শিরোনাম
বঙ্গবন্ধুর প্রেরণায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২১, ১৯:১৩
বঙ্গবন্ধুর প্রেরণায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ
এম. এ. বাসার
প্রিন্ট অ-অ+

‘আজ আমার খুব ভালো লাগে, যখন দেখি, বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রিয় দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলায়’ রূপান্তরিত করার জন্য দিন-রাত কাজ করে চলেছেন। বঙ্গবন্ধু মানে-একজন সাহসী নেতা, একজন দৃঢ়চেতা মানুষ, একজন ঋষিতুল্য শান্তিদূত, একজন ন্যায়, সাম্য ও মর্যাদার রক্ষাকর্তা, একজন পাশবিকতা বিরোধী এবং যে কোনো জোরজুলুমের বিরুদ্ধে একজন ঢাল। বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান উনিশ শতকের ‘অন্যতম মহান ব্যক্তিত্ব’। বঙ্গবন্ধুর জীবন সকলের জন্যই ‘প্রেরণার উৎস’। - বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ভিডিও বার্তায় কথাগুলো বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।


বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূলমন্ত্রই ছিল আদর্শের জন্য সংগ্রাম, আদর্শের জন্য আত্নত্যাগ। যে আদর্শ, বিশ্বাস ও স্বপ্ন নিয়ে তিনি রাজনীতি করতেন, শত কষ্ট ও প্রচণ্ড চাপেও তিনি তাতে অটল থাকতেন। আদর্শিক সংগ্রামে জেল-জুলুম ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধুর জীবনে এক নিয়মিত অধ্যায়ে পরিণত হয়েছিল। বাঙালি জাতির স্বাধীনতার জন্য তিনি তার ৫৫ বছরের জীবনে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে ছিলেন, যা তার মোট জীবনকালের প্রায় এক-চতুর্থাংশ।


বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যা নয় মাসের স্বশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটে। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্থায়িত্বকাল, সময়ের হিসেবে মাত্র ৯ মাস হলেও এর পটভূমি বিশাল, বাঙালির শোষণ-বঞ্চণা আর সংগ্রামের ইতিহাস সুদীর্ঘ । ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় অর্জন পর্যন্ত ঐতিহাসিক যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রয়েছে, প্রতিটি ঘটনার মূখ্য চরিত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।


১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘পৃথিবী আজ দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে শোষক শ্রেণি, আরেক ভাগে শোষিত। আমি শোষিতের দলে।’ ওই ভাষণের পর কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো শেখ মুজিবুর রহমানকে বলেছিলেন, ‘তুমি আজ যে ভাষণ দিলে, এখন থেকে সাবধানে থেকো। আজ থেকে তোমাকে হত্যার জন্য একটি বুলেট তোমার পিছু নিয়েছে।’ ফিদেল কাস্ত্রোর সেদিনের কথাটিই সত্য হয়ে যায় মাত্র দুই বছরের মাথায়।


জাতির পিতার অন্যতম স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা বিনির্মাণ। কিন্তু ঘাতকেরা ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণযাত্রার যতিচিহ্ন এঁকে দিতে চেয়েছিলো। ওরা ভেবেছিল মুজিবকে হত্যা করলেই সব শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু ওরা বুঝতে পারেনি মুজিব মানেই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুকে দৈহিকভাবে হত্যা করা হলেও তিনি চিরঞ্জীব। কারণ আদর্শের কখনো মৃত্যু হয় না। আদর্শগুলি নক্ষত্রের মতো: আমরা কখনই তাদের কাছে পৌঁছাই না। কিন্তু সমুদ্রের মেরিনারদের মতো, আমরা তাদের দ্বারা আমাদের পথ নির্ধারণ করি।


বিবিসির সাংবাদিক ব্রায়ান ব্যারন ১৯৭৫ সালের ২৮ আগস্ট তার সংবাদ বিবরণীতে বলেছিলেন, শেখ মুজিব সরকারিভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এবং জনসাধারণের হৃদয়ে উচ্চতম আসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবেন। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার। এটা যখন ঘটবে, তখন নিঃসন্দেহে তাঁর বুলেট-বিক্ষত বাসগৃহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্মারক-চিহ্ন এবং তাঁর কবরস্থান পুণ্য তীর্থে পরিণত হবে।


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা জাতির পিতার জীবনাদর্শ তথা মুজিববাদকে ধারণ করে তাঁরই স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে নিয়ত কাজ করে চলেছেন । ১৯৭০ সালে মাথাপিছু গড় আয় ছিল ১৪০ ডলার। সেজন্যই হয়তো স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিরা বলেছিল—আগামী ১০০ বছরের মধ্যেও বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ডলার ছাড়াবে না। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় এই যে, মাত্র ৫০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২২২৭ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলার।


বিগত এক দশক ধরে বাংলাদেশ উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেকর্ড ৮.১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও করোনাকালীন বাস্তবতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা এশিয়ার সর্বোচ্চ। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.২ শতাংশ। বাংলাদেশের গড় আয়ু ৭৩ বছর, সাক্ষরতার হার ৭৪.৭ শতাংশ। করোনাকালীন কঠিন সময়েও সদ্যসমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছে।


১৯৭২-১৯৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। অথচ জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। করোনা অতিমারির মধ্যেও সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মোট তিন হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের (৩৮ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন) পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।


উন্নয়নের বিস্ময় বাংলাদেশে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে, বড় বড় ফ্লাইওভার করা হয়েছে, মেট্রোরেল মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণাধীন দেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতুতে ২০২২ সালের জুন মাস নাগাদ যান চলাচল শুরু হবে। বিদ্যুৎ উন্নয়নে অসামান্য সাফল্য এসেছে, ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিলো ৪৯৪২ মেগাওয়াট বর্তমানে ২৫২৩৫ মেগাওয়াট। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র বিজয় হয়েছে এবং ভারতের সাথে দীর্ঘদিনের সিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে।


বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উন্বোধন করেন যার মাধ্যমে ডিজিটাল বিপ্লবের সূচনা হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব। আইটি খাত এখন বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি। আইটি খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে ২০১৮ সালেই। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিলো ২৪ লাখ, বর্তমানে ১১ কোটি ৭৩ লক্ষ ১০ হাজার। বিটিআরসি’র তথ্যমতে বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭ কোটি ৫২ লাখ ৭০ হাজার। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল নিয়ে করোনা অতিমারির মধ্যেও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখা সম্ভব হয়েছে।


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণেই দক্ষতার সাথে মহামারি করোনা মোকাবেলা করা সম্ভব হচ্ছে। বিশ্বের বহু বড় বড় দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ প্রথম সারির দেশ হিসেবে কোভিড-১৯ এর টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করে এবং দ্রুত গতিতে টিকাদান কর্মসূচি এগিয়ে চলছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় মনে করেন ‘কাউকে অনুকরণ করে নয়, নিত্য-নতুন উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিশ্বের কাছে নিজেদের আত্নপরিচয় তুলে ধরবে'।


হেনরি কিসিঞ্জারের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নামক বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছরে আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। পাকিস্তানের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও উন্নয়ন পরামর্শক জাইঘাম খান পাকিস্তানের 'দ্য নেশন' পত্রিকায় 'দ্য বাংলাদেশ মডেল' শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ করেছেন, সেখানে তিনি পাকিস্তানকে উন্নয়ন করতে হলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন মডেল অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। তারও পূর্বে এক টেলিভিশন টকশোতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, পাকিস্তানের উন্নয়ন যদি ঘটাতে চান, সুইডেনকে না দেখে বাংলাদেশের দিকে তাকান; পাকিস্তানকে বাংলাদেশের মতো বানান।


ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনোমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ- সিইবিআর 'ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২১' নামের এক রিপোর্টে পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির। বর্তমানে বাংলাদেশ ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।


স্বাধীতার ৫০ বছরেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল, সমৃদ্ধির বিস্ময়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা, বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ভিশন- ২০২১ দিয়েছেন এবং বাস্তবায়ন করেছেন। যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে এবং ভিশন- ২০৪১ এর মাধ্যমে আমরা আধুনিক এবং উন্নত দেশে পরিণত হবে। বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার মহানায়ক দেশরত্ন শেখ হাসিনা এবং প্রেরণার বাতিঘর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।


বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ও বিশিষ্ট কবি ড. কামাল আব্দুল নাসের চেীধুরী তার কবিতায় বলেছেন,
যেখানে ঘুমিয়ে আছ, শুয়ে থাকো
বাঙালির মহান জনক
তোমার সৌরভ দাও, দাও শুধু প্রিয়কণ্ঠ
শৌর্য আর অমিত সাহস
টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে আমাদের গ্রামগুলো
তোমার সাহস নেবে
নেবে ফের বিপ্লবের দুরন্ত প্রেরণা।


লেখক: এম. এ. বাসার
লেখক ও গবেষক
ই-মেইল: [email protected]

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com