শিরোনাম
গণমানুষের নেতা বঙ্গবন্ধু
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২১, ১৬:৪৮
গণমানুষের নেতা বঙ্গবন্ধু
জাকিয়া মুক্তা
প্রিন্ট অ-অ+

বঙ্গবন্ধু এই বাংলাকে ভালোবেসেছিলেন, তিনি এদেশের মানুষকে ভালোবেসে ছিলেন। কতটা ভালোবাসলে আর নিজের দেশের মানুষকে কতটা আত্মিক বন্ধনে অনুভব করলে বলা যায়- যা তিনি ১৯৭১ এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বুক চিতিয়ে লাখো জনতার সামনে উচ্চারণ করে বলেছিলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, আমরা এদেশের মানুষের অধিকার চাই’ তা গভীরভাবে উপলব্ধির বিষয়। এই দৃঢ় উচ্চারণই মূলত বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু মানেই যেনো দৃঢ় এক ছায়াবৃক্ষ। এই দৃঢ়তাই তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, তার গণমানুষের নেতা হয়ে ওঠার মৌলিক ভিত্তি। যেখানেই অন্যায় দেখেছেন, শোষণ ও বঞ্চনার আভাস পেয়েছেন, বঙ্গবন্ধু সেখানেই তাঁর ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে গণমানুষের পক্ষে দাঁড়িয়ে গেছেন ন্যায্যতা ও শ্রেণি বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক চেতনার ঝাণ্ডা নিয়ে। ছায়া-সুনিবিড় ছোট্ট এক গ্রাম টুঙ্গিপাড়া থেকে উঠে এসে, তিনি পরম মমতা নিয়ে সারাবাংলার গণমানুষের সাথে মিশে গিয়েছিলেন। যার সৌরভ ছড়িয়ে পড়েছিলো বাংলার প্রতিটি কোণে, সৃষ্টি হয়েছিলো এক গণজাগরণের। যে গণজাগরণের অপর নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।


শেখ মুজিবুর রহমান ছোট এক চারা থেকে মহীরুহ বৃক্ষে পরিণত হয়েছিলেন বাংলার মানুষের সান্নিধ্যে, মানুষের ভালোবাসা-প্রেমে। এখানে বলতেই হয়- গণমানুষের সান্নিধ্যে আসার এই সিদ্ধান্তটি ছিলো তার একান্ত নিজস্ব নির্বাচন, এই প্রক্রিয়াটিতে ঢোকা ছিলো একবারেই তার ব্যক্তিক পছন্দ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তানি বাহিনীরা এদেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, আর বঙ্গবন্ধুকে করে রাজবন্দি। এরপর তাকে তারা নিয়ে যায় পাকিস্তানের কারাগারে। কারা অভ্যন্তরে আটক রাখা অবস্থাতে তাকে তারা বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন চালায়। তাদের কাছে নতি স্বীকার করার জন্য তাকে তারা নানান উপায়ে চাপ দেয়, এমনকি বারংবার মৃত্যুর ভয় পর্যন্ত দেখায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এসবে একবারও না টলে, এতটুকু ভীত না হয়ে সেসব ভীতিকে উপেক্ষা করেন স্বমহিমায়। এই দৃঢ়তার কথা আমরা জানতে পারি তার স্মৃতিচারণে।


১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জনসভায় তিনি এর বর্ণনা দিয়েছিলেন এভাবে, ‘ইয়াহিয়া খান আমার ফাঁসির হুকুম দিয়েছিলেন, আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান। বাঙালিরা একবারই মরতে জানে। তাই আমি ঠিক করেছিলাম, আমি তাদের কাছে নতি স্বীকার করবো না। ফাঁসির মঞ্চে যাবার সময় আমি বলবো আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। তাদের আরো বলেছি, তোমরা মারলে ক্ষতি নাই। কিন্তু আমার লাশ বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দিও।’ গণমানুষকে কতটা আপন মনে করলে, মানুষকে কতটুকু হার্দিক ভালাবাসায় অনুভব করলে নিশ্চিত মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে বলা যায়, মৃত্যুর পর তার লাশটা যেনো তার মাতৃভূমির স্বজন বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার হয়। বাংলার আপামর জনসাধারণকে তিনি তার নিজের স্বজন মনে করতেন বলেই, এমন উচ্চারণ সেদিন করতে পেরেছিলেন।


গণমানুষের মণিকোঠায় স্থান করে নেয়ার বঙ্গবন্ধুর এই যে ক্ষমতা, এটি কোনো পরিবারতন্ত্র বা কারোর আর্শীবাদপুষ্ট প্রক্রিয়ায় হয়নি। তিনি গণমানুষের নেতা হয়ে উঠেছিলেন কারণ সারাটা জীবন তিনি সাধারণের পক্ষে, জনগণের প্রয়োজনে, জনমানুষের কাছে ছুটে গেছেন।’ ৩৮-এর ধর্মীয় দাঙ্গায়, ৪৭-এর ভারতভাগে, ৫২ ভাষা আন্দোলনে, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলনে, ৬৬-এর ছয় দফায়, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে, ৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ে, ৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামে, ৭৫-পূর্ববর্তী রাষ্ট্র গঠনে। বাংলার মানুষের ন্যায্যতার পক্ষে তিনি সবসময় পাশে ছিলেন। সর্বত্রই ছিলো তার উজ্জ্বল পদচারণা, দূরদর্শী আন্তরিক নেতৃত্ব। এই সব আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলার মানুষের একজন হয়ে উঠেছিলেন। পরাধীন বাংলার স্বাধীনতার পক্ষে মানুষকে পাকিস্তানি শোষণ সম্পর্কে অবগত করতে, তাদের মাঝে শোষণহীন রাজনৈতিক দর্শন দৃঢ় করতে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেছেন। একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখাতে গিয়ে বারবার শাসকের চক্ষুশূল হয়েছেন, দমন-পীড়ন আর কারাবন্দিত্বের শিকার হয়েছেন।


তিনি ছিলেন মানুষের কাছে স্বপ্নদ্রষ্টা, যিনি বাঙালির অন্তরে শোষণ-বঞ্চনাবিহীন এক সমাজব্যবস্থার চিত্র এঁকেছিলেন।


পাকিস্তানিরা দীর্ঘ ২৪ বছর এদেশ শোষণ করে, তার উপর এর শেষের দিকে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। সারাদেশ যেনো ধ্বংসস্তুপ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ হাত দেয় দেশ গড়ার কাজে। সম্পদ সব লুট হয়ে গেছে, তার সাথে যুক্ত হয় দেশি-বিদেশি চক্রান্ত। দেশের প্রভাবশালী বড় একটি অংশ ব্যস্ত কীভাবে নিজেদের সুবিধা আদায় করে নেবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু পূর্বের ন্যায় অবিচল হিমালয়ের মতোন। সমসাময়িক সময়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা যখন বিশাল প্রাসাদ নিয়ে বিলাসবহুল জীবন পার করছেন, বঙ্গবন্ধু তখন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে নিজের দোতলা বাসায় পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকেন। কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এমন সরল জীবন পালন করেছেন কিনা সন্দেহ। এ যেনো পৌরাণিক মিথ বা রূপকথার চরিত্র। যা মানুষের কল্পনায় আছে, কিন্তু বাস্তবে নেই। অথচ বঙ্গবন্ধু মানুষের কল্পনার সেই নায়ক বা ত্রাতা, যিনি বাস্তবে এ জীবন যাপন করেছেন।


১৯৭৫ পূর্ববর্তী সময়ে তিনি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দাদের কাছ থেকে, তাকে হত্যা করা হতে পার মর্মে সতর্কবার্তা পেয়েছিলেন। কিন্তু ঋষিসম এ মানুষটির অন্তর ছিলো শিশুর মতন সরল। তিনি বাঙালিকে ভালোবাসতেন, বিশ্বাস করতেন। সেই ভালোবাসার প্রিয় ভাই-বন্ধু-জনসাধারণকে কখনো তার দ্বান্দ্বিক দৃষ্টিতে দেখতে হবে, এটা তিনি কল্পনাও করেননি কখনো।


১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বাঙালি হারায় তার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তানকে। যে সন্তান হাজার বছরের মধ্যে প্রথম তাকে স্বাধীনতার সুখ এনে দিয়েছিলো। ঘাতকেরা ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুর সাথে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ পরিবারের প্রায় সবাইকে এবং নিকটাত্মীয়দের নিয়ে ২৬ জনকে হত্যা করে। ষড়যন্ত্রকারিরা চেয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর নামটি মুছে দিতে, তার আদর্শকে মাটিচাপা দিতে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু নামটি ও তার আদর্শ যেনো রূপকথার ফিনিক্স পাখির মতোন। তাইতো বঙ্গবন্ধুর আত্মা বিদেশের নিশ্চিত জীবন ছেড়ে এসে মৌলবাদিতা আর দূর্নীতির জালে আবদ্ধ বাংলাদেশকে উত্তরণের কাজে হাত লাগিয়েছিলেন এবং সেই হাত ধরেই আজকে যেনো বাঙালির কাছে আবার ফিরে এসেছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার অঙ্গীকার। আর এই অঙ্গীকার যথাযথভাবে বাস্তবায়নের যে স্বপ্ন তিনি বাঙালির হৃদয়ে বুনেছিলেন, এ জন্যই তিনি স্মরণীয় ও বরণীয়।


বিবার্তা/ইমরান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com