বাংলাদেশে স্বাধীনতাস্ববিরোধী শক্তির পক্ষের লোকজন যখন একত্রিত হয় তখন তারা এমন নাম ব্যবহার করে না, যাতে সাধারণ মানুষ তাদের চিনে ফেলতে পারে। তারা ব্যবহার করে বস্তুনিষ্ঠ নাম ও পরিচয়। এতে মানুষকে আকৃষ্ট করে তাদের ভুল পথে নিয়ে যাওয়া সহজ হয়। এমনি একটি সংগঠন “মুক্তধারা বাংলাদেশ”।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাবর্তনে আচার্য হিসেবে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। বরাবরের মতই তিনি তাঁর সরল অভিব্যক্তি প্রকাশ করে মাতিয়ে রাখেন ছাত্রদের। আর তাঁর বক্তব্যের অবান্তর ব্যাখ্যা দিয়ে নিজেদের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে “মুক্তধারা বাংলাদেশ” নামের সংগঠনটি।
ওরা যে কেবল মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে নিয়েই কুরুচিপূর্ণ পোস্ট দিয়েছে তা নয়, এর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েও আপত্তিকর পোস্ট দিয়েছে। তারা তাঁকে বঙ্গবন্ধু বা জাতির জনক বলে না ডেকে ডেকেছে মরহুম শেখ মুজিব বলে। পোস্টের লিংক : https://www.facebook.com/muldharabd/posts/1451090148287637
তারা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে তাচ্ছিল্য করে যে পোস্টটি দেয়, তাতে বলেছে, আমাদের দেশে থার্ডক্লাশ পাওয়া লোকগুলোই বেশিরভাগ রাজনীতি করে, নেতা হয়। অথবা যারা নেতা হয় তাদের অধিকাংশই হামিদ সাহেবের মত থার্ড ক্লাস। ছাত্র হিসেবে শেখ মুজিবর রহমানও প্রায় এরকমই ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলের নেত্রীর কথা না হয় আর না ই বললাম। এই যদি হয় আমাদের নেতার স্যাম্পল, দেশের অবস্থা ভাল হওয়ার জন্য আসমান থেকে ফেরেস্তা নাজিল না করলে সম্ভব না। দেশের ভাল ছাত্রগুলো বিসিএস দিয়ে প্রশাসনে এই থার্ডক্লাশের নির্দেশে কাজ করে চলেছে। ফলাফল হল, এই ফার্স্টক্লাসের লোকেরা খুব সহজেই থার্ডক্লাশদের গুগল বুঝাতে সক্ষম হয়।
এভাবেই রাষ্ট্রপতিকে তারা জনগণের সামনে ভুলভাবে উপস্থাপন করে, তাঁকে থার্ড ক্লাস বলে আখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতার কাজ করেছে। এই পোস্টের কমেন্টে অনেকেই প্রতিবাদ জানায়। আবার অনেকেই অনেক বাজে কথা ব্যবহার করেছে মহামান্য রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে।
পোস্টের লিংক : https://www.facebook.com/muldharabd/posts/1451560954907223। তাদের কার্যক্রম ফেইসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটেই সীমাবদ্ধ। ওয়েবসাইটে তাদের নিজেদের পরিচয় বা ঠিকানা তারা উল্লেখ করেনি।
তাদের মূলনীতি হিসেবে যে স্লোগান দেয়া আছে তার ভিন্নতা চোখে পড়ল। পেজের নাম – “মূলধারা-বাংলাদেশ”, স্লোগান : “জ্ঞান যেখানে সীমিত,বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট,মুক্তি সেথায় অসম্ভব” । পেজের পরিচিতি হিসেবে দেয়া আছে, “বাংলাদেশের বর্তমান সংকটের ইতিহাসভিত্তিক, রেফারেন্সনির্ভর ও দলনিরপেক্ষ পর্যালোচনার পেইজ।''
স্লোগানে জ্ঞান এবং সঠিক ইতিহাস চর্চার কথা বলা হলেও এদের কার্যক্রম কতটা জ্ঞানমূলক সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তাদের বেশকিছু পোস্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কেন জিন্নাহ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন তার সাফাই গাওয়া হয়েছে। তাদের কথামত বাংলাদেশের রাষ্ট্র ভাষা হওয়া উচিত ছিল নাকি “জবানের ভাষা”, তা বিকৃত বাংলা হোক বা উর্দু। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার করে এসেও তারা দাবি করেছে শুদ্ধ বাংলা ভাষার দরকার নেই। আঞ্চলিক, বিকৃত বাংলা এবং তা পরিণত হয়ে উর্দুতে গিয়ে ঠেকলে তাকেই গ্রহণ করা হবে।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের সমালোচনা এবং পেজের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে, ভন্ডামীর বিচার হওয়া দরকার। যারা বঙ্গবন্ধুকে মরহুম বলে সম্বোধন করে তারা কোন জাতের, তা বুঝতে বাকি থাকে না কারও।
এছাড়াও শনিবার একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক ও কলামিস্ট ফারুক ওয়াসিফ নিজের ফেইসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন “রাষ্ট্রপতির ভাঁড়ামোতে খুশি হওয়া থেকে বুঝি, রাষ্ট্র নিয়ে আমাদের ধারণা কোন পর্যায়ে।”
পরে তিনি তার বন্ধুদের সমালোচনার মুখে পড়ে ‘ভাঁড়ামো’ শব্দটির বদলে ‘রসিকতা’ ব্যবহার করেন।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]