শিরোনাম
বোরকা, ওড়না আর হিজাব
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১০:১০
বোরকা, ওড়না আর হিজাব
রাশেদ আহমেদ শাওন
প্রিন্ট অ-অ+

ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হরমুজানের একটি সম্প্রদায়ের নাম ‘বান্দারি’ সম্প্রদায়। এখানকার নারীদের একটি বিশেষ প্রথা আছে। তারা মুখমণ্ডলে এক ধরনের মুখোশ পরে থাকেন। ধর্মবর্ণনির্বিশেষ একেবারে ১২ বছরের মেয়ে থেকে শুরু করে শতবর্ষী বৃদ্ধা পর্যন্ত সবাই। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হয় ‘বোরেগাহ’। এটি তাদের পোশাকেরই একটি অংশ। এর ইতিহাসও বহু পুরনো।


যতদূর জানা যায়, পর্তুগীজ শাসনামলে তাদের দাস ব্যবসায়ীরা ওই এলাকার সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে বিক্রি করে দিত। আর তাদের নজর এড়াতে প্রথম এ ধরনের পোশাক পরতে শুরু করেন বান্দারি মেয়েরা। এখন এটি তাদের সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে গেছে। এই মুখোশ পরার আরেকটি সুবিধা আছে- পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে সূর্যের তাপ অনেক বেশি থাকায় এই মুখোশের মাধ্যমে নিজেদের চোখ এবং ত্বককে সূর্যতাপ থেকে রক্ষা করতে পারেন তারা।


নিজেদের সৌন্দর্য লুকাতে একই ধরনের রীতির চর্চা আছে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় চিন রাজ্যে। ওদেরটা অবশ্য অনেকটা অমানবিক। এখানকার মেয়েদের বয়স ১২ থেকে ১৪ বছর হলেই চেহারা বিকৃত করার জন্য মুখে এঁকে দেয়া হয় ট্যাটু।


এর পেছনের কারণটাও আগেরটার মতোই। সেখানকার ইতিহাস অনুসারে, প্রাচীন সামন্ত রাজারা যেকোনো মেয়েকে চাইলেই তাদের উপপত্নী করে রাখতে পারতো। আবার যখন ইচ্ছা পরিত্যাগ করতো। কারো বাধা দেয়ার ক্ষমতা ছিল রাজাদের। শেষ পর্যন্ত সম্ভ্রম বাঁচাতে ট্যাটু এঁকে মুখমণ্ডল বিকৃত করার চর্চা শুরু করে চিনরা। এক পর্যায়ে এটি তাদের সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে ওঠে।


মজার ব্যাপার হচ্ছে, ওই ট্যাটুই শেষ পর্যন্ত সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় রাজ্যটিতে। সেখানকার বেশিরভাগ নারীই ট্যাটু আঁকেন মাকড়সার জালের মতো করে। স্থানীয়রা বলে থাকেন, ‘মাকড়সা জাল দিয়ে যেমন পোকামাকড় ধরে থাকে, মাকড়সার জালের মতো ট্যাটু দিয়েও নারীরা পুরুষদের ফাঁদে ফেলে থাকেন!’ ব্যাপারটা আমাদের দেশের হিজাবীদের মতো! সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার জন্য অন্যতম পোশাক হিজাব!


(আজকে তো আবার বিশ্ব হিজাব দিবস। ওই কথা বলায় হিজাবীরা আবার আমার ওপর ক্ষেইপা যাইয়েন না। আমি কারো ইনটেনশন মূল্যায়ন করি নাই। এইটা আমার কাজও না।)


যাই হোক, প্রত্যেকটি সমাজ, সভ্যতা এবং সংস্কৃতিতে উপযোগিতার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের সংরক্ষণশীলতা গড়ে ওঠে। এগুলো ‘রক্ষণশীলতা’ কিংবা ‘গোঁড়ামি’ না; প্রয়োজনীয়তা।


বি.দ্র. আমার এই স্ট্যাটাস ‘ও তে ওড়না চাই’ বিতর্কের সঙ্গে মিলে গেলে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।


লেখক: তরুণ সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com