শিরোনাম
হোয়াইট হাউজে কে যাচ্ছে?
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২০, ২১:৪৭
হোয়াইট হাউজে কে যাচ্ছে?
মোঃ বাবুল হোসেন
প্রিন্ট অ-অ+

আগামী ৩ নভেম্বর মঙ্গলবার বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হবেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রতি ৪ বছর পরপর নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মানে ২ থেকে ৮ নভেম্বরের মধ্যে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ২ টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে থাকে। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টি। আরো কিছু ছোট ছোট নামসর্বস্ব দলেরও অস্তিত্ব পাওয়া যায়। সেগুলো হলো আমেরিকান ইনডিপেনডেন্ট পার্টি, দ্যা লিবার্টারিয়ান পার্টি, হ্যারিটেজ পার্টি, রিফর্ম পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি ও গ্রীনপার্টি। তবে তারা নির্বাচনে তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।


ডেমোক্র্যাট দলটি প্রগতিশীল বা উদারনৈতিক রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত। আর রিপাবলিকান দলটি রক্ষণশীল দল হিসেবে বিবেচিত। নির্বাচনে রিপাবলিকানরা গ্রামাঞ্চলের ভোট বেশি পেয়ে থাকে আর ডেমোক্র্যাটদের শহরের জনসমর্থন বেশি। রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচনী প্রতীক হাতি আর ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর প্রতীক গাধা। এবার যুক্তরাষ্ট্রের ৫৯তম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে ৪৫তম প্রেসিডেন্ট। ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির হয়ে নির্বাচন করছেন আর তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট পার্টির হয়ে লড়ছেন জো বাইডেন আর তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে লড়ছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক কমালা হ্যারিস। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে দুই মেয়াদে ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। জো বাইডেন জয়ী হলে কমালা হ্যারিসই হবেন মার্কিন কোনো কৃষ্ণাঙ্গ নারী প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টকে রানিং মেটও বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের নির্ধারিত দিনের আগে থেকেই জনগণ ভোট দিতে থাকে। এবারও ডাকযোগে ৮ কোটিরও অধিক ভোট পড়েছে এখন পর্যন্ত।


যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থা কিছুটা জটিল প্রকৃতির। এখানে প্রেসিডেন্ট জনগণের পপুলার ভোটে নির্বাচিত না হয়ে ইলেকটোরাল কলেজের মাধ্যমে মানে পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। কলেজ শব্দটি বলতে একদল নির্বাচকমন্ডলীকে বুঝায়, যারা প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে থাকেন। সাধারণ ভোটাররা একজন ইলেকটোরকে ভোট দেন এবং ইলেকটোররা প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেন। যুক্তরাষ্ট্রে ৫৩৮ টি ইলেকটোরাল ভোট আছে। মোট ৫০ টি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসি বা ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়াসহ ৫১ টি ইলেকটোরাল কলেজের মধ্যে জনসংখ্যার ভিত্তিতে ইলেকটোরাল ভোটগুলো ভাগ করে দেয়া হয়।


উচ্চকক্ষ বা সিনেট ১০০ + নিম্নকক্ষ বা প্রতিনিধি পরিষদ ৪৩৫ + ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া ৩ টি, অর্থাৎ মোট ৫৩৮ টি ইলেকটোরাল ভোট। একজন প্রার্থীকে জয়ী হতে হলে ২৭০ টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে পপুলার ভোট কম পেয়েও একজন প্রার্থী জয়ী হতে পারেন। যেমনটা হয়েছিল ২০১৬ সালের নির্বাচনে। হিলারি ক্লিনটন ৩০ লক্ষ পপুলার ভোট বেশি পেয়েও হেরে যান ইলেকটোরাল ভোট কম পেয়ে। ২০০০ সালে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আলগোর ৫ লাখ ৪০ হাজার পপুলার ভোট বেশি পেয়েও জর্জ বুশের কাছে হেরে যান। এই পদ্ধতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনেকটা জটিল ধরণের এবং এতে সমালোচনাও আছে।


একজন ইলেকটোর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একটি ভোট দিতে পারবেন। কোন প্রার্থী যদি কোন অঙ্গরাজ্যে একটি ভোট বেশি পান তাহলে টোটাল অঙ্গরাজ্যের ভোট তার পক্ষে চলে যাবে। ধরা যাক ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে ৫৫ টি ইলেকটোরাল ভোট আছে। কোন প্রার্থী যদি অর্ধেকের বেশি মানে ২৮ টি ইলেকটোরাল ভোট পান, তাহলে তিনি ৫৫ টি ইলেকটোরাল ভোটই পাবেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ২৭ ইলেকটোরাল ভোট পেয়েও কোন ভোট নিজের মধ্যে যোগ হবে না। ৪৮ টি অঙ্গরাজ্য ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ায় এই নিয়ম চালু আছে।


তবে দুটি অঙ্গরাজ্য মেইন ও নেব্রাক্সা অঙ্গরাজ্যে যে প্রার্থী যেই ভোট পাবেন সেটাই তাঁর ভোট বলে গণ্য করা হবে। ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যেই সর্বোচ্চ ৫৫ টি ইলেকটোরাল ভোট আছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সুইং স্টেটগুলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বলা হয় সুইং বা দোদুল্যমান স্টেটগুলোর ভোট যে প্রার্থী বেশি টানতে পারেন, তিনিই হন প্রেসিডেন্ট। সুইং স্টেটগুলো হলো আইওয়া, ওহাইও, নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া, ফ্লোরিডা, উইসকনসিন, মিশিগান ও পেনসিলভানিয়া। এই স্টেটগুলোকে সুইং স্টেট বলার কারণ হলো স্টেটগুলোর ভোটাররা নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত দেখেন যে, কোন প্রার্থীকে তারা ভোট দিবেন। প্রার্থীরাও ভোটারদের গতিবিধি বুঝতে পারেনা। এরা আসলে নিরপেক্ষ ভোটার।তবে এখন পর্যন্ত সকল জনমত জরিপে জো বাইডেনই এগিয়ে আছেন। এক্ষেত্রে বলা যেতেই পারে আগামী ৩ নভেম্বর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনই জয়ী হয়ে হোয়াইট হাউজে যাচ্ছেন।


লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, পাবনা বিজ্ঞানও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com