শিরোনাম
আমাদের একজন সুপারহিরো আছে, তাঁর নাম মাশরাফি
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০১৭, ০১:০৭
আমাদের একজন সুপারহিরো আছে, তাঁর নাম মাশরাফি
মোফাজ্জল হোসেন সুমন
প্রিন্ট অ-অ+

একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি নাকি আরেকটি অধ্যায়ের সূচনা?


মাশরাফি যখন তার টি-টুয়েন্টি ইন্টারন্যাশনাল ময়দানে শেষ উইকেটটি নিলেন কেমন যেনো উদাসীন লাগছিল তাঁকে।
আমি তাকাচ্ছিলাম তাঁর চোখের দিকে, তার দুটো চোখে যেনো অশ্রু ফোঁটা ছলছল করছিলো। এই ভেবে কি এই লাল-সবুজের জার্সি গায়ে এই আহত টাইগার আর টি-টুয়েন্টি ইন্টারন্যাশনাল ময়দানে উইকেট নেয়া হবেনা!


শেষ বলটিও করলেন একটু সময় নিয়ে যেনো আরো একটিবার প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের পরাভূত করেন। আম্পায়ারের কাছ থেকে যখন ক্যাপটি নিলেন হাত দিয়ে চোখের কোণের অশ্রু মুছলেন নাকি ঘাম বোঝা গেলো না!


ম্যাচ শেষে উপরে হাত তুলে স্রষ্টাকে ধন্যবাদ জানালেন, জানানোর তো কথাই এমন জীবন কজন মানুষের হয়। ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে দর্শকদের দিকে যখন তাকালেন টিভি স্ক্রিনে তখন গ্যালারিতে থাকা বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকার লাল রংটাকে বেশ ডিপ মনে হচ্ছিলো। মাশরাফির প্রিয় লাল-সবুজ পতাকা। পৃথিবীর কোনো অধিনায়ককে আমি কোনোদিন পতাকা মাথায় দিয়ে পুরস্কার বিতরণীতে যেতে দেখিনি কিন্তু মাশরাফি গিয়েছেন গত বিশ্বকাপে এবং স্মরণ করেছেন, শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এই লাল-সবুজ পতাকা যেই বীর মুক্তিযোদ্ধারা এনে দিয়েছেন তাঁদের।


শুধু কি তাই! সাংবাদিকরা, প্রিয়জনরা যখন তাকে বারবার হাঁটুর চোটের কথা নিয়ে খেলার প্রশ্ন করতো তিনি বারবার স্মরণ করিয়ে দিতেন রণাঙ্গনে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের কথা, যে তাঁরা যদি আহত অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে পারেন তবে মাশরাফি কেনো এই সামান্য চোট নিয়ে এই স্বাধীন দেশের জন্য খেলতে পারবেন না!


সামান্য চোট! সাত-সাতবার অপারেশন হয়েছে এই হাঁটুতে! অন্য প্লেয়াররা ফিল্ডিংয়ের সময় ডাইভ না দিলে দর্শকরা বকা-ঝকা করে কিন্তু মাশরাফি যখন ডাইভ দেন তখন সবার বুকের ভেতর কেমন যেনো আঁতকে উঠে! টিভি স্ক্রিন ভেদ করে মাশরাফির উঁহু পৌঁছে যায় ষোলো কোটি মানুষের হৃদয়ে!
এমন জীবন কজন পায়!


পৃথিবীতে অনেক লিজেন্ডের বিদায় করুণ বা ট্র্যাজিক হয়। ক্রিকেট বিশ্বে হয়তো মাশরাফি লিজেন্ড কিনা সেটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হতে পারে কিন্তু আমাদের কাছে তো মাশরাফি লিজেন্ডের চেয়ে বেশি কিছু। বাংলাদেশ টিমের আজকের অবস্থানের পিছনে মাশরাফির নেতৃত্বকে অস্বীকার করে এমন কে আছে!


অনেকে তাঁর অবসর নিয়ে অনেক কথা বলছেন। আমি বলবো মাশরাফি সঠিক সিদ্ধান্তটিই নিয়েছেন; সেটা যে কারণেই হোক। গুণীজনের বা গুণের মূল্যায়ন আমরা জাতিগতভাবেই করতে শিখিনি। তাই ক্যারিয়ারের পড়ন্ত সময়ে বিদায় নেয়ার চেয়ে এই সময় বিদায় নেয়াই শ্রেয়। একজন বীরকে বিদায় বীরের মতোই মাথা উঁচু করে নিতে হয়। মাশরাফি বিদায় না নিলে একসময় আমরাই হয়তো বলতাম কেন বিদায় নেয় না!


অথচ আজ তাঁর জন্য সতীর্থরা মাঠে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছে, কতো কোটি ভক্ত হৃদয় কেঁদেছে তার হিসাব নেই!


আমি কিছুদিন আগে আমাদের তরুণদের তেলবাজি, চামবাজি, পরশ্রীকাতরতার জন্য আমাদের একজন সুপারহিরো না থাকাকে দায়ী করেছিলাম।


এখন আমাদের একজন সুপারহিরো আছে, তাঁর নাম মাশরাফি। মাশরাফির অবসরে যেমন একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো তেমনি আরেকটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা শুরু হলো। এই সুপারহিরোকে সামনে রেখে আমাদের পরের প্রজন্মকে আরো সুপারহিরো তৈরি হবে।


আমার নিজের অনুভূতি আমি ব্যক্ত করছি মহাকবি হোমারের ওডেসির আলোকে।
If they ever tell my story let them say that I walked with the giant. Men rise and fall like winter wheat, but this name will never die. Let them say I lived in the time of Mashrafe, the fighter.


গুডবাই মাই ক্যাপিটানো, ইউ উইল বি মিসড...

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com