শিরোনাম
বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব অমর হোক
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০১৭, ১৬:৪২
বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব অমর হোক
শাহাব উদ্দিন চঞ্চল
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশের ও ভারতের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধন শুধু প্রতিবেশী দেশ হিসাবে নয়। বিষয়টি আমরা সকলের জানি, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন আজকের নয়, একই দেশ ছিলাম, শুধু ধর্মীয় স্লোগানের কারণে একটু বিভক্ত করা হয়েছিল। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বন্ধনকে সুদৃঢ় করে রেখেছেন বহু আগে। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ আর ভারতের জাতীয় সংগীত ‘জন গণ মন অধিনায়ক জয় হে ভারতও ভাগ্য বিধাতা’ এই দুই জাতীয় সংগীতের রচয়িতা একজন, তিনি আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পৃথিবীর ইতিহাসে এটা এক বিরল দৃষ্টান্ত। এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে আর কোথাও নাই।


১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে এক কোটি লোক ভারতের শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। মুক্তিবাহিনীর সাথে ভারতের মিত্রবাহিনী একত্রে যুদ্ধ করে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বিজয়ের পর থেকে ভারত বাংলাদেশের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ আছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে দু’দেশের সীমান্তে। বাংলাদেশীদের হত্যা, ফারাক্কা বাঁধ আজকের তিস্তার পানি বন্টনসহ আরও অনেক ইস্যু আছে। কিন্তু তাই বলে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না ভারত আমাদের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। বাংলাদেশ বিরোধী যে সকল বিচ্ছিন্ন কর্মকাণ্ড ঘটেছে, এগুলো সকলের চোখে পড়েছে। এগুলো সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার মতো কিছুই নয়।


তিস্তা নিয়ে যে বিরোধ সেটা অবশ্যই সমাধান হতে হবে। বিষয়টি নিয়ে মমতা ব্যানার্জি যতই ছলচাতুরি করেন না কেন, কাজ হবে না। মমতাতো আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে চিরদিন থাকবেন না। আর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যদি এটা সমাধান না করেন, তাহলে ভারতেরই ক্ষতি হবে। ভারত কিংবা পশ্চিমবঙ্গের সাথে আমাদের সম্পর্ক কোনো ধরনের ফাটল ধরাতে পারবেন না মমতা ব্যানার্জি। বাংলাদেশের জনগণকে যারা ভারতবিরোধী স্লোগান দিয়ে উস্কানি দিচ্ছেন, তারাও সফল হবেন না। সম্পর্কের ফাটল ধরাতে বিষয়টি ক্রিষ্টাল ক্লিয়ার এখানে সংস্কৃতিক মেলবন্ধন কবিগুরুর ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ আর ‘জন গণ মন অধিনায়ক জয় হে ভারতও ভাগ্য বিধাতা’।


তিস্তা নিয়ে নরেন্দ্র মোদি যতটুকু আন্তরিকতা দেখাচ্ছেন মমতা ব্যানার্জি ততোটুকু নয়। মমতা ব্যানির্জি একজন বাঙালী হয়ে শুধু পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীদের স্বার্থ দেখবেন এমনটা এপার বাংলার বাঙালীরা আশা করেনি। মমতা ব্যানার্জিকে এপার বাংলার বাঙালীরাও পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীদের মতো দেখেন, কিন্তু কেন তিনি এসব করছেন সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।


পশ্চিমবঙ্গের পরে ভারতের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে মমতা ব্যানার্জির একটা বড় অবস্থান সৃষ্টির সুযোগ আছে। নরেন্দ্র মোদি কেন বার বার মমতা ব্যানির্জিকে কাছে টানছেন তিস্তা নিয়ে, এটা যদি তিনি বুঝেও না বুঝার ভান করেন, তাহলে বলার কিছু নেই। মমতা ব্যানার্জি কেবলই পশ্চিমবঙ্গের সামান্য স্বার্থের জন্য এপার বাংলার কোটি মানুষের জীবন অতিষ্ট করতে চান, তাহলে তিনিই হবেন খলনেত্রী।


ভারত-বাংলাদেশের মেলবন্ধন ছিন্ন করা সম্ভব হবে না। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তা ইস্যু বা অন্য যে কোনো ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের সাথে একত্রে কাজ করার যে মনোভাব দেখাচ্ছে, মমতা ব্যানার্জি হয়তো কিছু সময়ের জন্য একটা বাঁধা সৃষ্টি করেছেন, তা কিন্তু বেশী দিন ধরে রাখতে পারবেন না। গত ৭ এপ্রিল ভারতে জি টিভি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে যে মন্তব্য করেছে, আশা করি, ভারতের জনগণের সাথে সাথে মমতা ব্যানার্জি বিষয়টি ভাল করে আঁচ করতে পেরেছেন। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সীমান্তে যে সকল আন্তর্জাতিক সমস্যা আছে সেগুলোর কথা বিবেচনা করলে ভারতের উচিত যে কোনো মুল্যের বিনিময়ে বাংলাদেশের সাথে ছোট ছোট সমস্যাগুলি নিরসন করিয়ে উপমহাদেশের শান্তি রক্ষার্থে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকা।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর বাংলাদেশকে নতুন করে আরো এক ধাপ উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এ উপলক্ষে নিউ দিল্লি শহরকে নতুন এক নিউ দিল্লি রূপে সাজানো হয়েছে। শহরের বিভিন্ন সড়ক ও প্রান্তে উড়ছিল দু’দেশের পতাকা। দিল্লির পার্ক স্ট্রিটের নাম পরিবর্তন করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রপতি ভবনে অবস্থান করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এটা একটি বিরল দৃষ্টান্ত। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে গিয়েছিলেন, তখন নিউ দিল্লিতে ভারতে রাজধানীর এক পাঁচতারা হোটেলে তিনি চেক-ইন করেছিলেন। আর এবার শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ভবনে অবস্থান করেছেন। স্বার্থক ও সফল হয়েছে শেখ হাসিনার এ ভারত সফর।


বাংলাদেশ আজ নতুন উচ্চতায় অবস্থান করছে।


চার দিনের সফরে শুক্রবার যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দিল্লি পৌঁছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রটোকল ভেঙে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে পালাম বিমানঘাঁটিতে উপস্থিত হন। সফরে তিস্তা চুক্তি না হলেও, বাংলাদেশ ও ভারতের বর্তমান সরকারের সময়েই তা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের লাইন অব ক্রেডিটসহ দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন খাতে ২২টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সফরে কঠিন ভাষায় দিল্লিকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিস্তা চুক্তির ওপরই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের আগামী দিনের রূপান্তর নির্ভর করছে। মমতা ব্যানার্জির তিস্তা নিয়ে যাই বলুন না কেন, নরেন্দ্র মোদি সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে তিস্তার পানিবণ্টন বিষয়ের সমাধান করবেন, এটা আশা করা য়ায়। নরেন্দ্র মোদি এ বিষয়ে আন্তরিক, এটা আমাদের বিশ্বাস।


জি-টিভির সংবাদ বিশ্লেষনের সাথে একমত পোষণ করি। ভৌগলিক অবস্থানের কারনে উপমহাদেশের রাজনীতিতে বাংলাদেশ সব সময় সুবিধাজনক অবস্থানে। এশিয়ার দুটি ক্ষমতাধর রাষ্ট্র ভারত ও চীনের মধ্যে সব সময় একটা স্নায়ু যুদ্ধ আছে। এক্ষেত্রে দিল্লী-বেইজিং উভয়ের প্রয়োজন বাংলাদেশের সাথে সুসস্পর্ক রাখা। বাংলাদেশের বর্তমান পররাষ্ট্রনীতিতে শেখ হাসিনা সরকার ঘোষণা দিয়েছেন সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়। মমতা ব্যানার্জিকে ভারতের ভৌগলিক অবস্থান এবং চীন ভারতের মধ্যকার স্নায়ু যুদ্ধটি ভুলে গেলে চলবে না। চীন আরব সাগর, ভারত মহাসাগর থেকে শুরু করে চারিদিকে যে বেড়া দিচ্ছে, এতে করে ভবিষ্যতে ভারতের সমস্যায় পড়তে হবে। চীন-শ্রীলংকায় আগেই একটি পোর্ট নির্মাণ করেছে পাকিস্তান, তাদের মিত্র আর বাংলাদেশ আরব সাগর ভারত মহাসাগর আয়ত্বে নিতে চাইবে। এক্ষেত্রে মমতা ব্যানার্জির উচিত বৃহত্তর স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া। বাংলাদেশ এবং ভারতের বন্ধুত্ব ও সেতুবন্ধনে নিজে একজন বাঙালী হয়ে বাঁধা সৃষ্টি করে লাভ কি! সফলতো হতে পারবে না। বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই স্বাধীনসার্বভৌম দেশ। বন্ধুত্বকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিন শ্রীমতি মমতা ব্যানার্জি।


ভারতের শীর্ষস্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন শেখ হাসিনাকে ভারত সফরে নয়াদিল্লির ইমপেরিয়াল হোটেলে সংবর্ধনা দেন। ওই অনুষ্ঠানে ভারতেরই বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা শেখ হাসিনাকে বিশ্বনেতা হিসেবে উল্লেখ করে বক্তব্য দেন। বাংলাদেশ-ভারত সঙ্গে বন্ধুত্ব অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ এটা ভুলে গেলে চলবে না। সাত বছর আগের শেখ হাসিনা আর আজকের শেখ হাসিনা মোটেই এক নন। ভারত বাংলাদেশকে এক নম্বর বন্ধু হিসাবে প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়েছে। শেখ হাসিনা এখন বিশ্ব নেত্রী। বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুলের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ব্যক্তিগত বন্ধু চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশকে যে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার অঙ্গীকার করে গেছেন, তার সঙ্গে পাল্লা দেয়ার মতো আর্থিক সক্ষমতা এই মুহূর্তে ভারতের নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মমতা ব্যানার্জি দিদি বলে বুকে জড়িয়ে ধরতে দেখেছি। অন্ততঃ দিদির মুখ রাখেন শ্রীমতি মমতা ব্যানার্জি। সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের লাইন অব ক্রেডিটসহ দু’দেশের মধ্যে বিভিন্ন খাতে ২২টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এজন্য দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় জড়িত। শুধু তিস্তা নিয়ে এমন করছেন কেন?


এদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরোধীতার খাতিরে যারা বিরোধীতা করেন, তাদের উচিত এই সকল নোংরা রাজনীতি পরিহার করে দেশের স্বার্থকে আগে দেখা। যে কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকুক, এ ধরনের পরিস্থিতিতে দলমত নির্বিশেষে একত্র হয়ে সরকারকে সহায়তার করা। বাংলাদেশ এখন এই অবস্থানে নয় যে, যখন যার যা ইচ্ছা তা করবে, আর বসে থাকবে, বাংলাদেশ এই সময় পার করে এসেছে। সেই পার হওয়াটা আমাদের অনেক আগে হওয়ার কথা ছিল। বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় থাকার কারণে বাংলাদেশ এগোতে পারেনি। এখন সেই সময় নেই, সেই সরকারও নেই, সেই নেতৃত্বও নেই। দেশকে অস্থিতিশীল করে সুবিধাবাদীরা সব সময় ষড়যন্ত্র করে আসছে, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণে উন্নয়নে বাঁধা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সৃষ্টিকারীদের মোকাবিলা করে দেশ এখন মাঁথা উচু করে দাঁড়াতে চলেছে। এই দেশের জনগণকে আর জুজুর ভয় দেখায়ে লাভ নেই। বখাটে রাজনৈতিক নেতাদের পাগলের প্রলাপে এখন আর কেউ কান দেয় না।


বাংলাদেশ এখন আর কিসিঞ্জারের তলা ঝুড়ি নয়। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার পর দেশে যে রাজনীতি শুরু হয়েছিল মানি ইজ নো প্রব্লেম দিয়ে সেই রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসার এখনই সময়। এত সব বখাটে রাজনীতিচর্চার মধ্যে থেকেও দেশ যে এগিয়ে চলেছে, সুবিধাবাদি আর হাইব্রিডদের যন্ত্রণায় অতিষ্ট রাজনীতিতে আবার নতুন দিনের সুচনা হতে চলেছে। যতই ষড়যন্ত্র হোক না কেন, বিশ্বের মুক্তকামী মানুষের নেতা জাতির জনক বঙ্গন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোদ্ধা জাতির চার নেতার একজন ১৯৭৫ সালের আগে রাজনীতিতে যেমন বঙ্গবন্ধুর আর সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন, তেমনি আজকের রাজনীতিতে একজন শেখ হাসিনা আর একজন সৈয়দ আশরাফ রয়েছেন। রাজনীতিতে দুই প্রজন্মের দু’জনের এক হয়ে কাজ করাটা আমাদের জন্য অনেক সৌভাগ্যের বিষয়। উন্নয়ন আর বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার পাশে সৈয়দ আশরাফদের বড়ই প্রয়োজন।


লেখক : যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা।


বিবার্তা/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com