শিরোনাম
দেশ বিক্রি জুজু : হায়রে বাংলার রাজনীতি
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০১৭, ২১:৪৬
দেশ বিক্রি জুজু : হায়রে বাংলার রাজনীতি
দারুস সালাম শাকিল
প্রিন্ট অ-অ+

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান কারো কাছেই অজানা নয়। সেখানে ভারতের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শোধ নেয়ার স্বার্থ থাকতে পারে বৈকি! তাই বলে অবদান তো অস্বীকার করতে পারি না। আমাদের লাভ হয়েছিল কিনা?


২৭ মার্চ দুপুরে কলকাতা রেডিও তাদের নিয়মমাফিক অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ রেখে বাংলা দেশাত্মবোধক গান আর বাংলাদেশে সামরিক অভিযানের সংবাদ বারবার পরিবেশন করতে থাকে। রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি, ঢাকার শিক্ষার্থীরা মধ্য-মার্চেই যেটিকে জাতীয় সংগীত ঘোষণা করেছিল, ঘন ঘন বাজানো হয়।


’৭১ এর এপ্রিল নাগাদ প্রায় তিন লাখ মানুষকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। প্রতিদিন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ শরণার্থী হতে শুরু করে। ফলে গুণগতভাবে একদম ভিন্ন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। এ সংকট তখন বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার প্রয়োজন দেখা দেয়। এ কাজে ভারত কালবিলম্ব করেনি।


ভারত দক্ষ হাতে শরণার্থী সমস্যারও একটা সমাধান করেছিল। বাংলাদেশের কেউ ভারতে পৌঁছালে খাদ্য, আশ্রয় ও নিরাপত্তা মিলত। জুন মাস নাগাদ প্রতিদিন এক লাখ করে মানুষ ভারতে শরণার্থী হতে থাকে। ভারতের অর্থনীতিতে এর প্রচণ্ড চাপ পড়ে। অর্থনীতির দুর্বলতা সত্ত্বেও ভারতের আচরণ ছিল হৃদ্যতাপূর্ণ।


অন্যদিকে, শরণার্থীরা নির্বাসিত সরকারের গেরিলা সংগ্রহেরও বাস্তব সমাধান করে দিয়েছিল। প্রচুর পরিমাণে মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া যেত শরণার্থীদের মধ্য থেকে। ভারতের কোনো নিরাপদ স্থানে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পরে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে দেশে পাঠানো হতো।


সবচেয়ে বড় কথা চার হাজার ভারতীয় সেনার জীবন বিলিয়ে দেয়া আর দশ হাজার সেনার মারাত্মকভাবে আহত হওয়া চারটেখানি কথা নয়। এতো কিছুর পরেও বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফেরার আগে ভারতের পালাম বিমানবন্দরে নামেন। ইন্দিরা গান্ধী তাকে রিসিভ করে জিজ্ঞেস করেন- কেমন আছেন?


বঙ্গবন্ধু বলেন- বেহেনজী, আগে বলেন, বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারতীয় সৈন্য আপনি কবে সরিয়ে নেবেন? ইন্দিরাজী বললেন, “এটা হবে আপনার জন্মদিনের উপহার”।


ভারতীয় স্ট্র্যাটেজিস্টরা সমালোচনা করতে করতে নীল করে ফেলে ইন্দিরা গান্ধীর, কেন তিনি সেনা সরালেন বাংলাদেশ থেকে- এটা নিয়ে। ওই স্ট্র্যাটেজিস্টরা কল্পনাও করতে পারবে না, ছয় ফুট দুই ইঞ্চি, মোটা চশমা পরা ওই লোকটার পার্সোনালিটির সামনে কোনো স্ট্র্যাটেজি খাটে না। আর তাই বাংলার মাটিতে কোনো বিদেশি সেনা হাঁটেনা। ভুখা-নাঙা বাংলাদেশের মানুষ চলে মাথা উঁচু করে, সগর্বে।


অথচ বহু দেশে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন মার্কিন-রুশ মিত্রসৈন্য এখনো সরানো হয়নি। গালফ যুদ্ধে কুয়েত আর সৌদিতে দশ হাজার করে যে মার্কিন মিত্রসৈন্য অবস্থান নিয়েছিল আজ এতবছর পর বেড়েছে, কমেনি।


তবু আওয়ামী লীগ ভারতের দালাল!


ভারতকে কোনো ছাড় কি বঙ্গবন্ধু কন্যা দিয়েছেন?যদি তাদের সাথে আমাদের চাহিদানুযায়ী চুক্তি হয় এবং কার্যত যদি পানি বণ্টন করতে না পারে, বা না দিতে চায় (কোনো দেশই নিজের প্রয়োজন না মিটিয়ে অন্য দেশকে পানি দেবে না)। আমরা কি করতে পারবো? কার কাছে বলবো? আমেরিকার কাছে?


যে আমেরিকা ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কী না করছে? তাদের রাষ্ট্রপতি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচীব, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, প্রতিরক্ষা সচীব, সেনা প্রধান কিছুদিন পর পর ভারত সফর করে, অবশ্যই আমাদের পানির জন্য আমেরিকা নিজেদের গড়ে তোলা বন্ধুত্ব মূল্যায়ন করবে না তা কোনো দিনই হবে না।


এমতাবস্থায় আমরা কী করতে পারি? ভারত সরকার চাইছে আমাদের বেশি পানি দিতে। কিন্তু রাজ্য সরকার তার রাজ্যের প্রয়োজনকে বড় করে দেখছে। এমতাবস্থায় যদি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দেয়, হরতাল ডাকে, তবে ক্ষতি হবে কার? সবারই মনে রাখা উচিৎ যে, প্রয়োজনটা আমাদের।


বঙ্গবন্ধু কন্যা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজি করিয়েছেন ইতোমধ্যে। মমতার ঘাড়তেড়ামীও কমে আসছে। একটা ব্যারেজ খুলেও দেবে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে মমতাকে ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে, তিস্তা চুক্তি করা গেলে ওই নদী সংস্কার এবং পানি সরবরাহের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে বিপুল ঋণ পাওয়া যাবে। তার ফলে এখন তিস্তা প্রকল্পে উত্তরবঙ্গের যে ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে পানি যায়, ভবিষ্যতে তার পরিমাণ ৯ লাখ হেক্টরে দাঁড়াবে। প্রতিবেদনের দাবি, বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক থেকে বিপুল ঋণ পাওয়ার সুযোগ মমতাকে তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে ইতবাচক মনোভাবের দিকে ধাবিত করেছে।


এইসব পরিস্থিতি কিন্তু এমনি এমনি সৃষ্টি হয়নি। এটা দেশরত্ন শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সাফল্যের আর দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত। তারপরও অই মান্ধাতার আমলের দেশবিক্রি নামক জুজু।


হায়রে বাংলার রাজনীতি!!!


লেখক: সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ


বিবার্তা/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com