শিরোনাম
বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা কলমের নাম ছাত্রলীগ
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:২০
বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা কলমের নাম ছাত্রলীগ
সোহরাব শাহরিয়ার অভি
প্রিন্ট অ-অ+

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেগড়া সংগঠন, শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটির ৬৯তম জন্মদিন ৪ জানুয়ারি।


১৯৪৮ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে জন্ম নেয় ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এর পর থেকে বাংলাদেশের প্রতিটা লড়াই-সংগ্রামে সামনে থেকে লড়ে যায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।


১৯৪৭ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন কলকাতা ইসলামীয়া কলেজের ছাত্র। তিনি ছিলেন কলেজ ছাত্রসংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। বৃটিশ ঔপনিবেশিক থেকে মুক্তি লাভের পর বাঙ্গালীরা নতুনভাবে শোষণের যাঁতাকলে পড়ে, যাকে শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন ‘এক শকুনির হাত থেকে অন্য শকুনির হাতবদল মাত্র’।


নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের সরকার প্রথমে আঘাত হানে আমাদের মায়ের ভাষা বাংলার ওপর। শেখ মুজিব তখনই অনুভব করলেন শোষণের কালো দাঁত ভাঙ্গার একমাত্র হাতিয়ার ছাত্রসমাজ। তাই তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া উর্দূ ভাষার বিরুদ্ধে ইস্পাতকঠিন প্রতিরোধ তৈরির জন্য ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠা করেন ‘পাকিস্তান ছাত্রলীগ’।


বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্রলীগের যাত্রা শুরু। প্রথমে এর নাম ছিলো ‘পাকিস্তান ছাত্রলীগ’। এর প্রথম আহবায়ক ছিলেন নাঈমউদ্দিন আহমেদ। ছাত্রলীগ সাংগঠনিকভাবে কার্যক্রম শুরু করলে এর সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক মনোনীত হন যথাক্রমে দবিরুল ইসলাম ও খালেক নেওয়াজ খান।


প্রতিষ্ঠার এক বছর পর ১৯৪৯ সালে এই ছাত্রসংগঠনের হাত ধরেই তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগে’র। এটাই পরে আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করে এ দেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়।


তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের শাসন-শোষণ আর বঞ্চনার প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা ছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। জন্মের পর থেকে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বিভিন্ন পর্যায়ে জাতিকে নেতৃত্ব দানকারী সংগঠনটির নেতাকর্মীরা জাতীয় রাজনীতিতেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মী যুদ্ধের ময়দানে জীবন উৎসর্গ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে শহীদ হয়েছেন ছাত্রলীগের ১৭ হাজার সাহসী বীর সৈনিক।


বর্তমান জাতীয় রাজনীতির অনেক শীর্ষ নেতার রাজনীতিতে হাতেখড়িও ছাত্রলীগ থেকেই। ১৯৪৮ সালেই মাতৃভাষার পক্ষে ছাত্রলীগ আপসহীন অবস্থান তৈরি করে। ১১ মার্চ ছাত্রলীগ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ধর্মঘট পালন করে। ওই ধর্মঘটের পিকেটিং থেকেই গ্রেফতার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শেখ মুজিব ও তার সহযোগীরা।


ছাত্রলীগই প্রথম বাংলা ভাষার জন্য ১০ দফা দাবিনামা পেশ করে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ ও আন্দোলন জোরালো করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়।


১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় নিশান উড়ানোর নেপথ্যের কারিগরও ছিলো ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ১৯৫৬ সালের বাংলা ভাষার রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়, ১৯৫৭ সালের শিক্ষক ধর্মঘট এবং ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের পালে সমীরন প্রবাহ করে ছাত্রলীগ। ১৯৬৬ সালের ১৪ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারী ছাত্রলীগের নেতৃত্বে প্রচলন হয় বাংলা সপ্তাহের। বাঙ্গালীর মুক্তির সনদ হিসেবে পরিচিত ঐতিহাসিক ‘ছয় দফা’আন্দোলনে রাজপথের প্রথম সারিতে অবস্থান ছিল ছাত্রলীগের। এসময় নিজেদের ১১ দফার মাধ্যমে ছাত্রসমাজের রক্তে প্রবাহ সঞ্চার করে ছাত্রলীগ।


ছাত্রলীগের নেতৃত্বেই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছাত্র-গণ আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ছয় দফাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এক দফার গণভোটে রূপ দেয়। এরপর ১৯৭১ সালে ত্রিশ লাখ মানুষের আত্মত্যাগ আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলার আকাশে যে রক্তস্নাত সূর্যোদয় হয় তাতে পরিসংখ্যানের হিসেবে বিশ্বের বৃহৎ ও সংগ্রামী সংগঠন ছাত্রলীগের আত্মত্যাগী নেতাকর্মীদের সংখ্যা ছিল ১৭০০০ (সতের হাজার)।


১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ কালপর্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের সংগ্রামে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিলো অগ্রগণ্য। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা ও তার পরিবারে সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যার পর বাঙ্গালী জাতির ভাগ্যাকাশ আবার কালো মেঘ গ্রাস করে নেয়।


স্বৈরশাসক মেজর জিয়া ও তৎপরবর্তী রাজনীতির মাঠে সামরিক চাষবাসের তিক্ত ফসল বাঙ্গালীদের অতিষ্ঠ করে তোলে, যা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে রাজপথে রক্ত দিতে হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। সামরিক শাসনের মধ্যেও ১৯৮৩ সালে শিক্ষা আন্দোলন ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ১০ দফা তৈরিতে নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। শিক্ষার অধিকার প্রসারে শামসুল হক ও অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর কমিশন রিপোর্ট তৈরিতে ছাত্রসমাজের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ।


এরপর একটি সফল গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নির্বাচনে দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ছাত্রলীগ শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক নির্দেশ প্রতিপালন করেছে।


১৯৯৮ সালের বন্যা মোকাবেলায় কিছু অদূরদর্শী ব্যক্তির দুর্ভিক্ষের আশংকাকে ভুল প্রমাণ করেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তিন শিফটে রুটি তৈরি করেছে তারা। তৈরী করেছে দুর্যোগপূর্ণ এলাকার মানুষের জন্য খাবার স্যালাইন। দুঃসময়ে দুর্গত এলাকায় রুটি ও স্যালাইন বিতরন করে মানুষের জীবন রক্ষা করেছে। এসবের মাধ্যমে হতাশা ও প্রজ্ঞাহীন ব্যক্তিদের আশংকার জবাব দিয়েছে ছাত্রলীগ।


১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রবেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলনে ছাত্রলীগ ছিল আপসহীন। নিরক্ষরতামুক্ত, পোলিওমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও বৃক্ষরোপনের মধ্যেমে বিশ্বের উষ্ণায়ন কমাতে প্রতিটি জেলায় কাজ করেছে ছাত্রলীগ।


২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী চারদলীয় জোট সরকারের সহিংসতা এবং দেশব্যাপী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ প্রতিরোধ রচনা করেছে। ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধেও জোরালো প্রতিবাদ করেছে ছাত্রলীগ।


২০০১ সালের পর শান্তির এই ভূখণ্ডে জঙ্গিবাদের উত্থান হলে ছাত্রলীগ তার বিরুদ্ধে রাজপথে কঠোর প্রতিবাদ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, লেখক ড. হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার প্রতিবাদেও রাজপথে ছিলো বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।


এরপর ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট রাষ্ট্রীয় মদদে স্মরণকালের সবচেয়ে পৈশাচিক গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে শেখ হাসিনার জীবননাশের অপচেষ্টার জোর প্রতিবাদ জানায় ছাত্রলীগ।


২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে সামরিক কায়দায় আটকের পর সামরিক বাহিনীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে রাজপথে প্রথম প্রতিবাদ রচনা করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বিতর্কিত সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে গ্রেফতার হয়ে ১৯ মাস কারাবরণ করেন ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা। তবুও প্রিয় নেত্রীর মুক্তির আন্দোলন থেকে ছাত্রলীগকে হঠাতে পারেনি শাসকশ্রেণী। সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রধর্মঘট পালন করে ছাত্রলীগ প্রিয় নেত্রীর মুক্তির অদম্য আন্দোলন রচনা করে।


এরপর ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিজয় নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী। এরপর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শুরু হয় দিন বদলের সরকারের পথ চলা।


বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী সাংগঠনিক সভানেত্রীর পদ থেকে হারাতে হয় আমাদের প্রিয় নেত্রীকে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে খুনী এবং যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে বারবার রাজপথে নামে ছাত্রলীগ।


২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে ছাত্রলীগ আন্দোলন করে সাধারণ জনগণ ও অনলাইন একটিভিস্টদের নিয়ে।


২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে এবং সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে ছাত্রলীগ ছিল সারাদেশে। এই নির্বাচনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে প্রতিহত করা হয় সন্ত্রাসীদের।


২০১৫ সালে ছাত্রলীগে নেতৃত্বে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিচ্ছন্ন রাখতে শুরু হয় সেভ ক্যাম্পাস ক্লিন ক্যাম্পাস নামক সমাজসেবী উদ্যোগ। ২০১৫ সালের ২৫ ও ২৬ জুলাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৮তম জাতীয় সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ১১১ টি সাংগঠনিক ইউনিটের কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইফুর রহমান সোহাগ ও এস এম জাকির হোসেন।


দেশের প্রতিটি নির্বাচনে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার উদ্যোগে ছাত্রলীগ ঝাঁপিয়ে পড়ছে, দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে ২০১৭ সালকে নিরক্ষরমুক্ত সাল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।


বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভালো কাজের সাথে ছিল, আছে, থাকবে। এককথায় বলতে চাই, বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা কলমের নাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।


লেখক : সহ-সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com