প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সম্ভাব্য ৩৩টি চুক্তির ভেতর কি কি থাকতে পারে তা নিয়ে সাংবাদিক, রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক মহলে নানা গুঞ্জনে একশ্রেণি মাঠ গরম করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে তরুণ প্রজন্ম চুক্তির বিষয়গুলোর সাথে সরাসরি যুক্ত না থাকায় তাদের কাছে একমাত্র ভরসা শেখ হাসিনার প্রতি অগাধ আস্থা যে, তিনি যা করবেন দেশের সর্বোচ্চ স্বার্থের জন্য তীক্ষ্ণ কূটনৈতিক চেষ্টাটাই করবেন।
তবে ইতিমধ্যে ভারতের পার্ক স্ট্রিটকে বঙ্গবন্ধু সড়ক নামকরণ করে বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর ব্যাপারটি দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টাকেই ইঙ্গিত দেয়।
ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক স্পর্শকাতর বিষয় থাকা স্বাভাবিক। এর মধ্যে বাণিজ্যিক, যোগাযোগ, নিরাপত্তা, সীমান্ত ও অন্যান্য বিষয় রয়েছে; ফলে দুই দেশেরই সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে চুক্তিতে যেতে হয়। যেখানে কোনো এক দেশের অধিক লাভবান হয়ে অন্য একটি দেশের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া চলে না। কারণ উভয় দেশের জনগণেরই নিজ দেশের সরকারের প্রতি আকাঙ্খার জায়গা থাকে, যা ওই দেশের সরকার গঠন করা রাজনৈতিক দলের প্রতিশ্রুতির মধ্যে পড়ে। সেক্ষেত্র রাষ্ট্রপ্রাধানের কৌশলগত অবস্থানের কথা বিবেচনা করলে সীমান্ত চুক্তি ও ছিটমহলের বিনিময়ের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা বরাবরের মতো তার দীর্ঘ দিনের রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা ও কূটনৈতিক মেধার পরিচয় সুচারুভাবে দিয়েছেন, যে চুক্তিতে বাংলাদেশ স্পষ্টত লাভবান হয়েছে।
তবে বর্তমানে ভারত সফরে সাম্ভাব্য ৩৩টি চুক্তির মধ্যে দুটি চুক্তি নিয়ে বিভিন্ন মহলে কথা উঠলেও, কোনো বিষয় নিশ্চিত না হওয়ায় অনেকেই এর সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছেন। চুক্তি দুটি হল- প্রতিরক্ষা ও তিস্তা চুক্তি; যা দুই দেশের জন্যই অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়।
বিএনপি-সহ কিছু মহলের পক্ষ থেকে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে এমনভাবে যে, ঠিক এ সফরেই তিস্তা চুক্তি না হলে এবং প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়ে গেলে হয়ত বাংলাদেশ রসাতলে চলে যাবে। কিন্তু এছাড়া দুই দেশের মধ্যকার আন্তঃসংযোগ ও বাণিজ্য, গঙ্গা ব্যারেজ, বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা, মহাকাশ গবেষণা, রেল ও বাস চলাচল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও সম্প্রচার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মতো চুক্তিগুলোও হতে পারে; যা আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য প্রাপ্তির মাইলফলক হবে। তারা সে বিষয়ে নিশ্চুপ।
প্রতিরক্ষা চুক্তি হলে তাতে কি কি বিষয় দেয়া-নেয়ার থাকবে তা নিশ্চিত না হয়েই যেমন পরিবেশ উত্তপ্ত করার কূটকৌশল চলছে, তেমনি তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন হওয়া যদিও আমাদের প্রয়োজন, তবে তা না হলেও প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর যে অন্য চুক্তিগুলোর জন্য যথেষ্ট ফলপ্রসূ ও দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরো মজবুত করে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় যে তীব্র গতি আনা যাবে- তা নিশ্চিত।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী নিশ্চিত করেছেন চুক্তির সবই জনগণের সামনে প্রকাশ করা হবে। এমতাবস্থায় একদিকে একটি মহলের অপপ্রচারের কূটকৌশলের পর তিস্তা চুক্তি না হলে এবং প্রতিরক্ষা চুক্তি হলে যেমন তারা নানা অপব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ পাবে। অন্যদিকে এক্ষেত্রে আমাদের উচ্চ মহলের নিশ্চুপ থাকা যেমন বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়; তেমন এ ব্যাপারে দেশবাসীর স্বচ্ছ ধারণা রাখা সফর পরবর্তী দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিজেদের ভেতরে স্বস্তির মনোভাব এনে দেয়, যা আমাদের দেশের মানুষের সচেতন নাগরিক সমাজ হিসেবে সার্বিক অগ্রযাত্রার একটি নতুন ধাপ তৈরি হয়।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিবার্তা/নিশি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]