শিরোনাম
আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের কারচুপির আশংকা!
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২০, ২১:০০
আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের কারচুপির আশংকা!
শাহীন রেজা নূর
প্রিন্ট অ-অ+

এ কি কথা শুনি আজ মন্থরার মুখে রঘুরাজ ?'- মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিরচিত 'বীরাঙ্গনা কাব্যে' রাজা দশরথের প্রতি তার প্রথম পত্নী রাণী কৈকেয়ীর পত্রের এই প্রথম চরণটি দিয়েই নিবন্ধটি শুরু করছি এ জন্য যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে (নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য) সম্ভাব্য কারচুপির যে আশংকা প্রকাশ করেছেন তা অনেকের মনে রাণী কৈকেয়ীর মতোই অনুরূপ জিজ্ঞাসার অবতারণা ঘটিয়েছে বৈকী ! অমিত বিক্রম মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখে এ কথা বড্ড বেমানান শোনাচ্ছে নয় কি? মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপি এও কি সম্ভব?


অবশ্য, কারচুপি বিষয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনও অনুরূপ আশংকা প্রকাশ করেছেন।অবিশ্যি সেখানে নির্বাচনে কারচুপির ও নির্বাচনী ব্যবস্থার উপর প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ এটি নতুন নয়! পাঠকদের নিশ্চয়ই খেয়াল আছে যে, জর্জ বুশ জুনিয়র ২০০০ সালে প্রথম মেয়াদের জন্য দেশের ৪২তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে সেই নির্বাচন বিষয়ে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে।তার ভাই ফ্লোরিডার গভর্নর জ্যাব বুশ জর্জ বুশকে জেতাতে সে সময়ে যে সব অপকৌশলের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাও পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে প্রচারিত হয়।এমনকি এ ক্ষেত্রে মার্কিন সুপ্রীম কোর্টকেও ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছিল; কেননা, প্রতিপক্ষীয় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোরেকে পরাস্ত করতে ঐ আদালতের রায়ের প্রয়োজন পড়েছিল তখন।ভাগ্যিস, জর্জ ওয়াশিংটন-টমাস জেফারসন-বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন-আব্রাহাম লিঙ্কনরা তখন বেঁচে ছিলেন না; থাকলে তাদের হাতে গড়া রাষ্ট্রটির এই বদ-হাল দৃষ্টে মর্ম যাতনায় তারা নির্ঘাত পাথর হয়ে যেতেন !


এতকাল সক্কলকে সরবে জানানো হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রই হচ্ছে 'বিশ্বে গণতন্ত্রের হেফাজতকারী'(!), শুধু কি তাই? ন্যায়-নীতি-নৈতিকতা, রাজনৈতিক শিষ্টাচার, মানবাধিকার, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, আইনের শাসন ইত্যকার নানা বিষয় সম্পর্কে তারাই তো সকলকে শিক্ষা দেয়, কর্তব্য-কর্ম সম্পর্কে সকল প্রকার দিক নির্দেশনা প্রদান করে ! তারাইতো উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলির অভিভাবক সেজে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকারসহ উল্লিখিত যাবতীয় বিষয়ে সব্বাইকে সবক দিয়ে থাকে আর সেই দেশের প্রেসিডেন্টই কিনা আসন্ন নির্বাচনে কারচুপির আশংকা ব্যক্ত করছেন! এ কি ভাবা যায়? বাংলাদেশের স্থানীয় পর্যায়ের কোন নির্বাচনে একটি নির্বাচনী কেন্দ্রেও যদি সামান্য গোলযোগ বা হাঙ্গামা হয় তাহলেই গোটা মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ও তার তল্পীবাহক সব সংস্থাই 'বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিপন্ন, গণতন্ত্র বিপন্ন' বলে রে রে করে তেড়ে আসে! তারপর দেখা যায় ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের লম্ফ-ঝম্প যিনি কিনা বৃটিশ আমলের ভাইসরয়ের মতো আচরণ করে সকলকে বিভ্রান্ত করার খেলায় মেতে ওঠেন।


অথচ, এক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক চড়াই -উৎরাই, সেনা শাসন ও গণ বিরোধী অপশক্তির দু:শাসন আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে বিদ্যমান বাস্তব বাধাসমূহের কথা ইচ্ছাকৃতভাবেই ভুলে থাকে। আর এটি তারা ইচ্ছেকৃতভাবে ভুলে থাকবেইবা না কেন? কেননা, তারাইতো এইসব বাধাকে সংশ্লিষ্ট দেশে যে কোন উপায়েই হোক জিইয়ে রাখে তাদের নির্দিষ্ট অভিষ্ট হাসিলের উদ্দেশ্যে!!


কে না জানে যে, একদিন কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার বিশ্বে এক নতুন ইতিহাস সূচিত করেছিল।সেখানকার নেটিভস বলে পরিচিত রেড ইন্ডিয়ানদের নৃশংসভাবে নির্মূল করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এই নতুন ভুখন্ডে তথা আমেরিকায় নির্বাসিত ব্রিটন, ডাচ, নর্ডিক বা অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীর দুর্বৃত্ত শ্রেণীর মানুষেরা ক্রমান্বয়ে রাজশক্তির সহায়তায় দেশটিতে দখলীস্বত্ত প্রতিষ্ঠিত করে।পরবর্তীতে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জোরপূর্বক ও পাশবিক নির্যাতনের মাধ্যমে 'কালা আদমীদেরকে' ধরে এনে তাদেরকে রীতিমত ক্রীতদাসে পরিণত করে ঐ দুর্বৃত্তরা। এর পর শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে এই কালো মানুষদের উপর শ্বেতাঙ্গরা যে অবর্ণনীয় অবিচার ও অত্যাচার চালায় তা ভাবলেও গা শিঁউরে ওঠে !


এই কালো মানুষগুলিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তর ধরে এক প্রকার ঘোরতর 'অন্ধকারকে তাদের দেহের মাংসের আবেষ্টনীর মধ্যে লুকিয়ে' রাখতে বাধ্য করেছিল শ্বেতাঙ্গ বণিক নামধারী ঐ নরপিশাচেরা। সেই দুর্ভেদ্য অন্ধকার ভেদ করে আলোয় পা রাখতে কৃষ্ণাঙ্গ আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার নীরব অশ্রুপাত ও শোনিত প্রবাহে আমেরিকার মৃত্তিকা ভিজে গেছে আর রক্তবর্ণ ধারণ করেছে বার বার, তবুও অধিকাংশ শ্বেতাঙ্গের চোখের কোনায় এক রত্তিও জল জমেনি, কোন মানবিক বোধ-বুদ্ধি-চেতনা তাদেরকে সামান্যতম পীড়িত করেনি।অবিশ্যি, তাদের নির্মমতার সহমর্মীরূপে ধীরে ধীরে -বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মার্কিন শ্বেতাঙ্গ সমাজের অনেকের বুকে বেদনার্ত দীর্ঘশ্বাস পড়তে শুরু হয়।হ্যারিয়েট বিচার স্টো নাম্নী এক তরুণীর লেখা ' Uncle Tom's Cabin' এ সেই মর্মন্তুদ দীর্ঘশ্বাসেরই প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায় | অত্যন্ত মর্মস্পর্শী আর মানবিকবোধে উচ্চকিত এই উপন্যাস একদিন শ্বেতাঙ্গদের অনেকের মনে 'কালো আর ধলো বাহিরে কেবল, ভিতরে সবারই রাঙা'- এই শুভ্র চেতনা সঞ্চার করে। অন্যদিকে, হার্পার লী 'র 'To Kill A Mocking Bird' এ কালোদের প্রতি শ্বেতাঙ্গদের বীভৎস বিদ্রুপ আর ঘৃণার বিপরীতে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি মানবিক গুনে সিক্ত কোন কোন শ্বেতাঙ্গের অকৃত্রিম সহানুভূতি ও দরদের চিত্র ফুটে উঠতে দেখা যায়।


যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন এই দাস প্রথা উচ্ছেদের ব্যাপারে নিজ জীবন বাজি রেখেই উদ্যোগী হন আর এ কারণে আততায়ীর গুলিতে তাকে প্রাণ হারাতে হয়, তথাপি এই নির্মম ও অমানবিক প্রথার উচ্ছেদ ঘটে তারই প্রচেষ্টায়।এ জন্য দাস প্রথাপন্থী ও এর বিরোধী যথাক্রমে দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে ভয়ানক গৃহযুদ্ধও সংঘটিত হয়েছিল (১৮৬১-'৬৫)। ঐ গৃহ যুদ্ধের মাধ্যমে দাস প্রথা নির্মূল হয়েছিল বটে, কিন্ত শেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ থেকে বর্ণবাদ কখনই মুছে যায় নি।বরং,সময়ে সময়ে তা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে আর তার জের স্বরূপ ঐ বর্ণ-বিদ্বেষীদের বরকন্দাজদের হাতে মার্টিন লুথার কিং (জুনিয়ার) ও ম্যালকম এক্স সহ মানবাধিকার আন্দোলনের বহু নেতাকে প্রাণ দিতে হয়েছে।মোহাম্মদ আলীর মতো তেজিয়ান পুরুষকে আর পল রবসনের মতো গণমানুষের শিল্পীকে বলদর্পীদের অন্যায় ও অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে।তাছাড়া, নিত্য দিনই যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গরাতো বটেই এমনকি হিস্পানিক ও অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীর মানুষও নানা বৈষম্য, অবিচার ও বিদ্বেষের খোরাক হয়ে থাকে।


ভাবা যায় যে, এখন থেকে সাত/আট দশক আগেও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রেস্তোরাঁয় ও পাবলিক ট্র্যান্সপোর্টে লেখা থাকতো যে, 'Dogs and Niggers are not allowed'? এমনকি এক'শ বছর আগেতো সেখানে মেয়েদের ভোটাধিকারও ছিলোনা।মানুষের প্রতি যাবতীয় সব ধরণের বৈষম্য জিইয়ে রেখে যুক্তরাষ্ট্র যে সমাজ ব্যবস্থা নির্মাণ করেছে তা ভেতর থেকে একেবারেই ফাঁপা বা অন্তঃসারশূন্য এক কৃত্রিম ব্যবস্থা বৈ নয়! আমেরিকান সভ্যতা বলে কিছু আছে কি? আর যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া হয় যে 'আছে' তা হলে বলতেই হবে যে, সে সভ্যতা নির্দয়তা ও নির্মমতার ভিত্তিতে গড়ে উঠা এক অচলায়তন বিশেষ ! নিপীড়িত মানুষের রক্ত-ঘাম আর অশ্রুর এক শোকগাঁথার নাম 'মার্কিন সভ্যতা'।ব্রেন ড্রেইন এই তথাকথিত সভ্যতার আরেকটি মাইল ফলক।
গণতন্ত্রের নাম ভাঙিয়ে ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ কিভাবে সাম্প্রতিক ইতিহাসে ইরাক, লিবিয়া, লেবানন, সিরিয়া, আফগানিস্তানকে লন্ড-ভন্ড করে দিয়েছে তাতো কারুর অজানা নয়।সাম্রাজ্যবাদ যুগে যুগে বিশ্বে মানুষ নিধন আর সম্পদ লুন্ঠনের কাজই করেছে কেবল! নির্মম ও পৈশাচিক উন্মাদনায় মেতে বরাবরই সাম্রাজ্যবাদ এক একটি দেশকে পদাবনত করেছে, কবরের শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে সে সব দেশে। ফরাসী বিপ্লোত্তরকালে বিশ্বময় মানুষের মনে মুক্তি ও স্বাধীনতার আকাঙ্খা জেগে উঠলে অনেক দেশ দীর্ঘ সংগ্রাম-সাধনার মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করলেও সাম্রাজ্যবাদও নয়া ঔপনিবেশিকতা ও নয়া বিশ্ব ব্যবস্থার মোড়কে আবার ভিন্ন কায়দায় একেকটি দেশের উপর খবরদারি ও অর্থনৈতিক দখলদারি প্রতিষ্টিত করতে উঠে পড়ে লাগে।


আর এক্ষেত্রে তারা নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী গণতন্ত্রেরও খোল-নলচে বদলে ফেলতে থাকে।গণতন্ত্র নতুন নতুন সংজ্ঞা পেতে থাকে তাদের এই বুজরুকিপূর্ণ কুট-কৌশলের বদৌলতে! গণতন্ত্রের সকল স্তম্ভই এই প্রকারে একে এক রূপ বদলাতে থাকে। এককালে গণতন্ত্রের অন্যতম রক্ষাকবক হিসেবে পরিচিত সংবাদ পত্র শিল্পও হয়ে ওঠে ক্ষমতাশালীদের হাতের পুতুল। একদিকে যেমন: গণতন্ত্র (মানুষ উদ্ভাবিত শাসন ব্যবস্থার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ট ব্যবস্থা) এর ক্ষেত্রে শোষিতের গণতন্ত্র, উন্নয়নের গণতন্ত্র, মৌলিক গণতন্ত্র ইত্যাদি বাহারি নামকরুন হতে থাকে অন্যদিকে তেমনি আবার 'এমবিডেড ' 'মোটিভেটেড' 'ফ্যাব্রিকেটেড' সাংবাদিকতার গোঁড়াপত্তন হতে থাকে।


বিশেষ করে উন্নয়নগামী ও উন্নয়নশীল বা অনুন্নত বলে কথিত এক একটি দেশের গোটা সমাজ ব্যবস্থা ও সমাজ কাঠামোর উপর নেমে আসে দুর্বৃত্তায়নের খড়গ।অর্থ-গৃধ্নুতা, সমাজে সীমাহীন লোভ-লালসা সৃষ্টি, যাবতীয় স্থূলতা ও নগ্নতার প্রসার ঘটানো, আত্মকেন্দ্রীকতা এবং নিজের ও গোষ্ঠী স্বার্থ চরিতার্থের জন্য সকল প্রকার মিথ্যা, ভণ্ডামি, প্রতারণা ও নৃশংসতাকে জায়েজ করে তোলা, প্রযুক্তি ও আধুনিকতার নামে সকল প্রকার স্থূল বুদ্ধি ও আয়োজনকে প্রশ্রয় প্রদান, গরিবকে আরও গরিবে পরিণত করা, ক্রোনি পুঁজিপতিদের সকল প্রকার মদদ দান, সমাজে ব্যাপক আয় বৈষম্য সৃষ্টি করে লুম্পেন বুর্জোয়াদের তোষণ, ধর্মের নামে ভণ্ডামি আর রাজনীতির নামে মেকিয়াভেলিয়ান চিন্তা-ভাবনার নিকট আত্মসমর্পণ তথা দাসত্ববরণ, অর্থনীতিতে লুণ্ঠনবৃত্তির পরিচর্যা করা, শিক্ষার নামে ব্যবসা ও বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটানো, স্বাস্থ্যের নামে কিছু লোকের বিপুল অর্থ লুন্ঠনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া-- এই তো হচ্ছে ঐ সকল দেশে অনুসৃত 'নয়া বিশ্ব ব্যবস্থার' সাল-তামামীর চিত্র!
করোনা ভাইরাসের দোর্দন্ড প্রতাপে গোটা বিশ্ব যখন লন্ড-ভন্ড হবার জোগাড়, তখন আবার বিভিন্ন দেশে মানবরূপী হায়নাদের দৌরাত্ত্বও চলছে দেদার ! এই মানব-বিধ্বংসী ভাইরাসকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিগ বিজনেসের প্রতিভূরা ইতোমধ্যেই ৫০০ বিলিয়ন ডলারের মুনাফা লুটে নিয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। আর সামনের দিনগুলিতে এই পরিমান যে বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে তাতো বলাই বাহুল্য ! এই ভাইরাস বুঝিবা লুটেরা পুঁজির জন্য পোয়া বারো হয়ে দেখা দিয়েছে! বিশ্বব্যাপী মানুষ যখন অসহায় ও নিরুপায় হয়ে মৃত্যুভয়ে গৃহবন্দী তখন ঐ দানবেরা হরিলুটে মেতে উঠেছে |


করোনার এই ভয়াবহতা গোটা মানুষ জাতিকে নতুন পথের দিশা দেবে এমনটা অনেক বিশিষ্টজন মনে করলেও মুনাফা লুটেরারা এর থোড়াই পরোয়া করে! ধনবানকে আরো ধনবান বানাবার জন্য পুঁজিবাদ যে নয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সূচনা ঘটিয়েছিল বছর তিরিশেক আগে তা আজ প্রকান্ড এক বিষ বৃক্ষে পরিণত হয়ে গোটা মানবজাতিকে গ্রাস করতে উদ্যত ! রিগানোমিক্সের হাত ধরে খোদ যুক্তরাষ্ট্রে ধনী ও গরীবের মাঝে যে সীমাহীন বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে তা কল্পনাতীতই বটে!


এতো গেলো অর্থনৈতিক দিক, সামাজিক ক্ষেত্রেও এই ভাইরাস মানুষের মনের কোন মৌলিক পরিবর্তন ঘটাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে এমন ভরসাও আজ মিছে! কেননা, বিস্মৃতিপ্রবণ মানবজাতির ক্ষেত্রে তেমনটা আশা করাও যে বাহুল্য! তাই দেশে দেশে মানুষ সমস্ত নিষেধাজ্ঞার অর্গল ভেঙে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে জীবন ও জীবিকার 'প্রয়োজনে', কিন্ত জীবিকা অর্জনের এই প্রয়াস যে তার জন্য মৃত্যুফাঁদ রূপে দেখা দিতে পারে সে খেয়াল নেই কারও।অবিশ্যি, এ জন্য খেটেঁ খাওয়া সাধারণ বা মেহনতি মানুষকে দুষে লাভ নেই, কেননা তার বাঁচার কোন পথতো রাখেনি আজকের এই কর্পোরেট পুঁজির মালিক-মোখতারেরা ! সুতরাং, মৃত্যু ভয়কে তুচ্ছ জ্ঞান করে তারা বেরিয়ে পড়ছে রাস্তায়।এ দৃশ্য শুধু যে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রেই সত্য তা কিন্ত নয়, পুঁজিবাদের পীঠস্থান খোদ আমেরিকাসহ অনেক উন্নত দেশেও এই একই দৃশ্য দেখতে পাওয়া যাচ্ছে নয় কি ? আর এর কারণ এই যে, রিগানোমিক্স আর থ্যাচারিজমের নিষ্টুরতায় বিশ্বের নব্বুই শতাংশ মানুষই আজ বিপন্ন ! এই সত্যপলব্ধি জগৎবাসীকে করোনা উত্তরকালে এই নিষ্টুর ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার শক্তি-সাহস ও প্রেরণা যোগাবে এমনটা অনেকে আশা করছেন বটে, কিন্ত মানুষের ইতিহাসের দিকে দৃকপাত করলে সে সম্ভাবনারো গুড়ে বালি পড়ার আশংকাই প্রকট হয়ে ওঠে বৈকি!


কথাটা এই যে, বিশ্বের সিংহভাগ সম্পদ আজ যে গুটিকয় ধনবানের হাতের মুঠোয় বন্দী তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার চেতনা, অবস্থা, পরিস্থিতি ও সামর্থ্য মেহনতি মানুষের আছে কি? একসময় কার্ল মার্ক্স্ দ্বন্দ্বাত্মক বস্তুবাদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশ্বে শ্রমিক রাজ্ প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তা আজকের দিনের শ্রমিক শ্রেণীর চেতনায় আদৌ বজায় আছে কি? নেই, আর সে কারণে বর্তমান সময়ের রমরমা পুঁজিবাদের উচ্ছেদ সাধনের নিমিত্ত কোন বিপ্লব-বিদ্রোহ অসম্ভব-প্রায়! কল্যাণরাষ্ট্র বা ওয়েলফেয়ার স্টেট কনসেপ্ট পশ্চিম ইউরোপের কিছু কিছু এবং অন্যত্র কোন কোন দেশের মানুষের জন্য অনেক মুশকিল আসান করে দিয়েছে।অনুরূপ ব্যবস্থা যদি বিশ্বের সর্বত্র গড়ে তোলা যায় তাহলে হয়তো মানবজাতি একটি রক্ষাকবচ পেতে পারে।এই করোনা তেমন সম্ভাবনাকে উস্কে দিলেও বর্তমান যুগের মানুষের সামগ্রিক চৈতন্য তা ধারণের সামর্থ্য রাখে কিনা সেটি দেখার বিষয় এখন।করোনার দাপটে মানুষের ত্রাহি অবস্থা এ কথা সত্য কিন্ত তার চেয়ে বড় সত্য এই যে, পুঁজিবাদ পৃথিবীতে একটি নয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার নামে ইতোমধ্যে বিশ্বময় যে 'মানুষ মারার কল' বসিয়েছে তা এর চাইতেও বহু বহু গুনে ধ্বংসাত্মক, ভয়াবহতো বটেই!


পরিশেষে বলতে চাই, ডনাল্ড ট্রাম্প বর্ণবাদী চিন্তার পিদিমে ঘৃত ঢেলে যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্টত:ই দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেছেন।আর একে পুঁজি করেই আসন্ন নির্বাচনী বৈতরণী পার হবার দুঃস্বপ্ন দেখছেন তিনি! গেলোবার সকলকে বোকা বানিয়ে তিনি জিতেছিলেন, কিন্ত এবার বোধকরি বিধি তার বাম আর সেই কথাটিই বুঝিবা জানান দিচ্ছে গোটা মার্কিন মুল্লুকে ছড়িয়ে পড়া বর্ণবাদ বিরোধী প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ-বিক্ষোভের অশান্ত ঢেউ।


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com