বেঁচে থাকলে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল ৫৩তম বছরে পদার্পণ করতেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান হওয়াতে পুরো জাতিরই আদরের ছিলেন শেখ রাসেল। আজ তাঁর ৫৩ তম জন্মদিন। ১৯৬৪ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের পিত্রালয়ে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
হতে পারতো রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতি আজ আরেক মহানায়কের জন্মবার্ষিকী উদযাপন করছে। হয়তো ইতিহাসের ভাষায় তাঁকে আমরা জানতাম বাঙ্গালীর ঐক্যের প্রতীক, দেশের সফল রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে। পিতা মুজিবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে বাঙ্গালী জাতি ইতোপূর্বেই তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারতো শেখ রাসেলের নেতৃত্বে। অবশ্য, তাঁর হাসু বুবুও (শেখ হাসিনা) কম যাননি, বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে বাংলাদেশকে তিনি অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সবাইকে হত্যার পর তাদের লাশ দেখিয়ে তারপর শিশু রাসেলকে হত্যা করা হয়। ঘাতকরা সেদিন ভয় পেয়েছিলো, শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে ঠিকই পিতা-মাতা ও পরিবারের সকলকে হত্যার বদলা এবং রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব একদিন নেবেই। খুনিরা এই ভয়ে শিশু শেখ রাসেলকে বাঁচতে দেয়নি।
শেখ রাসেলকে যখন হত্যা করা হয়, তখন তিনি মাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। বাড়ির ছোট ছেলে হিসেবে সবার আদরের ছিলেন। ঘাতকরা বুলেটবিদ্ধ করার পূর্বে খুনিদের একজন ওয়্যারলেসের মাধ্যমে অনুমতি নেয়। রাসেল প্রথমে মায়ের কাছে যেতে চায়। মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে ঘাতকদের বলে, আমাকে হাসু আপার (শেখ হাসিনা) কাছে পাঠিয়ে দিন। শিশু রাসেলের এই আকুতি টলাতে পারেনি খুনীদের।
ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া তাঁর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থে রাসেলকে হত্যার নৃশংস বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে হত্যার পর রাসেল দৌড়ে নিচে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো বাড়ির কাজের লোকজনের কাছে আশ্রয় নেয়। রাসেলের দীর্ঘকাল দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা আবদুর রহমান (রমা) তখন রাসেলের হাত ধরে রেখেছিলেন। একটু পরেই একজন সৈন্য রাসেলকে বাড়ির বাইরে পাঠানোর কথা বলে রমার কাছ থেকে নিয়ে নেয়। রাসেল তখন ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে তাকে না মারার জন্য আল্লাহর দোহাই দেয়। রাসেলের এই মর্মস্পর্শী আর্তিতে একজন সৈন্যের মন গলায় সে তাঁকে বাড়ির গেটে সেন্ট্রিবক্সে লুকিয়ে রাখে। কিন্তু প্রায় আধঘণ্টা পর একজন মেজর সেখানে রাসেলকে দেখতে পেয়ে তাকে দোতলায় নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় রিভলবারের গুলিতে হত্যা করে।
জাতির জনক ও দেশের রাষ্ট্রপতির কনিষ্ঠ পুত্র হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় ভবনের আরাম-আয়েশে থাকার তেমন সুযোগ হয়নি রাসেলের। রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের আওতামুক্ত থেকে শিশুসুলভ মুখরতায় আপন মনে ঘুরে বেড়াতেন বাড়ির আঙ্গিনায় ও পাশেই লেকের ধারে। সারি সারি গাছে বসা পাখীদের কাকলির সঙ্গে সন্ধি আর প্রকৃতির নির্মল পরিবেশে কখনো কখনো নিজেকে স্বপ্নরাজ্যের মেঘের ভেলায় বসিয়ে জগৎ ঘুরে বেড়ানোর অনুভূতি কতই না আনন্দজোয়ারে ভাসাতো শিশু রাসেলকে।
ঘাতকের রাইফেলের বুলেট ঝাঁজরা করে দেয় নিষ্পাপ শিশু রাসেলের কোমল দেহের পাজর। রাসেল নামের প্রাণটা উড়ে চলে যায় অজানা ঠিকানায়, না ফেরার দেশে।
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা রাসেলকে হত্যা করে জাতির জনকের রক্তের উত্তরাধিকার নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু ঘাতকদের সে অপচেষ্টা শতভাগ ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছে বলেই ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে ।
শেখ রাসেল আজ বাংলার শিশু, কিশোর, তরুণদের ভালবাসার নয়নমণি। মানবিক চেতনাসম্পন্ন মানুষরা শেখ রাসেলের হারানোর বেদনাকে হৃদয়ে ধারণ করে বাংলার প্রতিটি শিশু কিশোর তরুণের মুখে হাসি ফোটাতে বদ্ধপরিকর।
জাতি বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র শহীদ শেখ রাসেলের খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি রাখছে। আজকের এই বিশেষ দিনে শেখ রাসেলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসাভরে বলছি : শুভ জন্মদিন শেখ রাসেল!
লেখক : তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর
বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]