একদিন আমার বুয়া এসে আমাকে বলল, "ছেলে ফাইভ পাস করছে, ঈদের বেতন-বোনাস সব মিলাইয়া একটা ইসমাট মোবাইল কিনে দিলাম। বাড়িওয়ালী আমাকে বকা দিতাছে। কেমুন ছোটুলুক! ছেলের আবদার মিটাতে হয় না আফা! " (বাড়িওয়ালী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর। বুয়া তার বাসার কেয়ারটেকার)।
বুয়ার ছেলের স্মার্ট ফোন আছে শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম! কারণ, এ ফোন ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য তখনো আমাদের হয়নি।
বুয়ার কথা শুনে আমি বললাম, "উনি তো ঠিক কথাই বলেছেন। অবশ্যই ছেলেমেয়ের আবদার মিটাতে হয়। কিন্তু সব আবদার মিটাতে হয় না। তুমিতো জানো না 'ইসমাট মোবাইল' বাচ্চাদের কী ক্ষতি করে!"
এখন আমার ছেলে কলেজে পড়ে। সে একটা ভাঙ্গা মোবাইল নিয়ে যায়। তাও নিতে চায় না। কলেজ দূরে, তাই আমি হাতে ধরিয়ে দিই।
বুয়া আমার কথা শুনে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়েছিল, আমি তার মনের ভাষা স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম। সে মনে মনে বলছে, "ফইন্নি, তোগো আল্লায় বিদ্যা দিলে কি অইবো, অন্তর দেয়নাইক্কা। "
এর পরে বুয়ার ছেলেকে মনোযোগ দিয়ে মোবাইল চালাতে অনেক দিন দেখেছি। বুয়াকে আর কিছু বলিনি। কারণ, নিজের সন্তানের বদনাম শুনতে কারো ভালো লাগে না। আমারও না। যা বলার আগেই তো বলেছি। তাছাড়া আমারও ছেলেমেয়ে আছে।
বেশ কিছুদিন পর বুয়া আমাকে বলল, "আফাগো, পোলারে ইসমাট ফোন দিয়া ভুল করছি গো! আমি তো এতোসব বুঝি না গো! "
এ তো গেলো এক নিরক্ষর মায়ের কথা। আমরা যারা নিজেদের শিক্ষিত বলে দাবি করি, তারা কি জানি ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে কি আছে? অনেক বাবা-মাকে দেখি স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই ছেলেমেয়েদের ডিজিটাল বানিয়ে ফেলে এবং তৃপ্তির ঢেকুর তোলে। অথচ নিজে কিছুই জানে না। বাচ্চাদের মুখ থেকে এখনো দুধের গন্ধ যায়নি, অথচ ভাব দেখলে মনে হয়, যেন বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। বাব-মায়েরা এসব শিশুদের পরিবর্তন কি দেখেন না! এসবের কারণ কি খুঁজে দেখেন না!
আমি অনেককে সতর্কও করেছি। কিন্তু তাদের হাবভাব দেখে মনে হয়েছে, আমার তো কোনো কাজ নেই, তাই ফেসবুক চালাই। আবার অনেক পোলাপান আমাকে ব্লক মেরেছে। :) :)
যে যুগ চলছে ! শাসন-বারণ কেউ তো মানছে না! তবু চেষ্টা করতে দোষ কি। প্রযুক্তিকে তো আর শাসন করা যাবে না। কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ, তা সন্তানকে শিখানোর দায়িত্ব অভিভাবকদের নিতে হবে। তার জন্য অভিভাবকদেরও একটু ডিজিটাল হতে হবে (যাদের পক্ষে সম্ভব আরকি) ।
আল্লাহ, আমার সন্তানসহ পৃথিবীর সকল বাবা-মায়ের সন্তানদের সৎ পথে চলার তৌফিক আপনি দান করুন। আমীন!
লেখক : গৃহিনী
বিবার্তা/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]