শিরোনাম
‘স্যালুট’ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ইউনিট কমান্ড
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০১৭, ১৭:০৮
‘স্যালুট’ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ইউনিট কমান্ড
শাহাব উদ্দিন চঞ্চল
প্রিন্ট অ-অ+

‘স্যালুট’ জানাই বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ইউনিট কমান্ডকে, দেশ ও জনগণের অতন্দ্র প্রহরী জাতির এই শ্রেষ্ঠসন্তান মুক্তিযোদ্ধারা আবারও রুখে দাঁড়ালো।


সম্প্রতি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ইউনিট কমান্ড ‘রনাঙ্গন ৭১’ নামক একটি প্রকাশনায় রাজাকারদের আংশিক নাম প্রকাশ করেছে। তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই সময়ের সঠিক একটি সিদ্ধান্তের জন্য। মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে যারা পাক হানাদারদের পক্ষ নিয়ে এদেশের বিরোধিতা করেছিল তারা এখনও সময় সুযোগ খুঁজে ৭১-এ তাদের পরাজয়ের বদলা নিতে, যা ১৯৭৫ সালের পর থেকে আমরা দেখে আসছি।


৭১এ তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা বা অনুশোচনা কোনোটাই করেনি বরং ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ এর জঘন্যতম হত্যার মাধ্যমে আবার এদেশকে দখল করার জন্য বিকল্প কয়েকটি পরিকল্পনা করেছিল, এখনও করে চলেছে একটার পর একটা ষড়যন্ত্র আর সন্ত্রাসী পরিকল্পনা। শুধু তারা নয়, তাদের সাথে এক শ্রেণীর সুবিধাবাদি আর মুশতাক চরিত্রের অনুসারি তো আছেই। একটা বোঁকাও বোঝে এরা যে মোটেই এদেশ এ মাটিকে হৃদয় থেকে ভালোবাসতে পারেনি, যদি ভালোবাসতো তাহলে ১৯৭৫ সালে এমন ঘটনা হতো না।


১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ সালের জঘন্যতম হত্যার পর নতুন করে সূদরপ্রসারি কয়েকটি বিকল্প পরিকল্পনা করেছিল। এর মধ্যে একটি ছিল এদেশে টিকে থাকতে হলে নতুন ধারায় এগুতে হবে। তাই তারা (রাজাকারেরা) তাদের সন্তানদের জয়বাংলা শ্লোগান শিখেয়েছিল। চেয়েছিল মিথ্যা দেশপ্রেম দেখিয়ে কৌশলে মুক্তিযোদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে তাদের সন্তানদের ঢুকিয়ে রাজনীতিকে ঘোলাটে করে নোংরামির দিকে ঠেলে দিতে, যা কিছু করার সব তারা করতে সক্ষম হয়েছিল।


২০০৮ থেকে বর্তমান সরকার শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং রায় কার্যকরের পর তাদের সেই পরিকল্পনা ধীরে ধীরে ভেস্তে যাচ্ছে। যারা সুকৌশলে আওয়ামী রাজনীতিতে ঢুকেছিল তারা মনে করছে, তাদের সকল অপরাধ মাফ, তারা এখন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, ইতিহাস থেকে তাদের নাম তাদের পূর্বপুরুষের নাম মুছে দিয়েছে।


না পারবে না। ইতিহাস তার আপন গতিতে চলবে। সময়ের সঠিক পদক্ষেপ বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ইউনিট কমান্ড কর্তৃক ‘রনাঙ্গন ৭১’ নামক প্রকাশনা এবার শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সাথে সাথে তৃণমূলের সকল যুদ্ধাপরাধীদের এ প্রজন্মের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে, হয়তো তাদেরকেও একদিন বিচারের আওতায় আসতে হবে। জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা এবার ১৯৭১ সালের সেই সকল রাজাকারদের বিচারের আওতায় এনে দেবার সুযোগ করে দিল। আবারও মুক্তিয়োদ্ধারা রুখে দাঁড়ালো! ঠিকই দেশ ও জনগণের অতন্দ্র প্রহরী জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা।


২১ বছর এদেশে কোনো প্রগতি হয়নি, হয়েছে ষড়যন্ত্র। সব কিছুরই ওলট-পালট হয়ে গিয়েছিল। যে আদর্শ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ডাকে এদেশের দেশপ্রেমিক কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত আর ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারেননি এদেশের মানুষ।


১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে ছিল শোষক ২১ পরিবার, আর এখন ২১ হাজার পরিবার গড়ে উঠেছে। সব যে রাজাকারদের পরিবার তা নয়, এক শ্রেণীর সুবিধাবাদিরাও আছে, যারা সব সময় ‘পিজিপি’ প্রেজেন্ট গভর্ণমেন্ট পার্টি হিসাবে পরিচিত। এই পিজিপিতে ৭১এর রাজাকারদের উত্তর সূরিরাই অধিকাংশ।


স্বাধীনতা যুদ্ধে নিরীহ নিরাপরাধ মুক্তকামী মানুষের যারা বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়েছিল, সন্তান-ভাই-পিতা কিংবা স্বজনদের হত্যা করেছিল, সেই সকল রাজাকার আলবদর, আল শামস শান্তি কমিটির সদস্যরা আজ কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছে। আর স্বাধীনতার পক্ষের যে সকল লোক শহীদ হয়েছেন, বাড়িঘর পুড়িয়ে ছিল, সেই সকল পরিবার এখনও কোনো মতে বেঁচে আছেন।


স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর আবার নতুন করে অন্য এক ভয়ের মধ্যে আছে সেই সকল পরিবারের সদস্যরা। এখন সেই ৭১এর রাজাকার আলবদর, আল শামস, শান্তি কমিটির সদস্য কিংবা তার সন্তানরা তৃণমূলের আওয়ামী লীগে ঢুকে এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে। এদেশের স্বাধীনতার পক্ষের দেশপ্রেমিক কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতা তারা কোনঠাসা হয়ে পড়ে আছে। সুবিধা নিচ্ছে অনুপ্রবেশকারী আর সেই পরিকল্পিত রাজাকারের সন্তানরা, তাদের সাথে সামিল আছে আওয়ামী সুবিধাবাদিরা।


ওয়ান/ইলেভেনের পর এদেশের বর্তমান সরকার শেখ হাসিনার ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশ এখন আর পেছনে হাটছে না। রাজনীতির কারণে অনেক কিছু অনেকেই বলছেন, কিন্ত নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখলে শত বাধা-বিপত্তির পরও দেশ এগিয়ে চলেছে, জাতি কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে। শতভাগ বলা যাবে না কারণ, সরকারের সব যে ফেরস্তা তা নয়, আবার মুশতাকের মতাদর্শীরাও যে নেই তাও নয়।


শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ আগের তুলনায় অনেক বেশি শান্তিতে বাস করছে, মানুষের মুখে হাসি ফুটছে, সব কিছু মিলিয়ে দেশ এগিয়ে চলেছে। এই এগিয়ে চলার ধারাবাহিকতা রাখতে হলে শেখ হাসিনার শক্ত ও কঠিন সিদ্ধান্তের কোনো বিকল্প নেই এ মুহূর্তে বাংলাদেশে।


বাংলাদেশ সরকারের গত দুই টার্মে শেখ হাসিনার বলিষ্ট ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে দেশ এখন নতুন এক উচ্চতায়। আগামী নির্বাচনে আবারও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার পরিচালিত না হলে দেশ ভিন্ন ডাইরেক্সনে চলে যাবে। সকল হিসাব নিকাশের পর শেখ হাসিনার প্রয়োজন শেষ হয়নি দলের জন্য বা দেশের জন্য। ২১ বার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে, গ্রেনেড হামলা থেকে বিমান হামলা, হাজারও দলীয় সমস্যা বিরোধী দলের ষড়যন্ত্রের পরও শেখ হাসিনা এখনও ঠিকে আছেন, সৃষ্টিকর্তার কাছে তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করি।


আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরাই আওয়ামী লীগের মুল শক্তি, শেখ হাসিনার শক্তি। আগামী নির্বাচনের আগে যে সকল রাজাকার আলবদর, আল শামস, শান্তি কমিটির সদস্য বা তাদের সন্তানরা যারা পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী রাজনীতিতে ঢুকেছে তারা তাদের পরিকল্পিত কৌশলেই কাজ করছে। এই সকল অনুপ্রবেশকারীদের ষড়যন্ত্র রুখে সমাজে তাদের আসল চেহারা উন্মোচন করতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সোচ্চার হতে হবে। আমাদের যে সকল নেতার ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে অনুপ্রবেশকারীরা যেন নতুন করে কোনো ষড়যন্ত্র করতে না পারে, এজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আশ্রয়দাতা নেতাদের চেহারা জনগণের সামনে তুলে ধরা জরুরী।


১৯৭১এর রাজাকার আলবদর, আল শামস, শান্তি কমিটির সদস্য কিংবা তার সন্তানরা তৃণমূলের আওয়ামী লীগে ঢুকে যারা রাজনীতি করছে, এরা একটা সময় ছোবল দিবে। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। বিষয়টি এবার আরও পরিষ্কার করে বোঝা গেল সম্প্রতি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ইউনিট কমান্ড রনাঙ্গন ৭১এ নামক প্রকাশনায় প্রকাশিত রাজাকারদের আংশিক নাম প্রকাশ করার পর রাজাকারদের এ প্রজন্মের রিএক্সশন দেখে।


‘রনাঙ্গন ৭১’ থেকে প্রকাশিত রাজাকারদের আংশিক নাম প্রকাশ করার পর ১ মার্চ থেকে বিয়ানীবাজার উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের রাজাকারদের নাম ধারাবাহিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হচ্ছে।


রাজাকারদের এ প্রজন্মের রিএক্সশন দেখে মনে হচ্ছে, তাদের গলায় যুদ্ধাপরাধীদের মত ফাঁসি লাগিয়ে দিচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ইউনিট কামান্ডের ‘রনাঙ্গন ৭১’ এর এই প্রকাশনা। ফেসবুকে তাদের তৎপরতায় তাদের আসল মনের কথা প্রকাশ পেল তারা যে আসলেই মনেপ্রাণে এদেশকে ভালবাসতে পারেনি। এ প্রজন্মের তরুণদের উদ্দেশে বলছি, ১৯৭৫এর ১৫ই আগষ্টের পর যে সকল বেঈমানরা ইতিহাসবিকৃত করে জাতিকে বিভ্রান্ত করে রাজাকারদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিল, তারাই আবার নতুন করে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে। আমরা এসব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি।


পরিশেষে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের বাগাউড়া'র কবি মোস্তফার ‘খেদ’ কবিতার প্রথম পাঁচ আর শেষ চারটি লাইন দিয়ে আজকের লেখাটি এ শেষ করছি।


ওগো মা


গর্ভে যদি ধরলে সিরাজ-মুজিব;


কেন ধরলে তবে, ডালিম-ফারুক-রশীদ


মীর জাফর আলী খাঁ, জগৎ শেঠ,


শয়তান মুশতাক, মোহাম্মদী বেগ?


মা গো,


মনে বড় খেদ


বারে বারে কেন আসে তোমার গর্ভে


মীরজাফর আর মোহাম্মদী বেগ!


লেখক : যুক্তরাজ্য প্রবাসী রাজনীতিক ও লেখক


বিবার্তা/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com