শিরোনাম
বঙ্গবন্ধু পাশে থেকো, তবেই কাটবে সব আঁধার
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২১, ১৬:২২
বঙ্গবন্ধু পাশে থেকো, তবেই কাটবে সব আঁধার
গুলশাহানা ঊর্মি
প্রিন্ট অ-অ+

১৫ আগস্ট ১৯৭৫, এক ঘোর অন্ধকারের দিন। এই দিন ভোরে সংগঠিত হয় ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। সেনাবাহিনীর একদল বেপরোয়া, বিপদগামী সদস্য সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের বাসভবনে সপরিবারে হত্যা করে। ঘাতকের বুলেট ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু্’র হিমালয়সম সুউচ্চ বক্ষ। নিভে যায় বাংলার আকাশের সবচেয়ে দেদীপ্যমান, উজ্জ্বল, জ্বলজ্বলে নক্ষত্র। নিভে যায় বাঙালির আশা-আকাঙ্খার বাতিঘর আর আমরা হয়ে যাই অভিভাবকহীন, এতিম। আমরা হারিয়ে ফেলি আমাদের ভালবাসার মানুষ, আমাদের আস্থার জায়গা, আমাদের প্রিয় বঙ্গবন্ধুকে।


সেদিন ভোর থেকে প্রকৃতিও কাঁদছিল, বৃষ্টিধারা হয়ে যেন নিরবে অশ্রুপাত করছিল। ঘাতকের উদ্যত অস্ত্রের সামনে ভীতসন্ত্রস্ত সারাবাংলা তখন নিস্তব্ধ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল। পঁচাত্তর এর ১৫ই আগস্ট আর শ্রাবণ মিলেমিশে একাকার হয়েছিল বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের রক্তস্রোতে। শ্রাবণের ধারার সাথে মিশে গিয়েছিল অগণিত মানুষের অশ্রুধারাও।


আমরা যারা পঁচাত্তর পরবর্তী প্রজন্ম, যারা বঙ্গবন্ধু’র আদর্শকে বুকে লালন করি, জীবন চলার পাথেয় মনে করি আমাদের সবার একটা আজন্ম আফসোস হলো- একটিবার বঙ্গবন্ধুকে সামনে থেকে দেখতে পেলাম না, তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম করা বা তাঁর হাতটা স্পর্শ করতে পেলাম না। আমি যখন ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম প্রতিবছর ১৫ই আগস্টে ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর’ এ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে যেতাম। সারাটা দিন একটা ঘোরের মধ্যে কাটত। মনে হতো কান পাতলেই বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা বা উনাদের পরিবারের সদস্যদের গলার আওয়াজ শোনা যাবে, পায়ের শব্দ শোনা যাবে। মনে হতো এই বুঝি ছোট্ট রাসেল সোনা এ ঘর থেকে দৌঁড়ে ও ঘরে যাবে কিংবা সামনের খালি জায়গাটায় সাইকেল চালাবে। ৩২ নাম্বার বাড়ির প্রতিটি কোণায় কোণায় মিশে আছেন তাঁরা। বাড়ির প্রতিটি জিনিস পরম মমতায় তাকিয়ে দেখতাম আর সবার ছোঁয়া পাওয়ার জন্য মনটা আকুল হয়ে যেত। আমাদের জেনারেশনের দুভাগ্য আমরা বঙ্গবন্ধুকে একটিবার দেখতে বা স্পর্শ করতে পারলাম না।


আগস্ট মাস এলেই মনটা বিষন্ন আর বিক্ষুব্ধ হয়ে থাকে। সবটা সময় একটা নাই নাই, খালি খালি, ফাঁকা ফাঁকা লাগে। এ যে কেমন অপূর্ণতা, ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এ যে কেমন বিক্ষুব্ধতা, কোনভাবেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। নিজের অজান্তেই ঘৃণা বর্ষিত হয় খুনীদের প্রতি, এ যেন ঘৃণা প্রকাশ করতেও ঘৃণা হয়।


ছোটবেলা থেকে লোক মুখে শুনে আসছি যে, পিতা-মাতা বা পরম আত্নীয় কেউ মারা গেলেও নাকি কবরে থেকেও সব দেখতে পান এবং দোয়া করেন। এই বিশ্বাসের উপর ভর করে আমারও সবসময় মনে হয় এই দেশের যেকোন বিপদ বা দুর্বিপাকে সবসময় দূরে থেকেও যিনি পাশে থাকেন তিনি হলেন আমাদের বঙ্গবন্ধু। প্রতিটা ক্রান্তিলগ্নে যিনি পথ দেখান তিনি আমাদের বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে (১৯৭১-৭৫) সরকার পরিচালনায় থাকাবস্থায় জাতির পিতা প্রদত্ত ১০০ ভাষণ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি সদ্য স্বাধীন দেশে এমন কোন সেক্টর নাই যা নিয়ে বঙ্গবন্ধু চিন্তা করেন নাই বা কর্মপন্থা গ্রহন করেন নাই। আমাদের জাতীয় জীবনের সবকিছুর ভিত রচনা করে গিয়েছিলেন তিনি তাঁর শাসনামলের ওই সময়টাতে। তাঁর সেই ভিতের উপরেই গড়ে উঠছে আমাদের বর্তমান আধুনিক বাংলাদেশের সবকিছু।


এই দেশটাকে আপনার মতো করে আর কেউ ভালবাসবে না পিতা। আপনার জন্ম না হলে আমরা এখনও অন্য কারও দাসত্ব মেনে গোলামী করেই জীবন পার করতাম। আপনি না থাকলে নিজস্ব ভাষা, ভূখন্ড, মানচিত্র, জাতীয় সংগীত কোনটাই হতো না আমাদের। আমাদের জাতীয় জীবনের সবক্ষেত্রে আপনি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন। তাই সবসময় আপনার আশির্বাদ বা দোয়া আমাদের কাম্য। দোয়া করি পরপারে সৃষ্টিকর্তা আপনাকে বেহেস্তের সর্বোচ্চ স্থানে জায়গা দিবেন। আপনিও আমাদের মাথার উপর আপনার আশির্বাদের হাত রাখবেন তাহলেই আমরা সবাই মিলে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব এবং আপনার স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে পারব।


লেখক: বিসিএস (তথ্য), সংযুক্তিতে প্রেস উইং প্রধানমন্ত্রী’র কার্যালয়


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com