শিরোনাম
'কী সাংঘাতিক নির্লজ্জ আত্মসমর্পণ'
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০১৭, ০৩:৫১
'কী সাংঘাতিক নির্লজ্জ আত্মসমর্পণ'
কাজী সালমা সুলতানা
প্রিন্ট অ-অ+

ছোটবেলায় জেনেছিলাম, ছাপার অক্ষরে ভুল থাকে না। কথাটার মূল অর্থ যা কিছু মুদ্রিতভাবে প্রকাশিত হয়, তা নির্ভুল। পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে যা কিছু ছোটবেলায় পড়তাম তা যতটুকু মনে পড়ে নির্ভুলই ছিল। সীতানাথ বসাক প্রণীত আদর্শলিপি দিয়ে শিশুশ্রেনীর পড়া শুরু করেছিলাম। তখন হাতেখড়ি দেওয়া হতো এই বইটা দিয়েই।


সময় এগিয়েছে। ষাট, সত্তর, আশি, নব্বই ,দুহাজার ছাড়িয়ে আজ দুহাজার সতের সাল। জ্ঞান বিজ্ঞানের শাখা প্রশাখা প্রসারিত। ঘরে ঘরে কম্পিউটার হাতে হাতে মোবাইল।


তবুও এবছর প্রকাশিত পাঠ্যপুস্তক নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ... কিছু ভুল আছে, 'ভবিষ্যতেও থাকবে। কারণ পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের কাজ মানুষ করে। ফেরেস্তা করে না।' তাহলে কি ছোটবেলায় যেসব বই পড়েছি তা শয়তান প্রকাশ করতো? শিক্ষামন্ত্রী কি জানেন না, সঠিক ভুল কোনো কিছুই করার ক্ষমতা ফেরেস্তাদের নেই। তারা শুধু আল্লাহর নির্দেশ কার্যকর করে। ভালমন্দ বিচার করার দায়িত্ব তাদের নই। তবে শয়তান যা করে নিজের সিদ্ধান্তে করে এবং নির্ভুল করে। তাই আমাদের ছোটবেলায় পড়া বইগুলো শয়তান মুদ্রণ করতো?


বছরের প্রথমদিন শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া যখন লক্ষ্য, তখন বইয়ের বিষয়বস্তু নির্বাচন বা সঠিক বানানের বিষয়টি উপেক্ষিত হওয়া অস্বাভাবিক বিষয় নয়। তাই হয়তো শিক্ষামন্ত্রী পাঠ্যপুস্তকে ভুলের বিষয়ে গুরুত্ব দেবার প্রয়োজন বোধ করেন নি। বিতর্ক উঠেছে বইয়ের বিষয়বস্তু নির্বাচন নিয়ে। তালিকাও তৈরি করেছেন অনেকে। আগের বই থেকে গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে। কোনটি সংযোজন করা হয়েছে, কোনটি বাদ দেয়া হয়েছে তার তালিকা ফেসবুকে পাওয়া যায়। সে তালিকায় যেসব বিষয় পাওয়া যায় তা খুবই উদ্বেগের বিষয়। পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু নির্বাচনের সাথে রাজনৈতিক দর্শনের সম্পর্ক নিবিড়। তার প্রতিফলন ঘটে পাঠ্যপুস্তকে।



বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা এবং সাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতিফলন ঘটবে, তা ছিল স্বাভাবিক।
যুদ্ধাপরাধীরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে নিশ্চয়ই মুক্তিযুদ্ধের বা অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে কাজ করে, তা তো 'সোনার পাথর বাটি'। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িক চেতনার বিষয়বস্তুর সন্নিবেশ কিভাবে সম্ভব?


বিশেষত যখন এক সময়ের কমিউনিস্ট নেতা শিক্ষামন্ত্রী, এমনটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আর সংবাদ সম্মেলনে তিনিই কিনা কথা বললেন, শুধু বানান বিভ্রাট নিয়ে!


বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জামায়াত নেতারা নাকি প্রাণ বাঁচাতে আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে। গণমাধ্যমেও এমন সংবাদ প্রায়ই দেখা যায়। আবার জানা যাচ্ছে যে, ধর্মীয় নেতারা আগের বই থেকে কোনো বিষয়গুলো বাদ দিতে হবে তার একটি তালিকা সরকারের কাছে দিয়েছিল। এবারের বই প্রকাশকালে সে তালিকা অনুসরণ করা হয়েছে। যার প্রভাবে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে রাষ্ট্র সরে যাচ্ছে।


আমাদের দেশের ধর্মীয় নেতারা স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতাকারী ছিলেন। তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করেছে। অনেকেই প্রত্যক্ষভাবে মানবতাবিরোধী ভূমিকায় নেমেছিল। একদিকে তাদের সেই অপকর্মের বিচার হচ্ছে, অপরদিকে তাদেরই রূপ পরিবর্তিত নেতাদের পরামর্শে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিবর্তন করা হচ্ছে! কি সাংঘাতিক নির্লজ্জ আত্মসমর্পণ! কি দুর্ভেদ্য বৈপরীত্যে ঠাসা পরিস্থিতি, রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ।


লেখক: রাজনৈতিক সংগঠক ও সমাজকর্মী


বিবার্তা/আকবর

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com