শিরোনাম
জঙ্গি দমনে রাষ্ট্রকে আলাদা বাজেট করতে হবে
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০১৭, ১৯:৩৬
জঙ্গি দমনে রাষ্ট্রকে আলাদা বাজেট করতে হবে
এইচএম আলআমিন আহমেদ
প্রিন্ট অ-অ+

জঙ্গি, জঙ্গীবাদ নিয়ে কয়েকদিন যাবৎ অনেকের অনেক ধরনের লেখা দেখছি, আর কিছু জিনিস ভাবছি, অনেকেই জঙ্গিদের আক্রমণে যারা মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকে দেশপ্রেমিক, দেশের জন্য জীবন দিয়েছে এমন অনেক কথা লিখেছেন।


আমার ধারণা ৩০শে মার্চ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় পরাজয় যায় হোক, তখন আবার আপনারা সে ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবেন। বেমালুম ভুলে যাবেন সিলেটে নিহত দুই ছাত্রলীগ নেতা, পুলিশ কর্মকর্তা, সেনাবাহিনী কর্মকর্তাসহ নিহত সবাইকে!


সুতরাং যারা বলছেন জঙ্গিদের হাতে নিহতরা দেশপ্রেমিক, দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের উদ্যেশ্যে এবং সরকারের উদ্যেশ্যে বলতে চাই; আমরা সেসব দেশপ্রেমিক, দেশের জন্য জীবন দান করা মানুষগুলোর পরিবারের জন্য কি করেছি! আমরা কি জানি গুলশানের ওসি সালাউদ্দিন, এসি ওবায়দুল, ব্লগার অভিজিৎ কিংবা জঙ্গিদ্বারা আক্রান্ত, জামাত শিবিরের নির্যাতনে নিহত-আহত পরিবারগুলো কেমন আছে? রাষ্ট্র কি এতই দেউলিয়া হয়ে গেছে? দেশের জন্য জীবন শুধু নিবেন, কিন্তু কিছু দিবেন না!


অনেকেই হয়তো ভাবছেন, আমি কী বুঝাতে চাচ্ছি? স্পষ্ট করে বলতে চাই, জঙ্গিবাদ এমনি-এমনি, সৃষ্টি হয়নি, সৃষ্টির পিছনে দেশীয়-আন্তর্জাতিক মদদ রয়েছে। জঙ্গি সৃষ্টি করতে রয়েছে মদদ দাতাদের পরিচর্যা ও অর্থদান।


জঙ্গিদের যেমন বুঝানো হয়, ধর্মের জন্য, দেশের জন্য জীবন দিলে বেহেস্ত নিশ্চিত, তেমনি তাদেরকে প্রচুর অর্থদান করা হয়।


একটি রাষ্ট্রের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য, জীবন ধারনের মৌলিক চাহিদার জন্য যেমন অর্থ বাজেট করা হয়; তেমনি জঙ্গি দমনের জন্যও রাষ্ট্রকে আলাদা বাজেট করতে হবে।


জঙ্গিবাদ নির্মুলের জন্য কিছু গৃহিত পদক্ষেপ নিতে হবে;-


১) জঙ্গি আক্রমণে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে একটি যথেষ্ট পরিমান অর্থ দিতে হবে। যাতে জঙ্গি দমনে সবাই এগিয়ে আসে এবং জঙ্গিরা নিরুৎসাহিত হয়। ধরে নেয়া যাক, নিহতের পরিবারকে এক কোটি টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকা সরকার সম্মাননা দিতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে, টাকাটা যেন খুব বেশি ও না হয়, যাতে আবার নিজেরাই আত্মহত্যা করে বা নাটক করে জঙ্গি নাম বিক্রি না করে!


তাই টাকাটা আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারণ করা যেতে পারে।


২) কেউ যদি জঙ্গি হয়, জঙ্গি কর্মকাণ্ড পরিচালনায় দোষী সাব্যস্ত হলে জীবিত-মৃত যায় হোক, তাদের পরিবারকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে।


কেননা জঙ্গিদের ধারণা, তারা মরে গেলেও জান্নাতে যাবে, কিন্তু তাদের পরিবারকে বিচারের আওতায় আনলে, তাদের যেমন পিছুটান সৃষ্টি হবে, তেমনি পরিবারও নিজেদের বিপদ এড়ানোর জন্য আরও বেশি সতর্ক হবে।


সরকারের পক্ষে সবাইকে প্রচার করে, সচেতন করা সম্ভব নয়, এই আইন বাস্তবায়ন হলে নিজ দায়িত্বে সবাই সচেতন হবে।


৩)জঙ্গিবাদে প্ররোচনা, মদদদাতা, অর্থদাতা, হোতা সবার পরিবারের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে, আন্তর্জাতিক আইনে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।


৪) জঙ্গি আক্রমণে নিহত ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্মাননা দিয়ে দাফন করতে হবে।


৫) জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারনা বৃদ্ধি করতে হবে।


৬) জঙ্গি দমনে সফল জনগণ কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে অর্থসহ বিভিন্ন উপাধি দ্বারা সম্মানিত করতে হবে।


মনে রাখতে হবে, জঙ্গিবাদকে, জামাত-শিবিরের উগ্রতাকে কোনোভাবেই ছোট করে দেখলে চলবে না। একটি দেশের জন্য জঙ্গিবাদ একটি বড় হুমকি!


কেন একটি দেশের সাধারণ নাগরিকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে পর্যন্ত বিনা অপরাধে জঙ্গিদের হাতে জীবন দিতে হবে? আপনি, আমি তার শিকার হবো না কি গ্যারান্টি রয়েছে?


দেশের প্রতিটা নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা আগে অনিবার্য বলে আমি মনে করি।


তাই জঙ্গিবাদ নির্মুলে অবশ্যই রাষ্ট্রকে বাজেট প্রণোয়নসহ গৃহিত পদক্ষেপ নেয়া জরুরিভাবে সময়ের দাবী মনে করছি।


লেখক : সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ


বিবার্তা/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com