শিরোনাম
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:৪০
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
মো. শফিকুল ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজ ছাত্রলীগের জন্মদিন। জন্মদিনে স্মরণ করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং বাংলাদেশে সৃষ্টির মহানায়ক জাতির পিতাকে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন। এই ছাত্রলীগের রয়েছে নানাবিধ অর্জন। যার জন্য আমরা গর্ববোধ করি।


১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের অ্যাসেম্বলি হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন জাতির পিতা। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন অধিকার সংক্রান্ত আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, শিক্ষার অধিকার,বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা,গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতা এবং স্বাধিকার আন্দোলন। এই সব আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। যার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আজ বিশ্বের নিকট সুপরিচিত।


১৯৬৬ সালের ৬ দফা দাবি দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,যা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। এই ছয় দফার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন অনেক গতিশীল হয়। তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আন্দোলন বঙ্গবন্ধুকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। এইভাবে ছাত্রলীগ আজ তার নিজস্বতা অর্জন করছে। আজ ছাত্রলীগের জন্মদিনে ছাত্রলীগের সকল কর্মীদের নিকট একটি প্রত্যাশা যাতে তারা মুখে নয়,মনে ও চিন্তায় বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত আদর্শ ধারণ এবং চর্চা করে।


১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী শহীদ হয়। সকল শহীদদেরকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সারা বাংলাদেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। নূরে আলম সিদ্দিকী, তোফায়েল আহমেদ-সহ তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতারা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। ছাত্রলীগের নেতৃত্বে প্রতিটি জেলায়, উপজেলায়, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে ছাত্রলীগ ও যুক্ত করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামকরণ করা হয়।


করোনাকালীন সময়ে ছাত্রলীগের কর্মীগণ বিভিন্ন ধরনের সেবামূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিল। যার জন্য ছাত্রলীগ সাধারণ মানুষের নিকট প্রশংসা পেয়েছে। ২০২০ সালে ছাত্রলীগ করোনা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দরিদ্র মানুষদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, মোবাইল ফোনে চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যসেবা, অসুস্থ মানুষের বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া,পবিত্র রমজানের ইফতার, বিনা পয়সায় রোগীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু ইত্যাদি। ক্যাম্পাস, মসজিদ, বাজার ও মোড়ে মোড়ে হাত ধোয়ার জন্য সাবান ও পানির ব্যবস্থাও করেছিল ছাত্রলীগ। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষকরা শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারছিলো না। কৃষকদের কষ্টের ধান যাতে মাঠেই নষ্ট না হয়,সেই সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁদের জন্য বিনামূল্যে ধান কেটে দিয়েছে বিভিন্ন জেলার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীগণ। এসব কাজ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তাই এইভাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে দেশের যেকোনো বিপর্যয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে অভিভাবকরা তাঁদের ছেলে মেয়েদেরকে ছাত্রলীগ করতে অনুপ্রাণিত করবে।


ছাত্রলীগের সফলতার হিসাব বলে শেষ করা যাবে না,কিন্তু কিছু ছাত্রলীগ কর্মীর জন্য কিছু স্থানে ছাত্রলীগের দুর্নাম হয়েছে। কিন্তু আজকের দিনে প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত ছাত্রলীগ যেন কোন ধরণের অপরাধে জড়িত হবে না।কারণ ছাত্রলীগের দুর্নাম হলে কষ্ট পাই,কারণ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ত ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম। তাই আমার বিশ্বাস ছাত্রলীগ তাঁর নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যাবে। ছাত্রলীগকে আরও বেশি সাংগঠনিক হতে হবে কারণ সামনে নির্বাচন। তৃণমূল ছাত্রলীগকে আরও বেশ সুসংগঠিত করতে হবে।


ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে যাতে হাইব্রিড নামধারী কোন ছাত্র ছাত্রলীগের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারে। আরেকটি বিষয় মনে রাখা দরকার যাতে মেধাবীরা ছাত্রলীগ করতে উৎসাহিত হয়,সেইজন্য বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠন করার সময় ছাত্রলীগ কর্মীর সাংগঠনিক দক্ষতার সাথে তাঁদের মেধার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ফলে মেধাবীরা ছাত্রলীগ করলে দল এবং দেশ অনেক বেশি উপকৃত হবে। কারণ এখনকার যারা ছাত্রলীগ করে তারাই এক সময় দেশকে নেতৃত্ব দিবে। তাই কমিটি গঠনে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে ছাত্রলীগকে এগিয়ে নিয়ে যেঁতে হবে।


বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বদা বলতেন,‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস’। তাই ছাত্রলীগকে সেইভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যে তাঁদের প্রতিটি কার্যক্রম যাতে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক ইতিহাস সৃষ্টি করে। ছাত্রলীগের প্রতিটি কর্মীকে বঙ্গবন্ধুর সঠিক আদর্শ ধারণ করে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বিশ্বাস করি সেই লক্ষে বর্তমান ছাত্রলীগ কাজ করে যাচ্ছে এবং আরও কাজ করা প্রয়োজন। তাহলে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ গঠন করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে।


১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে তৎকালীন ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য এবং প্রশংসামূলক। তখন ছাত্রলীগ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করত। সারা বাংলাদেশে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের অত্যাচার,নির্যাতন এবং শোষণের বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলে বাঙালি জাতির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্বাচিত করতে ছাত্রলীগ ব্যাপক ভূমিকা পালন করে,যা পরবর্তীতে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের গতিকে ত্বরান্বিত করে। সেইভাবে বর্তমান ছাত্রলীগকে দায়িত্ব নিতে হবে যাতে কেউ ষড়যন্ত্র করে পার না পায়,কারণ এখন দেশ এবং বর্তমান সরকারকে নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলমান। তাই যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে সঠিকভাবে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর চেতনা,নেতৃত্ব,তাঁর রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি সম্পর্কে জানাতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ কোন অন্যায় বা কোন রকম খারাপ কাজের সাথে জড়িত থাকতে পারে না। তাই সেই বিষয়ে ছাত্রলীগকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে যাতে ছাত্রলীগের কোন কর্মী ঘৃণিত কাজের সাথে সম্পৃক্ত না হয়। বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ কোন অন্যায় বা দুর্নীতির সাথে আপোষ করেনি এবং করবে না। সেই বিশ্বাস রেখে ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দিতে হবে।


জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বাংলাদেশ অনেক দূর পিছিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন থেমে থাকেনি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে ছাত্রলীগ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে রাজপথে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।


বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন কোনভাবেই যাতে কেউ কলঙ্কিত করতে না পারে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শ্লোগান “শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি” একে ধারণ করে ছাত্রলীগকে আরো বেশি শক্তিশালী করতে হবে। আমার বিশ্বাস বর্তমান নেতৃত্ব অনেকক্ষেত্রে পেরেছে এবং তাদেরকে আরও পারতে হবে এবং শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।


আজ ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাত্রলীগের সফলতা কামনা করছি এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কাজের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন এবং আদর্শ বাস্তবায়িত হোক এই প্রত্যাশা করি। বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট সবচেয়ে জনপ্রিয় ছাত্র সংগঠন, কিন্তু আরো বেশি ছাত্রলীগকে জনপ্রিয় হিসেবে সাধারণ মানুষ এবং নতুন প্রজন্মের নিকট গড়ে তুলতে হবে। ইতিহাস সৃষ্টিকারী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরবময় ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাত্রলীগের সকল শুভাকাঙ্ক্ষী এবং সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রতি ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। অতীতের ভুল সংশোধন করে ছাত্রলীগকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে হবে এটাই হোক আমাদের প্রত্যাশা।


লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
ত্রিশাল, ময়মনসিংহ।


বিবার্তা/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com