শিরোনাম
সব দোষ কি ছাত্রলীগের?
প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৯:৪৬
সব দোষ কি ছাত্রলীগের?
আসিফ তালুকদার
প্রিন্ট অ-অ+

ছাত্রলীগের সকল পর্যায়ে বহিষ্কার আতঙ্ক এমনভাবে দানা বেঁধেছে যে আমরা যারা ইউনিট পর্যায়ে আছি তাদের সব সময় এক অজানা আতঙ্ক কাজ করে। ছাত্ররাজনীতির ইতিবাচক বিবর্তন বা পরিবর্তনে এই লাগামহীন বহিষ্কার এবং বহিষ্কার আতঙ্ক অবশ্যই কার্যকর ভূমিকা যেমন পালন করছে, ঠিক তেমনি নানা রকম অনিয়ম ও অবিচারের দ্বারও উন্মোচন করেছে।


প্রথমে আসা যাক বহিষ্কারের ইতিবাচক দিকগুলোর দিকে। আমরা যারা ইউনিটপ্রধান, আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো আমাদের কর্মীবাহিনী। দেখা যায়, ইউনিটপ্রধান হওয়ার পরে আমাদের অনেক খামখেয়ালি ও উদাসীনতার কারণে অনেক বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটতে পারে, যা সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। সুতরাং আমাদের যদি পদ হারানোর ভয় থাকে তাহলে নিশ্চিতভাবে আমরা যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন করবো।


বাছবিচারহীন বহিষ্কারের নেতিবাচক দিকও রয়েছে। ছাত্রলীগের যে কোনো পর্যায়ের একজন ইউনিটপ্রধান একবারেই ইউনিটপ্রধানের দায়িত্ব পান না। এক-দেড় বছর এবং ক্ষেত্রবিশেষে আরো বেশি সময় পদপ্রার্থী থেকে স্ব স্ব ইউনিটকে যোগ্যতা অনুযায়ী সুসংগঠিত করে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে তারা অবশেষে ইউনিটপ্রধান হয়ে থাকেন। সমসাময়িক মেধাভিত্তিক ছাত্ররাজনীতিতে কেউই চায় না এতো কষ্টে প্রাপ্ত পদ নিজেদের কারণে হারিয়ে ফেলুক।


বাছবিচারহীন বহিষ্কারের এই সময়ে আমরা যারা ইউনিটপ্রধান আছি তাদের সুশীল সমাজ থেকে সাংবাদিক, বাসমালিক, ড্রাইভার, হেলপার থেকে শুরু করে ক্যান্টিনের কর্মচারী পর্যন্ত সবাইকেই বিশেষভাবে মূল্যায়ন করে চলতে হয়। অবস্থাটা এমন, যে যা-ই বলুক, আমাদের ‘জ্বি হুজুর’ বলে স্থান ত্যাগ করতে হবে। অর্থাৎ আমরা ধীরে ধীরে আমাদের প্রতিবাদ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছি।


যা ইচ্ছে তা করা যেমন ছাত্রনেতাদের অন্যায়, তেমনি সব কিছু নিঃশর্তে মেনে নেয়াও আমার দৃষ্টিতে অন্যায়। অপরাধ করে প্রশ্রয় চাই না, তবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অধিকারটুকু তো চাই। ছাত্রনেতাদের দ্বারা সুবিধা নিয়ে কেউ তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করেছে বলে আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি কখনো। কিন্তু যে ছাত্রনেতাদের তিল পরিমাণ কাজ যা আপনাদের খারাপ লাগে তাকে তাল বানিয়ে ফেসবুকে বিশাল প্রচারণা করতে দেখেছি বহুবার।


একটা উদাহরণ দেই। আমার একজন বন্ধু হঠাৎ একদিন রাতে ফোন দিল। বিনীতভাবে অনুরোধ করলো তার খুব এক নিকট-আত্মীয়ের জন্য জরুরী রক্ত প্রয়োজন। দিলাম ব্যবস্থা করে। কিছুদিন পর একই বন্ধুর অন্য একটি বিশেষ আবদার মিটালাম সাধ্যমতো। কিন্তু কষ্টের বিষয়, সাম্প্রতিক জসিমউদ্দীন হলে ছাত্রলীগ নিয়ে একটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন সংবাদের লিংক সে একটি গ্রুপে শেয়ার দিয়ে এমন সব মন্তব্য শুরু করলো, যা মুখে আনা যায় না। ছাত্রলীগের দ্বারা উপকৃত হয়ে সে ছাত্রলীগের দুর্নাম শুরু করলো ঢালাওভাবে।


দ্বিতীয় উদাহরণ দেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ক্যান্টিনগুলোর মান এতো খারাপ ছিলো, যা বলে বোঝাতে পারবো না। অনেকে অনেক সময় নানাবিধ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মন্তব্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে ক্যান্টিনের খাবারের মান খারাপের পেছনে ছাত্রলীগের ভূমিকা বিষয়ক সমালোচনা করেন দেখেছি। যে জীবনে ক্যান্টিনে খায়নি সেও সুযোগ বুঝে ছাত্রলীগকে কথা শুনিয়েছে। আজ আমাদের উদ্যোগে ক্যান্টিনের খাবারের মান বৃদ্ধি পেয়েছে। রূমে রূমে খাবার নেয়া বন্ধ হয়েছে। কিন্তু ক্যান্টিনের খাবারের মান বৃদ্ধিতে ছাত্রলীগের ভূমিকা নিয়ে কোনো সুশীল ভাইকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি লাইনও লিখতে দেখিনি।


আমরা যারা ছাত্রলীগ করি তাদের যে কোনো ভুলকে অধিকাংশ সুশীল ভাই-বোনেরা ভুল হিসেবে না দেখে অপরাধ হিসেবে দেখে থাকেন। আর সেজন্যই তিলকে তাল বানিয়ে আমাদের বহিষ্কার আদেশ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে রাজপথে দুর্বার আন্দোলনে নামতেও তারা প্রস্তুত থাকেন।


আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে এবং ভুলগুলো সংশোধনে আপনাদের গঠনমূলক সমালোচনা একান্ত কাম্য। কিন্তু যে অপরাধে আপনাদের দিকে কেউ চোখ তুলেও তাকাতে পারে না সেই একই অপরাধ ছাত্রলীগ করলে আপনারা তাদের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে থাকেন।


অপরাধ করলে সংগঠনের গঠনতান্ত্রিক নিয়ম অনুযায়ী যেমন আপনারা শাস্তি দিয়ে থাকেন তেমনি ছাত্রলীগের কোনো ইউনিটপ্রধান ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে কি না, তাও বিচার-বিবেচনা করে আমাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করাও আপনাদের দায়িত্ব এবং আমাদের প্রাপ্য।


লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com