আমরা সচরাচর যানবাহনের পেছনে “দূরত্ব বজায় রাখুন” বাক্যটি দেখে থাকি। আবার কখনো কখনো তাচ্ছিল্যের সুরে অন্যকেও বলে থাকি “দূরে থাক”। অথচ সময়ের পরিক্রমায় আজ এই দূরত্ব কিংবা দূরে থাকা শব্দটিও এতটা আপন হয়ে উঠছে আমাদের মাঝে যা কল্পনাতীত। মানুষ নামক বাহনটিও আজ অন্য মানুষকে দূরে রাখতে কিংবা দূরে থাকতে বলছে। আমরা কি কখনো ভুলেও ভাবতে পেরেছি এই শব্দটির ব্যবহারে বা প্রয়োগেই সুস্থ বা বেঁচে থাকতে পারে পৃথিবীর প্রাণ। প্রাণ বলছি এ কারণে যে, আজ শুধু মানুষ নয় চিড়িয়াখানার বাঘটিও করোনায় আক্রান্ত।
ভালোবাসা, ভালো লাগা কিংবা পছন্দ করা, এরকম অসংখ্য ইতিবাচক শব্দের মত ‘দূরত্বও’ আজ আমাদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। দূরত্ব শব্দটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য আজ মানবজাতি উপলব্ধি করতে পেরেছে। দূরত্ব শুধু দূরেই ঠেলে দেয় না, কাছেও টানে। সারা বিশ্বের সর্বাধিক আলোচিত স্লোগান আজ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। যে বা যারা এই নিয়মটি মানছেন, তারাই আজ কত কাছের কত আপন কত সামাজিক!
আবার একটু ভিন্ন ভাবেও দূরত্বকে ব্যাখ্যা করা যায়। যে পরিবারে করোনা আক্রান্ত রোগী রয়েছে, দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে আমরা তার কাছেও যেতে পারছি না। যে ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে, দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে আমরা তার শেষকৃত্যও যথাযথভাবে করতে পারছিনা। পারছিনা বাবা-মা হয়ে সন্তানের কাছে যেতে, পারছি না সন্তান হয়ে বাবা- মায়ের কাছে যেতে। কি নিষ্ঠুর এই দূরত্ব! বিশ্ব আজ এই দূরত্বের শৃঙ্খলে আটকে পড়ে আছে। ইকুয়েডরে লাশ পচে গলে ঘরে পড়ে আছে, রাস্তায়/ ফুটপাতে পড়ে আছে, অথচ মানুষ হয়েও আমরা আজ দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে লাশগুলোকে নিরুপায়ের মত ফেলে রাখছি।
হায়রে মানবতা! মানব জাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে মানবতা শব্দটিও যেন আজ হুমকির মুখে। আমরা বাঙালি, আবেগপ্রবণ জাতি। সারা বিশ্বের এত মানুষের প্রাণহানি আমাদের ব্যথিত করেছে, আমরা কাঁদছি, আমরা আতঙ্কিত, আমরা ভীত-সন্ত্রস্ত। এ নির্মম পরিস্থিতির শিকার যেন আমরা না হই। এমন চরম দুর্দশা মেনে নেয়া আমাদের জন্য খুব দুঃসাধ্য। মানবতার জয়গানেই আমরা দীক্ষিত। আমরা মিশুক এবং বন্ধুপ্রিয়। তাইতো এই দূরত্বকে মেনে নিতে আমাদের এত কষ্ট! তবে আমরা পারব কারণ আমরা বীরের জাতি।
ড. সিদ্ধার্থ দে
সহযোগী অধ্যাপক
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
বিবার্তা/জহির
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]