ তা বাড়িয়ে করেছে ৫০টি। এছাড়া নারীকে আরো কর্মমুখী করে তুলতে সরকারী চাকুরীতে শতকরা ১০ ভাগ কোটা সুবিধাসহ ব্যবসায় শতকরা ৫-৬ ভাগ কমে ঋণ সুবিধা দিচ্ছে সরকার।


নারীর গৌরবপূর্ণ শক্তি মাতৃত্ব অর্জনকে সম্মান রেখে মাতৃকালীন ছুটি চার মাস থেকে বাড়িয়ে করেছেন ছয় মাস। মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও সংবেদনশীলতার স্বরূপ হিজড়াদের দিয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি।


একটা সময় বাংলাদেশীয় সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে চিন্তা করার সুযোগ না দিয়েই ঘর বাঁধার কাজে নিয়োজিত হতে হতো। যার কারণে নারী হয়ে উঠত সেই সংসারের বোঝাস্বরূপ। আর এই প্রক্রিয়াটিকে ঢাকবার জন্যেই হয়তো প্রচলিত ছিল যৌতুক প্রথা। তবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সেই যৌতুক ব্যবস্থাকে নিরুৎসাহিত করতে যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০কে সংশোধন করে করেছে ‘যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৫’।


আরো উল্লেখ্য বিষয় হলো, নারীকে সমাজ ব্যবস্থার সাথে আরো বেশি সম্পৃক্ত ও উদ্ভুদ্ধ করতে শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকার নারীর জন্যে ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ এবং উপজেলা পরিষদে একজন ভাইস চেয়ারম্যানের পদ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছেন।


তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, সরকারের নেয়া সহস্র আয়োজন-উদ্যোগের পরও প্রতিদিনই খবরের কাগজসহ আমাদের চারপাশে নারীরা হচ্ছেন নিগৃহীত ও নিপীড়িত। তবে এর জন্যে কেউ যদি শুধু সমাজ ব্যবস্থার দিকেই আঙ্গুল তোলেন তবে তা হয়তো নিরর্থক হবে। কেননা সমাজ ব্যবস্থার অঙ্গ কিংবা চালক কিন্তু আপনি নিজেও।


বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র, যে রাষ্ট্রের জন্মই হয়েছে রক্তের স্রোতধারায় উজ্জীবিত মিছিল স্লোগানে। তার উপর এখন এই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পীকার সকলেই নারী। কাজেই সেক্ষেত্রে তাদের তো আরো এগিয়ে যাবার কথা।


নৈরাশ্যবাদীতার স্লোগান তুলছি না, তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার যেভাবে নারীকে অন্ধকার থেকে বের করে আনতে নারীর জন্যে অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ, বিনামূল্যে শিক্ষার উপকরণ বিতরণসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছেন, তাতে তাদের পরিসংখ্যান বা জরিপের ফলাফলটা হয়তো আরো ভালো হওয়ার কথা ছিল।


প্রত্যেক ভূমিষ্ঠ শিশু বেড়ে উঠে তার আপন জগতে এবং সেই জগত নির্মাণ-বিনির্মাণে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখে তার পরিবার। একজন সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সেও যে এই জগতের অংশীদার সেটাও সে বোঝে এবং জানে তার পরিবার থেকে। কাজেই শুরুতেই যদি তার সর্বোচ্চ পাঠাগার কিংবা বিদ্যাপীঠ (পরিবার) তাকে নারী-পুরুষের বৈষম্য হটিয়ে ভারসাম্যের অমৃত শেখায়, তবেই হয়তো একটি সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মানবতার জয় প্রতিষ্ঠিত হবে।


লেখক: সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


বিবার্তা/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com